মায়ের মতো কোচ চাও সিয়াও পিং
2023-03-29 10:12:11


মা,  আমরা আপনাকে অনেক মিস করি। যখন চাও সিয়াও পিং স্কেটিং মাঠে আসেন, তখন ৭-৮টি শিশু তার কাছে এসে তাদের জীবনের গল্প শেয়ার করে। চীনের হেই লং চিয়াং প্রদেশের ছি থাই হ্য শহরের শিশু স্কেটিং কোচ হলেন  চাও সিয়াও পিং। এখানে সব শিক্ষার্থী তাকে মা বলে ডাকে। চৌত্রিশ বছর ধরে কেবল বাচ্চা জন্ম দেয়ার সময় ছাড়া চাও সিয়াং পিং কোচ হিসেবে কাজ করে আসছেন। এখনও তিনি খুব ভাল স্কেটিং করতে পারেন বলে সবাই তার বয়স ভুলে গেছে। এখানে তিনি শিশুদেরকে স্কেটিং শিখিয়ে দেন, মেয়েদের চুল বেঁধে দেন, তাদেরকে হেলমেট পরান এবং যারা বরফে পড়ে যায় তাদেরকে সান্ত্বনা দেন।

 

তিনি একজন কোচ এবং শিশুদের মা’র মতো। চাও বলেছেন, শিশুদের জন্য জ্ঞানার্জনের শিক্ষা খুব গুরুত্বপূর্ণ। তা ভবিষ্যতের ভিত্তি তৈরি করে। এ সময় স্কেটিংয়ের কৌশল ও জ্ঞান তাদের জানতে হবে এবং আরও গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল তাদের কষ্ট ও অসুবিধা কাটিয়ে উঠা এবং পরিত্যাগ না করার চেতনা শিখতে হবে।

 

১৯৬৮ সালে ছি থাই হ্য শহরের সাধারণ এক গ্রামীণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন চাও সিয়াও পিং। ছি থাই হ্য চীনের বিখ্যাত শীতকালীন অলিম্পিক  চ্যাম্পিয়নের শহর। এখান থেকে  আসা অনেক ক্রীড়াবিদ অলিম্পিক  চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। চাও সিয়াও পিংও ১৯৮৪ সালে স্কেটিং শুরু করেন। পরে দুর্ঘটনায় আহত হয়ে অবসর গ্রহণ করেন তিনি। তখন থেকে তিনি কোচ হিসেবে কাজ শুরু করেন। এ সময় তিনি হ্য লেই চিয়াং প্রাদেশিক দলের কোচ হবার সুযোগ পান। তবে, তিনি তা পরিত্যাগ করেন। তার মতে শিশুদেরকে মৌলিকভাবে শিখানো গুরুত্বপূর্ণ কাজ। তিনি এ কাজকে তার ভালবাসা হিসেবে গ্রহণ করেন।

 

চাও বলেছেন, শিশুরা স্কেটিং করতে পারে কিনা-তা বেশিরভাগ কোচের ওপর নির্ভর করে। ছি থাই হ্য শহরে কেন এত বেশি চ্যাম্পিয়ন হয়? তা এক ধরনের ক্রীড়া মনোভাবের উত্তরাধিকার। শিশুদেরকে শিখানো সহজ নয়। চাও সিয়াও পিংয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট ৪ বছর বয়সী এবং সবচেয়ে বড়জন মাত্র ৮ বছর বয়সী। তাদের বয়স এত কম যে তারা এমনকি বাম বা ডান দিক স্পষ্টভাবে জানতে পারে না। শিশুদের ভাল অবস্থা বজায় রাখার জন্য চাও তাদেরকে প্রতিদিন ডায়েরি রাখতে দেন। একবার একজন শিশু লিখেছে, “আজ আমি ভাল করিনি, তবে আগামীকাল আমি এক নম্বর হব।”

 

চাও ও শিশুদের মধ্যে গভীর বন্ধন তৈরি হয়েছে। তিনি এ কাজ ভালবাসেন এবং শিশুদেরকে আরও বেশি ভালবাসেন। গেল ৩৪ বছরে এ কাজ ও শিশুরা তার রক্তের সঙ্গে মিশে গেছে। তার জীবনের অবিচ্ছেদ্য এক অংশে পরিণত হয়েছে।

 

গর্ভাবস্থায় পা ফুলে যাওয়ার কারণে তিনি স্কেটিং মাঠে যেতে পারতেন না। তখন তিনি শিশুদেরকে বাসায় এনে শিখিয়েছেন। চাও-কে শিশুরা এগিয়ে যাবার শক্তি দিয়েছে।

এখন ছি থাই হ্য শহরের সব প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের ক্রীড়া ক্লাসে স্কেটিং অন্তর্ভুক্ত হয়েছে এবং শীতকালীন অলিম্পিক গেমসের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন দেখছে শিশুরা। চাওয়ের আছে চ্যাম্পিয়নের স্বপ্ন। তার শিক্ষার্থীরা জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় ৪০০টির বেশী পদক অর্জন করেছে এবং আন্তর্জাতিক গেমসে ১০০টির বেশি পদক পেয়েছে। তার শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৪জন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। প্রাদেশিক ও জাতীয় স্কেটিং দলে ২০০ জনের বেশি সদস্য চাওয়ের ছাত্রছাত্রী ছিলেন।

 

চাও বিশ্বাস করেন, তার শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভবিষ্যতে আরও অনেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ও অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন হতে পারবে। ক্রীড়াবিদ থেকে কোচ পর্যন্ত স্কেটিং মাঠে কয়েক দশক কাটিয়েছেন চাও এবং তিনি এখনও শিশুদের স্বপ্ন পূরণে কাজ করেন। তার মনে আশার শিখা কখনই নিভে যায় না।(শিশির/এনাম/রুবি)