যৌথভাবে ভবিষ্যত উন্মোচন
2023-03-31 20:20:42

চীনের হাইনান প্রদেশের বো আও শহরে ২০২৩ সালের বো’আও এশিয়া ফোরাম সফলভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সারা বিশ্বের রাজনীতি ও বাণিজ্যিক মহলের প্রতিনিধিরা যৌথভাবে শান্তি উন্নয়ন ও সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা করেছেন।

সারা বিশ্ব এই ফোরামের ওপর নজর রাখছে। একটি ছোট জেলে গ্রামের ২০ বছর পার হয়েছে। বো’আও এশিয়া ফোরাম ইতোমধ্যে বিশ্বে প্রভাবশালী উচ্চ পর্যায়ের সংলাপের মঞ্চে পরিণত হয়েছে।

সারা বিশ্ব বো’আও কণ্ঠ শুনতে চায়। করোনাভাইরাসের মহাপারির পর চলতি বছর প্রথমবারের মত অফলাইনে আয়োজিত ফোরামের বার্ষিক সম্মেলন এটি। ফোরামের প্রতিপাদ্য হল ‘অনির্দিষ্ট বিশ্ব, ঐক্য ও সহযোগিতার জন্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা, উন্মুক্ত ও সহনশীল মনোভাবে উন্নয়ন জোরদার করা’।

 

২০১৩ সাল থেকে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং টানা পাঁচবার ফোরামের বার্ষিক সম্মেলন বক্তৃতা দিয়েছেন, এতে একটি অভিন্ন বিষয় হল ‘ভবিষ্যত্’। নতুন সূচনালগ্নে সারা বিশ্ব আশা করছে যে, বো’আও প্রস্তাব বৈশ্বিক সহযোগিতায় নতুন শক্তি যোগাবে।

২০০১ সালে বো আও এশিয়া ফোরাম প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন এশিয়া মাত্রই আর্থিক সংকট থেকে বের হয়েছিল, অর্থনীতি কঠিনতার মধ্যেও ধীরে ধীরে পুনরুদ্ধার হচ্ছিল। এখন পর্যন্ত বিশ বছরেরও বেশি সময় পার হয়েছে, ফোরাম ছোট থেকে বড় হয়েছে, বো’আও ফোরামের কণ্ঠস্বর দুর্বল থেকে শক্তিশালী হচ্ছে। ফোরামটি মানবজাতির অভিন্ন ভাগ্যের কমিউনিটি গড়ে তোলাসহ বিভিন্ন খাতে মূল্যবান ‘বো’আও প্রস্তাব’ উত্থাপন করেছে।

 

বো’আও এশিয়া ফোরামের মহাসচিব লি পাও তুং বলেন, চলতি বছরের ফোরামে এশিয়া ও বিশ্বের উন্নয়ন সম্পর্কিত বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। বিশেষ করে- মহামারির পর বিশ্ব অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে বিভিন্ন দেশের মতৈক্যের ওপর নজর রাখা হয়েছে।

চলতি বছর ফোরামের চারটি প্রধান অংশ হল: উন্নয়ন, পরিচালনা ও নিরাপত্তা, আঞ্চলিক ও বিশ্ব উন্নয়ন এবং বর্তমান ও ভবিষ্যত্।

বো’আও এশিয়া ফোরামের নির্বাহী প্রধান বান কি মুন বলেন, অনির্দিষ্টতা হল, চলতি বছরের একটি ‘হট টপিক’। এমতাবস্থায় শুধু ঐক্য ও সহযোগিতার মাধ্যমেই উন্মুক্ত, সহনশীল ও টেকসই উন্নয়নের বিশ্ব গঠন করা যায়।

 

চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বো’আও ফোরামে চীনের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেন, বো’আও এশিয়া ফোরাম হল চীনের সঙ্গে সুযোগ শেয়ার করে যৌথভাবে সুন্দর ভবিষ্যত গঠন করার মঞ্চ। চীনের উন্মুক্তকরণের দরজা বন্ধ হবে না। বিশ্বের যে কোনো পরিবর্তনের সামনে, চীনের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের আস্থা এবং দৃঢ় সংকল্প পরিবর্তন হবে না।

২০২৩ সাল সার্বিকভাবে সিপিসি’র বিংশ জাতীয় কংগ্রেসের চেতনা বাস্তবায়নের প্রথম বছর। তাই এ বছরের বো’আও এশিয়া ফোরাম সারা বিশ্বের জন্য চীনকে জানার নতুন জানালায় পরিণত হয়েছে।

