সিঙ্গাপুরের রেস্তোরাঁর মালিক উইলিয়াম আশা করেন খাবারের মাধ্যমে দু’দেশের মানুষের সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ ও মজবুত হবে
2023-04-04 10:17:26

বিদেশে থাকা সন্তানদের ভাল খাওয়াদাওয়া সব মা চান। ১২ বছর আগে, সিঙ্গাপুরের উইলিয়াম এই পরামর্শটি মাথায় নিয়ে বেইজিংয়ে আসেন এবং একটি ঐতিহ্যবাহী সিঙ্গাপুরের রেস্তোরাঁ খোলেন। গত ১২ বছরে তিনি চীনে কী পরিবর্তন দেখেছেন? দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার নতুন কি কি বিষয় দেখেছেন? আজ, আমরা উইলিয়ামের কাছে গিয়েছিলাম। চীনে একটি রেস্তোরাঁ খোলার বিষয়ে তার গল্প শুনব।

বসন্তের বেইজিং কিছুটা ঠান্ডা, কিন্তু উইলিয়ামের সিঙ্গাপুর রেস্তোরাঁয়, সেখানে মানুষ আসছে ও যাচ্ছে, প্রাণবন্ত পরিবেশ। এটি বেইজিংয়ের প্রাচীন রেস্তোরাঁগুলির মধ্যে একটি। এখানে সিঙ্গাপুরের খাবার পাওয়া যায়। বছরের পর বছর যত্নশীল ব্যবস্থাপনার পরে, এটি বেইজিংয়ের স্থানীয়রা এবং চীনের সিঙ্গাপুরের বন্ধুদের মধ্যে অনেক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

 

উইলিয়াম বলেছেন: "আমরা একটি অপেক্ষাকৃত ছোট রেস্তোরাঁ, কিন্তু এখনও অনেক চাইনিজ বন্ধু আছে যারা আমাদের স্ন্যাকগুলো পছন্দ করে। কারণ আমাদের রেস্তোরাঁ সবসময় ঐতিহ্যবাহী সিঙ্গাপুরের খাবারগুলি দেয়। যা অনেক বিদেশি শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করেছে। কিছু সিঙ্গাপুরবাসী আমাদের আশেপাশে কাজ করে এবং এখানে বসবাস করে। তারাও এই রেস্তোরাঁয় আসে। আমরা কিছু ঐতিহ্যবাহী সিঙ্গাপুরের খাবারের উপর ফোকাস করি, যা আরও খাঁটি এবং এটি আমাদের বৈশিষ্ট্য।”

উইলিয়াম বলেন, ছোটবেলা থেকেই তার স্বপ্ন ছিল একটি রেস্তোরাঁ খোলা। অবশেষে তিনি তার নির্ভরযোগ্য চীনা অংশীদারদের এবং বেইজিংয়ের শক্তিশালী ভোগশক্তির জন্য চীনের বেইজিং-এ একটি রেস্তোরাঁ খুলতে সক্ষম হন। উইলিয়েম বলেন,
‘আমরা দেখেছি যে, বেইজিং খুব ভাল বাজার। ১০ বছর আগে, বেইজিংয়ে খুব, খুব কম খাঁটি সিঙ্গাপুরের খাবার ছিল। আমার অংশীদার চীনের উত্তরাঞ্চল থেকে এসেছেন এবং তিনি এখানকার বাজার এবং মানুষের পছন্দের বিষয়গুলো জানেন। আমরা ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা করি। তাই আমরা এই রেস্টুরেন্টটি ভালভাবে ব্যবস্থাপনা করতে পারছি।’

 

উইলিয়ামের জন্য, বেইজিংয়ে বসবাসের প্রতিটি দিন পুরষ্কার এবং আশায় পূর্ণ। তিনি গত ১০ বছরে চীনের ক্যাটারিং শিল্পের দ্রুত বিকাশ গভীরভাবে অনুভব করেছেন। জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের কারণে, লোকেরা আরও বেশি করে রেস্তোরাঁগুলিতে খেতে চায়। এখন টেক-ওয়ের দ্রুত বিকাশ জনসাধারণকে আরও সুবিধা দিয়েছে। খাবার খাওয়া জীবন উপভোগ করার একটি উপায় হয়ে উঠেছে।

 

