দারিদ্র্যবিমোচন করছে কলা চাষে চীন-ফিলিপিন্স সহযোগিতা
2023-04-03 14:29:55

গ্রীষ্মপ্রধান দ্বীপদেশ ফিলিপিন্সে কলা শুধু স্থানীয় জনগণের পছন্দের ফলই নয়, বরং গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি পণ্য। দেশটির বৃহত্তম রপ্তানি বাজার চীনের সঙ্গে তার কৃষকদেরকে যুক্ত করেছে কলা। চীন-ফিলিপিন্স সহযোগিতার আওতায় জীবিকা নির্বাহ এবং দেশটির কৃষকদের দারিদ্র্যবিমোচন ও সমৃদ্ধ হবার প্রচেষ্টায় সহায়তা দিচ্ছে এই ফল।

 

দেশটির দক্ষিণাঞ্চলের মুসলিম অধ্যুষিত মিন্দানাও স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে অবস্থিত দাভাও সিটির আবহাওয়া উষ্ণ এবং বৃষ্টিপাত অনেক বেশি হয়। কলা, ডুরিয়ান ও আমসহ গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ফল চাষ স্থানীয় অর্থনৈতিক স্তম্ভগুলির অন্যতম। দাভাও শহর থেকে ৫০ কিলোমিটারের বেশি দূরে মারাম্বা গ্রামে ৬৬ বছর বয়সী কার্মেলো দাগিডো এবং তাঁর স্ত্রী রোডস প্রায় ১ হাজার কলা গাছ চাষ করেন। সেগুলি তাঁদের পরিবারের জীবিকার মাধ্যম।

গ্রামটির অনেক বাসিন্দার বাসা সহজ কাঠের ঘর। ভিতরে শালীন আসবাবপত্র বা বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি নেই। গ্রামে প্রবেশ করতে শুধু একটি ছোট পাথরের পৃষ্ঠহীন পথ আছে। বৃষ্টি পড়লে কর্দমাক্ত পথে হাঁটা কঠিন। আগে দাগিডো ছিলেন নিকটবর্তী থানার একজন নিরাপত্তারক্ষী। চীন-ফিলিপিন্স সহযোগিতার অধীনে দারিদ্র্যবিমোচন প্রকল্প থেকে লাভবান হয়ে তিনি কলা চাষ শুরু করেন।

 

চীন প্রকল্পটির উদ্যোক্তা এবং সমর্থন দেয়। দাভাও সরকার এবং তৃতীয় পক্ষের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সহযোগিতা করে। চীন ১শ’ দূরবর্তী অঞ্চলের কৃষি পরিবারের জন্য কলার চারা, সার এবং কীটনাশক ওষুধ ইত্যাদি সরবরাহ করে স্থানীয় সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে। কৃষি প্রযুক্তিবিদ পাঠিয়ে নির্দেশনা প্রদান করে সমবায় ব্যবসায়ীদের একীভূত অধিগ্রহণ করে। বিদ্যমান চ্যানেলের মাধ্যমে কলা প্রক্রিয়াকরণ পণ্য চীনা বাজারে রপ্তানি করে কৃষকদের দারিদ্র্যবিমোচন বাস্তবায়নে সহায়তা দেয়।

 

দাগিডো প্রথম দফা প্রকল্পে যোগ দেয়া কৃষি পরিবারগুলোর অন্যতম। চলিত বছরের অগাস্টে গত বছরে চাষ করা কলার প্রথম ফলন হবে।

 

সমবায় কর্মী  এরিয়েল গারউ বলেন, তারা বাজার মূল্য অনুযায়ী, কৃষি পরিবারের কলা অধিগ্রহণ করে, প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে কলার চিপস তৈরি করার পর চীনা বাজারে রপ্তানি করবে। প্রত্যেক গাছে ২০ কেজি কলার ফলন অনুযায়ী, কলা চাষ করা দাগিডোর পরিবারের জন্য ৩ হাজার ৬৪০ মার্কিন ডলারের আয় ডেকে আনবে। এটা  নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে তাঁর আয়ের দ্বিগুণেরও বেশি।

প্রতিদিন দাগিডো কলা বাগান দেখতে যান। যখন কোন সমস্যার সম্মুখীন হয়, তিনি অবিলম্বে কৃষি প্রযুক্তিবিদ জুয়ানা ফ্লোরেসের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। যিনি মারাম্বা গ্রামে ১৫টি কলা চাষিকে প্রযুক্তিগত নির্দেশনা দেন। ফ্লোরেস জানান, বর্তমানে তাঁর মোবাইল-ফোন “হট-লাইনে” পরিবর্তিত হয়েছে। যে কোন সময় তিনি কৃষকদের জিজ্ঞাসা কল পান।

 

ফ্লোরেস বলেন, মারাম্বা গ্রামের কলা বাগান ভালোভাবে বেড়ে উঠেছে। দ্বিতীয়ার্ধে একটি ভাল ফসল উপভোগ করা যাবে। সুস্পষ্ট আয় বৃদ্ধির প্রভাব দেখে আরও বেশি গ্রামবাসী কলা চাষ প্রকল্পে যোগ দেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।

 

তিনি আরও বলেন, কলা চাষ করা মারাম্বা গ্রামের জন্য পরিবর্তন ডেকে আনবে বলে আশা করা হচ্ছে। স্থানীয় সরকার পুনরায় গ্রামে পাহাড়ী পথ নির্মাণ সংক্রান্ত বাজেট অনুমোদন দিয়েছে। যা কলা পরিবহনের জন্য সুবিধাজনক হবে। তিনি বলেন, কলা তাদের জীবনযাপনকে পরিবর্তন করছে। (প্রেমা/এনাম)