মার্চ ৩১: বো’আও এশিয়া ফোরামের ২০২৩ সালের বার্ষিক সম্মেলন মঙ্গলবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত চীনের হাই নান প্রদেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। চলতি বছরের সম্মেলন সার্বিকভাবে অফলাইনে আয়োজনের পদ্ধতি পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। এতে ৫০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলের দুই সহস্রাধিক প্রতিনিধি এবং ১৭০টিরও বেশি গণ-মাধ্যমের ১১০০ জনেরও বেশি সাংবাদিক অংশ নিয়েছেন। বৃহস্পতিবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী বিদেশি অতিথিরা বলেন, বিশ্বের অনির্দিষ্টতা বেড়ে যাচ্ছে, বিভিন্ন দেশের উচিত ঐক্যবদ্ধ হয়ে এশিয়া এবং বিশ্বের সমৃদ্ধ উন্নয়নে অবদান রাখা।
চলতি বছরের সম্মেলনের প্রতিপাদ্য হল- ‘অনির্দিষ্ট বিশ্ব: ঐক্য ও সহযোগিতার মাধ্যমে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা, উন্মুক্ত ও সহনশীলতা দিয়ে উন্নয়ন জোরদার করা।’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিদেশি প্রতিনিধি অংশ নিয়েছেন। সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুং বলেন, এশিয়ার প্রধান অর্থনীতি হিসেবে, তিনি আশা করেন চীন বহুপক্ষবাদ ও আঞ্চলিক সহযোগিতায় অব্যাহতভাবে ভূমিকা রাখবে।
তিনি বলেন, এশিয়ার সুন্দর আকাঙ্ক্ষাগুলো পূরণ করা যায় কি না, তা নির্ভর করে এশিয়ার বিভিন্ন দেশ পরস্পর ও অংশীদারদের সঙ্গে স্থিতিশীল সম্পর্ক রাখতে পারবে কিনা, তার ওপর। এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ অর্থনীতি হিসেবে, চীন এক্ষেত্রে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। চীন টেসকইভাবে উন্মুক্তকরণ নীতি জোরদার করছে। একে স্বাগত জানাই, চীন অব্যাহতভাবে বহুপক্ষবাদ ও আঞ্চলিক সহযোগিতায় সমর্থন করে। আমরা আশা করি, বিভিন্ন পক্ষ আরো সক্রিয়ভাবে আঞ্চলিক, বৈশ্বিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিতে অবদান রাখবে। সারা বিশ্ব ও এশিয়াও এতে লাভবান হবে।
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম সম্মেলনে উল্লেখ করেন, প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ থাকলেও সহযোগিতা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, ব্যাপক অনির্দিষ্টতার মধ্যে বিভিন্ন দেশের উচিত ঐক্যবদ্ধ হওয়া এবং বিচ্ছিন্নতাবাদের বিরোধিতা করা। আর যৌথভাবে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগ নির্মাণে অংশগ্রহণকারী দেশ হিসেবে তিনি মনে করেন, এই উদ্যোগ বহুপক্ষীয় এবং দ্বিপক্ষীয় খাতে আরো বড় ভূমিকা পালন করছে।
তিনি বলেন, ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগের উন্নয়ন হল ঐক্য ও সহযোগিতা চেতনার প্রতিফলন। মহামারি ধীরে ধীরে শেষ হয়ে যাচ্ছে, আমাদের উচিত ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ সহযোগিতার প্রবণতা মজবুত করা। সবশেষে আমি আহ্বান করতে চাই, বিভিন্ন দেশ যৌথভাবে সহযোগিতা জোরদার করবে, অভিজ্ঞতা বিনিময় করবে এবং যৌথভাবে আরো শক্তিশালী এশিয়া গড়ে তুলবে।
স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ এদিন বলেন, সারা বিশ্বে অনির্দিষ্টতা বাড়ছে, বিভিন্ন দেশের উচিত সংলাপ, ঐক্য ও সহযোগিতা করা, যাতে পুনরায় আস্থা স্থাপন করা যায়। চীন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগ ও সম্পর্ক জোরদার করছে। তিনি এর প্রশংসা করে বলেন, এটা চীনের দায়িত্ববোধের বহিঃপ্রকাশ। তিনি বিশ্বাস করেন, চীন ও স্পেনের সহযোগিতার সুযোগ অনেক বেশি। অর্থনীতি বা অন্যান্য খাতে দুই দেশের উচিত অব্যাহতভাবে অংশীদার হওয়া। তিনটি খাতে দু’দেশ সহযোগিতা করতে পারে। একটি হল বহুপক্ষবাদ সমর্থন করা। ইউরোপ ও চীন উভয় বহুপক্ষীয় ব্যবস্থার মাধ্যমে বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সমর্থন করে। শুধু একটি দেশের শক্তিতে তা সম্ভব না। আরেকটি বিষয় হল জলবায়ুর পরিবর্তন, এ ছাড়া টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে দু’দেশ সহযোগিতা করতে পারে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টালিনা জর্জিভা বলেছেন, বাণিজ্যের একীকরণের কল্যাণে গত কয়েক ডজন বছরে এশিয়ার অর্থনীতির শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি সম্ভব হয়েছে। এর মধ্যে চীন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ভবিষ্যতে বিভিন্ন দেশ ঐক্যবদ্ধ হয়ে উভয় কল্যাণ বাস্তবায়ন করতে পারবে।
(শুয়েই/তৌহিদ/জিনিয়া)