‘উইথ ইউ’
2023-03-30 14:33:35

নাটকটি মহামারী প্রতিরোধের সময়, আশেপাশের সব স্তরের বাস্তব চরিত্র ও ঘটনার উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। এতে মোট দশটি স্বতন্ত্র গল্প আছে। এ দশটি গল্পের নাম যথাক্রমে: ‘জীবনের টার্নিং পয়েন্ট’, ‘ফেরিওয়ালা’, ‘সহকর্মী’, ‘উদ্ধারকারী’, ‘২৪ ঘণ্টার অনুসন্ধান’, ‘হুও শেনশান হাসপাতাল’, ‘মোবাইল কেবিন হাসপাতাল’, ‘আমার নাম তাই লিয়েন’, ‘মাস্ক’ ও ‘উহানবাসী’। এতে কোভিড-১৯ মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে চীনা সেনা এবং বেসামরিক ব্যক্তিদের মনোমুগ্ধকর কাহিনী তুলে ধরা হয়। তার মধ্যে রয়েছেন, চিকিৎসাকর্মী, যারা মানুষের জন্য সাদা প্রাচীর নির্মাণে কোন দ্বিধা করেন না; বিভিন্ন অঞ্চল থেকে উহান শহরকে সাহায্য করতে ছুটে আসা চিকিৎসা দলের সদস্য। আরো আছেন সাধারণ ডেলিভারিম্যান এবং সেচ্ছাসেবক, হুও শেন শান হাসপাতালের নির্মাণকাজে ঝাঁপিয়ে পড়া সাধারণ শ্রমিক ও নির্মাতা। বিভিন্ন মহলের চীনারা বিভিন্ন অসুবিধা কাটিয়ে উঠে মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মূল শক্তি গঠন করেছে এবং মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অনেক অবদান রেখেছে।

 

বর্তমানে মহামারীর চাপ ধীরে ধীরে কমছে, তবে মহামারীর সেই স্মৃতিগুলো আমাদের সবসময় মনে থাকবে।

চীনের অনেক বিখ্যাত পরিচালক ও চিত্রনাট্যকার এ টিভি নাটক নির্মাণে যোগ দিয়েছেন এবং বেশ কয়েকজন বিখ্যাত অভিনেতা অভিনেত্রীও এতে অভিনয় করেছেন।

টিভি নাটকের শুরুতে দর্শকদের মহামারি প্রথম দিকে নিয়ে আসা হয়।

নতুন বছরের শুরুতে সবাই নববর্ষকে স্বাগত জানানোর প্রস্তুতি নিয়েছিল। তবে চিয়াংহান হাসপাতাল যেন শত্রুর মুখোমুখি হচ্ছে। কারণ, সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন থেকে জরুরিভাবে বেশ কয়েকজন বিশেষ রোগীকে স্থানান্তরিত করা হয়, হাসপাতালে ভর্তি করার সময় তাদের শুধু জ্বর, ক্লান্তি ও শুকনো কাশির মতো হালকা লক্ষণ ছিল। তবে, চোখের পলকে তাদের জীবন হুমকির মধ্যে পড়ে।

 

খবর জানার পর চিয়াংহান হাসপাতালের পরিচালক চাং হান ছিং হাসপাতালে ছুটে আসেন এবং পরিস্থিতি মোকাবিলা করার নির্দেশনা দেন।

সেই সময় যদিও তিনি সংক্রমণের উত্স খুঁজে পাননি, তবে বহু বছরের অভিজ্ঞতা থেকে বুঝতে পারেন যে, এটি নিঃসন্দেহে গুরুতর সংক্রমণ। তারপর সামগ্রিক পরিস্থিতি সুশৃঙ্খলভাবে নিয়ন্ত্রণ করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালান তিনি। কিন্তু মহামারীর দ্রুত বিস্তার ঠেকাতে পারেন নি।

প্রত্যেকেই প্রচণ্ড আতঙ্কিত হয়ে পড়ে এবং সব চিকিত্সাকর্মী দাঁতে দাঁত চেপে কাজ করে। বিশেষ করে পরিচালক চাং হান ছিং।

 

তিনি নিজেও একজন রোগী, দীর্ঘদিন প্রগতিশীল তুষারজনিত রোগে ভুগছেন। এই রোগের কারণে তিনি দাঁড়াতে, হাঁটতে ও ঠিকমত সিঁড়ি বেয়ে উঠতে পারেন না।

কিন্তু তিনি মনের জোরে রোগীদের চিকিত্সা করেন। হাসপাতালে চব্বিশ ঘন্টাব্যাপী রোগীদের গ্রহণ করেন, চিকিত্সা-সেবা দেন এবং জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করেন।

যদি আমরা বলি, প্রথম গল্পটি চিকিৎসা কর্মীদের দৃষ্টিকোণ থেকে মহামারী প্রতিরোধের বিষয়গুলো রেকর্ড করা হয়, তাহলে দ্বিতীয় গল্পটি হলো- টেকওয়ে রাইডার এবং স্বেচ্ছাসেবক চালকদের দৃষ্টিকোণ থেকে। মহামারীর শুরুতে উহানবাসীরা একে অপরকে সমর্থন করে এবং একে অপরকে উষ্ণতা দেওয়ার প্রকৃত কাহিনী তুলে ধরেছে।

 

