এপ্রিল ৩: সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং একাধিক আন্তর্জাতিক মঞ্চে, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, জীববৈচিত্র্য রক্ষা, ও সবুজ উন্নয়নকে এগিয়ে নেওয়ার চীনা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন; চীনা প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন। এতে সবুজ উন্নয়ন এবং দূষণমুক্ত ও সুন্দর বিশ্ব গড়ে তোলার ব্যাপারে চীনের দৃঢ়প্রতিজ্ঞা ফুটে উঠেছে, যা আন্তর্জাতিক সমাজে ভূয়সী প্রশংসাও কুড়িয়েছে।
২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ঘোষণা করেন, ২০৩০ সালের মধ্যে ‘কার্বন শিখর’ এবং ২০৬০ সালের মধ্যে ‘কার্বন নিরপেক্ষতা’ অর্জনের চেষ্টা করবে চীন। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার মহাসচিব পেট্টেরি টালাস একে ‘একটি মহান লক্ষ্য’ আখ্যায়িত করে বলেন, চীন ইতোমধ্যেই বৈশ্বিক পুনঃব্যবহারযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা রেখেছে। তিনি বলেন,
“চীন ২০৬০ সালের আগে ‘কার্বন নিরপেক্ষতা’ অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে, যা একটি খুবই ভালো খবর। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন বৈশ্বিক পুনঃব্যবহারযোগ্য জ্বালানি খাতে পুঁজি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। পাশাপাশি, চীন সৌরশক্তি খাতে ফটোভোলটাইক প্রযুক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানিকারক দেশ।”
নিম্ন-কার্বন উন্নয়ন বাস্তবায়নে চীন কেবল যে নিজের উদ্যোগ নিয়ে তা বাস্তবায়ন করছে, তা নয়; বরং যৌথ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সক্রিয়ভাবে আন্তর্জাতিক সমাজকে এগিয়ে নিয়ে আসছে। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে ‘জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন কাঠামো কনভেশন’-এ সাক্ষরকারীদের ২১তম সম্মেলনে ‘প্যারিস চুক্তি’ গৃহীত হয়। এ চুক্তিতে ২০২০ সালের পর বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। চীন কেবল যে ‘প্যারিস চুক্তির’ জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে, তা নয়; বরং এর পর এই চুক্তির বাস্তবায়ন এবং সংশ্লিষ্ট আলোচনায় মধ্যস্থতাকারীর দায়িত্বও পালন করেছে। ২০১৯ সালে ‘জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন কাঠামো কনভেশন’-এ স্বাক্ষরকারীদের ২৫তম সম্মেলনে সংস্থার তত্কালীন উপ-কার্যনিবার্হী সচিব সালমাদ চীনের ভূমিকা সম্পর্কে বলেন,
“প্যারিস চুক্তির আলোচনায় চীন সবসময় ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। এবারের জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনেও চীন একই ভূমিকা পালন করেছে। চীন সবসময় জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে।”
এবারের সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার মহাসচিব পেট্টেরি টালাস বলেন,
“আমি মনে করি, আমাদের উচিত চীন সরকারকে ধন্যবাদ জানানো। চীন ‘প্যারিস চুক্তি’-তে পৌঁছাতে যথাসাধ্য প্রচেষ্টা চালিয়েছে এবং সহায়তা দিয়েছে। চীনের সহায়তায় আলোচনার দরজা খোলা সম্ভব হয়েছে।”
চীন সক্রিয়ভাবে আন্তর্জাতিক সংস্থার কর্মকাণ্ডে অংশ নিচ্ছে ও নিজের অবদান রাখছে। ২০২৩ সালের মার্চে জাতিসংঘের সরকারি জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত বিশেষ কমিটি (আইপিসিসি) ষষ্ঠ পরীক্ষামূলক রিপোর্ট প্রকাশ করে। এই রিপোর্ট তৈরিতে চীনা সরকার ও বিজ্ঞানীদের অবদানের জন্য চীনকে ধন্যবাদ জানান এই কমিটির চেয়ারম্যান হোয়েসাং লি। তিনি বলেন,
“চীনা বিজ্ঞানীরা এই রিপোর্ট প্রণয়নে বিশাল অবদান রেখেছেন। জাতিসংঘের সরকারি জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত বিশেষ কমিটির কাজে অবদান রাখার জন্য চীন সরকারকে অত্যন্ত ধন্যবাদ জানাই।”
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার সদস্য চীন নিজের বাস্তবতার আলোকে উন্নয়নশীল দেশ ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোর পরিবেশ উন্নয়নেও সাহায্য দিয়ে আসছে। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার সহকারী সচিব চাং ওয়েন চিয়ান বলেন,
“চীন সাতটি আফ্রিকান দেশের প্রতিটির জন্য ২০ লাখ মার্কিন ডলারের সহযোগিতা প্রকল্প হাতে নেয়। এটি বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। এই সংস্থার সঙ্গে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ প্রস্তাবের আওতায় সহযোগিতামূলক দলিলপত্রে স্বাক্ষর করেছে চীন। বিগত ৩০ বছরে এই সংস্থার স্বল্পোন্নত দেশগুলোর কর্মীদেরকে চীনে সফর, লেখাপড়া, গবেষণা ও পরিদর্শন করার আমন্ত্রণও জানিয়েছেন চীন।”
বস্তুত, একটি দায়িত্বশীল বড় দেশ হিসেবে চীন নিজের সাধ্যমতো মানবজাতির অভিন্ন কল্যাণের সমাজ গড়ে তোলার কাজ করে যাচ্ছে ও ভবিষ্যতেও করে যাবে। (ওয়াং হাইমান/আলিম/ছাই)