 

১৫ মার্চ, হাইনান এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাই খৌ শহর থেকে উড্ডয়ন করে সিঙ্গাপুর সময় সকাল ১১টায় দেশটির বিমানবন্দরে পৌঁছায়। এর মাধ্যমে হাই খৌ ও সিঙ্গাপুর যাতায়াতের ফ্লাইট আনুষ্ঠানিকভাবে পুনরায় চালু হয়।

এ ছাড়া, হাই খৌ থেকে ব্যাংককগামী ফ্লাইটও চালু হয়েছে। হাইনান প্রদেশ ৫৯টি দেশের জন্য বিনা ভিসায় যাতায়াত নীতি চালু করেছে। এই ধারাবাহিক ব্যবস্থা হাইনানের অবাধ বাণিজ্য বন্দর নির্মাণকাজে প্রাণশক্তি যুগিয়েছে এবং হাইনান ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বিনিময় ও সহযোগিতা আরো ঘনিষ্ঠ করে তুলেছে।

 

বর্তমান বিশ্বে সংরক্ষণবাদ ও একতরফাবাদ দেখা যাচ্ছে, এশিয়ার আঞ্চলিক অর্থনীতির একীকরণ প্রক্রিয়া দ্রুততর হওয়া সারা বিশ্ব অর্থনীতির সমৃদ্ধ উন্নয়নে সমর্থন দেবে।

বো’আও এশিয়া ফোরামের প্রকাশিত বার্ষিক রিপোর্ট ‘এশিয়ার অর্থনীতির ভবিষ্যত্ এবং একীকরণ প্রক্রিয়ায়’ উল্লেখ করা হয় যে, বিশ্ব অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে, ২০২৩ সালে এশিয়ার অর্থনীতির পুনরুদ্ধার দ্রুততর হচ্ছে, বৃদ্ধির হার ৪.৫ শতাংশ হবে।

২০২২ সালের পহেলা জানুয়ারি, ‘আঞ্চলিক সার্বিক অর্থনৈতিক অংশীদারি সম্পর্ক চুক্তি’ বা আরসিইপি আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়, বিশ্বের বৃহত্তম অবাধ বাণিজ্য এলাকা আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মোচিত হয়েছে।

 

‘এশিয়ার অর্থনীতির ভবিষ্যত্ ও একীকরণ প্রক্রিয়া’ রিপোর্টে বলা হয়েছে, বহুপক্ষীয় বাণিজ্যিক ব্যবস্থা সংকটে পড়ার প্রেক্ষাপটে, আরসিইপি ব্যাপকভাবে আঞ্চলিক বাণিজ্যের সুবিধা জোরদার করেছে।

দক্ষিণ এশিয়ার প্রসাধনী দ্রব্য, জাপানের ইলেক্ট্রনিক যন্ত্র, ভিয়েতনামের ডুরিয়ান ইত্যাদি নানা পণ্যের মাধ্যমে এক বছরে চীন অব্যাহতভাবে আরসিইপির আওতায় এশীয় দেশগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা করেছে। এর ফলে দু’পক্ষই লাভবান হয়েছে।

এ ছাড়া, ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগও এবারের ফোরামের একটি আলোচ্য বিষয়। চীন নিজের দারিদ্র্যমোচনসহ বিভিন্ন সফল অভিজ্ঞতা বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বিনিময় করতে চায়। চলতি বছর হল ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগ উত্থাপনের দশম বার্ষিকী। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এশিয়ার ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগ নির্মাণে অনেক অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। চীন ও লাওস রেলপথে পণ্য পরিবহন স্টেশন চালু হয়েছে, কম্বোডিয়া গোল্ডেন পোর্ট এক্সপ্রেসওয়ে চালু করেছে ইত্যাদি। এশিয়ার যোগাযোগ ব্যবস্থা আরো সুবিধাজনক হচ্ছে।

 

চীন বিশ্ব উন্নয়ন উদ্যোগ উত্থাপনের এক বছরে ইতোমধ্যে শতাধিক দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা এতে যোগ দিয়েছে, যা বিশ্ব উন্নয়নে নতুন শক্তি যুগিয়েছে।

নতুন যাত্রায়, চীন সক্রিয়ভাবে চীনের বৈশিষ্ট্যময় আধুনিকায়ন জোরদার করেছে, বিশ্বের সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তার জন্য শক্তি যুগিয়েছে।