কু ইয়োং একজন ডেলিভারি রাইডার, কর্মক্ষেত্রে জীবনের চাপের সঙ্গে লড়াই করছেন। তিনি প্রথম দিকে ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষামূলক সরঞ্জামের ঘাটতি আবিষ্কার করেন এবং তাড়াহুড়ো করে সেগুলো সংগ্রহ করে অর্থ উপার্জন করার চেষ্টা করেন। মহামারী শুরু হলে তিনি উহানে থেকে যান। নিজেকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে তিনি হাসপাতালের কোনো অর্ডার গ্রহণ করতেন না। কিন্তু মহামারী যতই মারাত্মক আকার ধারণ করে, ততই হাসপাতালের অর্ডার বেড়ে যায়।

একবার ঔষুধ সরবরাহ করার জন্য একটি অর্ডার গ্রহণ করেছিলেন, অবশেষে তিনি মহামারীর প্রেক্ষাপটে হাসপাতালে জীবন এবং মৃত্যুর সাক্ষী হন এবং তার হৃদয়ে তা গভীরভাবে স্পর্শ করে।

 

উহান শহর লকডাউন হয়ে যাচ্ছে দেখে তিনি প্রথমবার দ্বিধায় পড়ে যান যে, চলে যাবেন নাকি এখানে থাকবেন। কিন্তু যখন তিনি সত্যিই উহান থেকে চলে যাওয়ার এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ি চালাচ্ছিলেন, তখন হঠাত্ করেই তিনি শহরে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। দিনের বেলায় তিনি রাস্তা ও গলিতে দিয়ে ডেলিভারি রাইডার হিসাবে কাজ করতেন এবং বাকি সময় তিনি চিকিৎসা কর্মীদের হাসপাতাল ও বাসায় যাতায়াতের কাজে স্বেচ্ছাসেবা দিতেন।

 

‘উইথ ইউ’ নামের টিভি নাটকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে মহামারীর সময় উহান শহরের নানা বিষয় তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়। মা ইউন, তিনিই চিয়াংহান হাসপাতালের পরিচালক চাং হান ছিংয়ের স্ত্রী। তিনিও একজন চিকিৎসা কর্মী। তার স্বামীর শরীরের অবস্থা জানার পাশাপাশি চিকিৎসা কর্মীদের কষ্ট ও অসুবিধা সবচেয়ে ভালো বুঝতেন তিনি।

 

তিনি তার স্বামীকে নিয়ে খুব চিন্তিত ছিলেন। কিন্তু তিনি তার কাজে ব্যাঘাত ঘটাতে চান না, তাই তিনি প্রতিদিন সেলফোনে শুভেচ্ছা পাঠাতে ভুলতেন না। তিনি সবসময় তার স্বামীকে ওষুধ খাওয়া এবং দ্রুত ঘুমাতে যাওয়ার কথা মনে করিয়ে দেন। তিনি স্পষ্ট জানেন যে, স্বামী কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে নিজের শরীরের প্রতি অবহেলা করতে পারেন। যা মহামারী সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেবে। ব্যস্ততার কারণে চাং হান ছিংয়ের সবসময় স্ত্রীর অনেক ম্যাসেজের জবাব দিতে দেরি হতো। তিনি সত্যিই ব্যস্ত থাকতেন, কিন্তু তিনি তার স্ত্রীর উদ্বেগ মিস করেন।

 

স্ত্রী’র সংক্রমিত হওয়ার খবর জানার পর তিনি তাকে দেখতে যেতে চেয়েছিলেন, কিন্তু স্ত্রী রাজি হন নি। শুধুমাত্র ঠাণ্ডা মাথায় কাজ চালিয়ে যাওয়া কথা বলে দিয়েছিলেন স্ত্রী। কারণ তিনি জানেন, তার চেয়ে চিয়াংহান হাসপাতালের রোগীদের তার স্বামীকে আরো বেশি প্রয়োজন।

 

এ টিভি নাটকের একটি বড় বৈশিষ্ট্য হলো বাস্তবতা। সাধারণ মানুষের হুমকির ভয় আছে। আবার সাহস, দায়িত্ববোধ ও ভালোবাসাও আছে। আসলে এ টিভি নাটক সত্যিকারের ঘটনা অবলম্বনে তৈরি হয়েছে। টিভি নাটকের চিয়াংহান হাসপাতাল হলো উহানের চিনইনথান সংক্রামক রোগের হাসপাতাল, এ হাসপাতালটি ছিলো উহানের প্রথম হাসপাতাল, সেখানে অজানা কারণে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের ভর্তি ও চিকিত্সা দেওয়া হতো। টিভি নাটকে হাসপাতালের পরিচালক চাং হান ছিং’র প্রোটোটাইপ হচ্ছে উহান চিনইনথান সংক্রামক রোগ হাসপাতালের পরিচালক চাং তিং ইউ।

মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সময় তিনি তার অসুস্থ শরীর নিয়ে সহকর্মীদের সঙ্গে মোট ২৮০০জনেরও বেশি রোগীর চিকিৎসা করেছিলেন, নিজের স্ত্রী দুর্ভাগ্যক্রমে সংক্রামিত হলেও তিনি তার যত্ন নেন নি।

এক কথায় বলা যায়, ‘উইথ ইউ’ টিভি নাটকে ক্যামেরার ভাষায় মহামারীর সময় সাধারণ চীনা মানুষের বাস্তবতা রেকর্ড করা হয়েছে।

লিলি/তৌহিদ