যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষাখাতে বৈষম্য
2023-04-03 10:25:54

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে যুক্তরাষ্ট্রে মানবাধিকার পরিস্থিতির অব্যাহত অবনতি হয়েছে এবং জাতিগত সংখ্যালঘুদের প্রতি অন্যায় আচরণের নানা ধরনের ঘটনা ঘন ঘন দেখা গেছে। এই ধরনের অন্যায় শুধুমাত্র সমাজে প্রবেশ করার পরেই ঘটে না, তবে শিক্ষাগত বিষয়ে তা বার বার দেখা যায়। যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষাগত বৈষম্যের সমস্যা আরও গুরুতর হয়ে উঠেছে। আজকের অনুষ্ঠানে আমরা যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষাগত বৈষম্য সমস্যা  নিয়ে কথা বলব।

 

২০১৯ সালে, আমেরিকান উচ্চশিক্ষা খাতে একটি বড় কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটে। মার্কিন সন্তানদের নামীদামী বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানোর জন্য, ক্ষমতাশালী ও ধনী ব্যক্তিরা শিক্ষক এবং কর্মীদের ঘুষ দেয়, "বিশ্ববিদ্যালয় প্রবেশিকা পরীক্ষার" ফলাফলে হস্তক্ষেপ করে এবং "বিশেষ ক্রীড়া বিভাগের ছাত্র" হিসাবে তাদের জাল সার্টিফিকেট তৈরি করে। ব্ল্যাক-বক্স অপারেশন ওই সিরিজটি শুধু শিক্ষাগত ন্যায্যতার নীতিই ক্ষুণ্ণ করেনি, বরং যুক্তরাষ্ট্রের অনেক নামীদামী বিশ্ববিদ্যালয়কেও অসম্মানিত করেছে।

 

এ বছরের শুরুতে, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি জালিয়াতির মামলায় প্রধান অপরাধী সিঙ্গারকে সাড়ে তিন বছরের কারাদণ্ড দেয়। সিঙ্গার এই সিরিজের ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী। সাড়ে তিন বছরের সাজা মিডিয়ার পূর্বাভাসের চেয়েও অনেক কম।

 

দীর্ঘদিন ধরে, ধনী আমেরিকানদের কাছে বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় পাসের জন্য "ঘুষ" গ্রহণ করা তার জন্য সাধারণ বিষয় ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের "নিউ ইয়র্ক টাইমস" বলেছে যে, এই ভর্তি জালিয়াতির মামলায় যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি সামাজিক অভিজাত এবং সেলিব্রিটি জড়িত ছিল, যার মধ্যে ডাক্তার, আইনজীবী, কোম্পানির নির্বাহী এবং হলিউড অভিনেতারা রয়েছে। বেশিরভাগ দুর্নীতিগ্রস্ত ফ্যাকাল্টি সদস্যরা স্ট্যানফোর্ড, ইয়েল এবং অন্যান্য বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসেছেন। তবে মামলায় জড়িত ৫০ জনেরও বেশি লোকের মধ্যে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ তিন মাসেরও কম সময় জেলে ছিলেন। সিঙ্গার এবং অন্যদের আদালতের শাস্তিকে "আমেরিকান বিচার ব্যবস্থার উপহাস" বলা যেতে পারে।

 

ন্যাশনাল পাবলিক রেডিও (এনপিআর) এবং অন্যান্য মিডিয়া বিশ্বাস করে যে, এই জালিয়াতির ঘটনাটি যুক্তরাষ্ট্রের কলেজ ভর্তি পদ্ধতিতে খুব বেশি প্রভাব ফেলবে না।

এই সাধারণ পরিবেশে, যুক্তরাষ্ট্রে ধনী-দরিদ্র এলাকার মধ্যে স্কুল সম্পদের ব্যবধান আরও বাড়ছে। সেই সঙ্গে অবকাঠামো, শিক্ষক সম্পদ এবং এমনকি শিক্ষাদানের সরঞ্জামেও বিশাল ব্যবধান রয়েছে। জাতিগত সংখ্যালঘু ও অভিবাসী শিক্ষার্থীদের শিক্ষায় প্রবেশাধিকারে সমস্যা রয়েছে। এই শিক্ষার্থীরা প্রায়শই জাতিগত বৈষম্য এবং সাংস্কৃতিক বৈষম্যের সম্মুখীন হয়; যা তাদের একাডেমিক কর্মক্ষমতা এবং ভবিষ্যত উন্নয়নকে প্রভাবিত করে। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় শিক্ষা পরিসংখ্যান কেন্দ্রের উপাত্ত অনুসারে, আফ্রিকান-আমেরিকান এবং ল্যাটিনো শিক্ষার্থীদের জন্য স্নাতক ও কলেজে ভর্তির হার সাধারণত কম। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময় বিভিন্ন জাতির আবেদনকারীদের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের আচরণ করা হয়। যেমন ২০১৯ সালে এশিয়ান শিক্ষার্থীদের গড় এসএইটি স্কোর ছিল ১২২৩। শ্বেতাঙ্গ শিক্ষার্থীদের গড় স্কোরের চেয়ে তা ১৪০ পয়েন্ট বেশি।

 

আজ আমেরিকায়, শিক্ষার অধিকার এখন আর মৌলিক মানবাধিকার নয়; যা হওয়া উচিত। বাস্তবতা হল উচ্চ মানের শিক্ষাসম্পদ ধনী ও ক্ষমতাবানদের একচেটিয়া দখলে। অন্যদিকে দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত গোষ্ঠী শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত। এই ধরনের চরম বৈষম্যমূলক পরিস্থিতিতে, তরুণদের স্কুলে কঠোর পরিশ্রম করতে হয় এবং শিক্ষার মাধ্যমে জীবন পরিবর্তন করার আহ্বান জানানো শুধু মুখের কথা। আমেরিকায়, শিক্ষার মাধ্যমে ন্যায়পরায়ণতার কথা একটি দিবাস্বপ্ন ছাড়া আর কিছুই নয়।

(জিনিয়া/তৌহিদ)