উইলিয়াম বলেন, ‘আমি যখন প্রথম বেইজিংয়ে আসি, তখন আমি অনুভব করি যে, এখানকার অনেক শপিং মলে ক্যাটারিংয়ের অনুপাত তুলনামূলকভাবে কম, ৫ শতাংশেরও কম। কিন্তু এখন কিছু শপিং মলে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ। খাদ্য সরবরাহ শিল্প বিকাশের কারণে, আমাদের কাছে আরও ভাল সুযোগ এসেছে। আপনি ২০ মিনিটের মধ্যে একটি অর্ডার করা খাবার হাতে পেতে পারেন। আপনি সহজেই আপনার পছন্দের অনেক কিছু খেতে পারেন।"

 

ক্যাটারিং ছাড়াও বিভিন্ন স্বাদের কফির স্বাদ গ্রহণ- উইলিয়ামের অন্যতম শখ। একজন কফিপ্রেমী হিসাবে, উইলিয়াম লক্ষ্য করেন যে, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে চীনা শহরগুলিতে ক্যাফের রকম ও সংখ্যা বাড়ছে। তার দৃষ্টিতে, এটি চীনের সমৃদ্ধ অর্থনীতি এবং বিশ্বে চীনের ক্রমবর্ধমান একীকরণের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত।

 

উইলিয়াম বলেন, ‘আমি যখন প্রথম আসি, তখন অনেক কফিশপ ছিল চেইন ব্র্যান্ড এবং তুলনামূলকভাবে স্বতন্ত্র কফিশপ ছিল কম। চীনে দশ বছরেরও বেশি সময় পর, আমি দেখছি যে, আরও বেশি সংখ্যক মানুষ কফি পছন্দ করে এবং হুথং-এ বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের ছোট কফিশপ খুঁজে পাওয়া সহজ। কফি শিল্পের দ্রুত বিকাশ এবং কফির বৈচিত্র্যময় সমৃদ্ধি আছে যা সবার পছন্দ। আপনি দেখতে পান যে, চীনের অর্থনীতি কত দ্রুত বিকশিত হচ্ছে এবং এটি চীনের উন্মুক্তকরণ এবং সহনশীলতা প্রতিফলিত করে।’

 

সিঙ্গাপুর চীনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী অংশীদার এবং দীর্ঘকাল ধরে চীনের সংস্কার, উন্মুক্তকরণ ও উন্নয়ন প্রক্রিয়ার সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। চীনে দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে চীন-সিঙ্গাপুর চেম্বার অফ কমার্সের স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে, উইলিয়াম ব্যক্তিগতভাবে দুই দেশের মধ্যে গভীর এবং দৃঢ় আর্থ-বাণিজ্যিক সহযোগিতা অনুভব করেছিলেন।

 

উইলিয়াম বলেন, ‘১৯৯০-এর দশকে, সিঙ্গাপুর ও চীন যৌথভাবে সুচৌ শিল্পপার্ক প্রতিষ্ঠা করে এবং তারপরে থিয়েনচিনের ইকো-সিটি নির্মাণকাজ শুরু করে। ২০১৫ সালে চীন-সিঙ্গাপুর ছংছিং কৌশলগত আন্তঃসংযোগ প্রকল্প শুরু হয়, যা ‘এক অঞ্চল, এক পথ', নতুন স্থল-সমুদ্র করিডোরের মূল প্রকল্পগুলো বিশেষ সাফল্য অর্জন করেছে। যেমন আন্তঃসীমান্ত ই-কমার্স এবং চিকিৎসা প্রযুক্তি। এই প্রকল্পটি প্রত্যেককে উন্নয়নের ফলাফল শেয়ার করা, একে অপরের পরিপূরক। "

ভবিষ্যতের বিষয়ে তিনি আশা করেন, দুই দেশের সহযোগিতা আরও গভীর হবে এবং সিঙ্গাপুর ও চীনা জনগণের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময়ে তা অবদান রাখতে পারবে।

তিনি বলেন, "আমাদের (সিঙ্গাপুর) পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন যে, সিঙ্গাপুর ও চীনের মধ্যে সহযোগিতা শুধু অর্থনীতি, বাণিজ্য ও প্রযুক্তি খাতেই নয়, বরং সংস্কৃতি ও দুই দেশকে সংযুক্ত করে এমন সব বিষয়েও। আমার জন্য খাদ্য দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করার মাধ্যম। আমি আশা করি, ভালো কাজ করব, সিঙ্গাপুরের ঐতিহ্যবাহী খাদ্য সংস্কৃতি প্রচার করব এবং দুই দেশের জনগণের মধ্যে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ ও মজবুত করব।”