মার্চ ৩০: বুধবার ও বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে ‘দ্বিতীয় গণতন্ত্র শীর্ষসম্মেলন’ আয়োজন করা হয়। এক বছর আগে এই সম্মেলনে ‘মার্কিন স্টাইলের গণতন্ত্রের’ শেষকৃত্যানুষ্ঠান হয়েছিল। এবার মার্কিন সরকার দেশ-বিদেশের বিরোধিতা উপেক্ষা করে নতুন দফা রাজনৈতিক পারফরমেন্স আয়োজন করেছে। সারা বিশ্ব এখন পরিবর্তন ও হাঙ্গামার মধ্যে আছে, তথাকথিত গণতন্ত্র শীর্ষসম্মেলন আসলে গণতন্ত্রের নামে জোটের রাজনীতি ও বৈরিতা সৃষ্টি করছে এবং নতুন হাঙ্গামা সৃষ্টি করছে। যা গণতন্ত্রের চেতনার পদদলন এবং বিশ্ব তা চায় না।
২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম গণতন্ত্র শীর্ষসম্মেলন আয়োজন করেছিল। তখন অনেক দেশ অভিযোগ করে যে, একটি অগণতান্ত্রিক দেশ- নিজেকে গণতন্ত্র শীর্ষসম্মেলনের নেতা মনে করে!
তবে এসব অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্র কানেই নেয় নি! অব্যাহতভাবে নিজেকে ‘গণতন্ত্রের নেতা’ মনে করে, তথাকথিত ‘গণতন্ত্র শীর্ষসম্মেলন’ আবারও আয়োজন করেছে। এবার যুক্তরাষ্ট্র কোস্টারিকা, নেদারল্যান্ডস, দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাম্বিয়াকে নিয়ে যৌথভাবে সম্মেলনটি আয়োজন করেছে। তবে এমন কৌশল কিন্তু ‘যুক্তরাষ্ট্র-কেন্দ্রীক’ চিন্তাধারা গোপন করতে পারে নি!
যুক্তরাষ্ট্রের কুইন্স ইনস্টিটিউটের অনলাইন ম্যাগাজিন ‘রেসপনসিবল স্টেইটক্র্যাফট’ (Responsible Statecraft) সম্প্রতি এক প্রবন্ধে বলেছে যে, যুক্তরাষ্ট্র সারা বিশ্বে দুটি বৈরিতার গ্রুপ সৃষ্টি করছে। জনৈক পাকিস্তানি পণ্ডিত বলেন, এবারের গণতন্ত্র শীর্ষসম্মেলন সারা বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ করে নি, বরং বিশ্বকে বিভক্ত করেছে। গণতন্ত্র শুধু যুক্তরাষ্ট্রের নিজেকে সেবা করার যন্ত্র; এ থেকে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্র নিজেকে যত সুন্দর করে উপস্থাপন করুক-না-কেন, সারা বিশ্ব তার আসল উদ্দেশ্য বুঝতে পারে। মানুষ বুঝেছে যে, তথাকথিত শীর্ষসম্মেলন আসলে মার্কিন মানদণ্ড দিয়ে ‘গণতন্ত্র ও অ-গণতন্ত্র’ গোষ্ঠীতে ভাগ করেছে। যা শুধু গণতন্ত্রের নামে মার্কিন আধিপত্যবাদী আচরণ।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রকাশিত সম্মেলনের আলোচ্য বিষয় আরো কপট। যেমন, যুক্তরাষ্ট্র বলেছে যে, সম্মেলনে ‘গণতন্ত্রকে উন্নত করার প্রযুক্তি’ নিয়ে আলোচনা করা যায়। তবে সারা বিশ্বের মানুষ জানে যে, যুক্তরাষ্ট্রই ‘হ্যাকার দেশ’। আবার, সম্মেলনে ‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হল গণতন্ত্রের ভিত্তি’ এই বিষয়ে আলোচনা করা হয়, তবে যুক্তরাষ্ট্র কিভাবে ব্যাখ্যা করবে যে, মার্কিন গণমাধ্যমে নর্ডস্ট্রিম পাইপলাইনের বিস্ফোরণে সবাই কেন চুপচাপ থাকে?
একটি দেশ গণতান্ত্রিক কিনা, তা দেশটির জনগণই ভালো বলতে পারে। এপি ও শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ-মতামত গবেষণা কেন্দ্রের গত বছরের অক্টোবরের গণজরিপ থেকে জানা যায়, মাত্র ৯ শতাংশ মার্কিন নাগরিক মনে করে দেশের গণতান্ত্রিক অবস্থা ভালো। আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক খাতের অধ্যাপক জেমস গোল্ডজিয়ার বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে নিজের প্রতিপত্তি হারিয়েছে। মার্কিন সরকারের উচিত দেশের ভেতর একটি গণতন্ত্র শীর্ষসম্মেলন আয়োজন করা এবং দেশের নড়বড়ে অবস্থার ওপর নজর রাখা।
যদিও যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র জনগণের সমর্থন পায় না, তবে বাইরে অন্য দেশের ওপর নিজের গণতান্ত্রিক অবস্থা চাপিয়ে দেয় দেশটি। বহু বছর ধরে মার্কিন স্টাইলের গণতন্ত্র বিশ্বকে শুধু হাঙ্গামা এবং মানবিক দুর্যোগ উপহার দিয়েছে। সারা বিশ্ব তার বিরোধিতা করেছে।
গণতন্ত্র হল গোটা মানবজাতির অভিন্ন মূল্যবোধ। যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের চেতনা নির্ধারণ করার অধিকার নেই। বর্তমান বিশ্ব শান্তিপূর্ণ নয়। ভৌগোলিক রাজনীতির ঝুঁকি ক্রমেই বাড়ছে। অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথ অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে। উন্নয়নের ব্যবধান বাড়ছে। প্রাকৃতিক পরিবেশ অবনতি হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী সংকট সমাধানে একটি ঐক্য ও সহযোগিতার সম্মেলন প্রয়োজন; বৈরিতা সৃষ্টিকারী ‘গণতন্ত্র শীর্ষসম্মেলন’ নয়। যুক্তরাষ্ট্র বার বার এ সম্মেলন আয়োজন করলেও তা ব্যর্থ হবে।
(শুয়েই/তৌহিদ/আকাশ)