বিশ্ববাসীকে ক্ষুধামুক্ত রাখতে অল্প অল্প করে ভূমিকা রাখছে চীনের অত্যাধুনিক কৃষি প্রযুক্তি। পেছনে পড়ে থাকা ছোট ছোট গ্রামগুলো মুক্তি পাচ্ছে দারিদ্রের শেকল থেকে। স্বল্প পরিসরের উদ্যোগগুলো দেখছে সফলতার মুখ, অনুসঙ্গ হচ্ছে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির।
আধুনিক প্রযুক্তি এগিয়ে নিচ্ছে টমেটো চাষ
বাংলাদেশিদের মতো চীনাদের কাছে টমেটো ভীষণ প্রিয়। চীন দেশে বেশ কয়েকটি খামারে এখন ডিজিটাল পদ্ধতিতে টমেটোর সঠিক গুণমান রক্ষা করে চাষ করা হচ্ছে দারুণ স্বাদের সব টমেটো।
চীনে বিভিন্ন সুস্বাদু খাবার তৈরিতে ব্যবহার করা হয় টমেটো । টমেটোর গুণগত মান ও স্বাদ যেন অক্ষুন্ন থাকে সেজন্য ডিজিটাল পদ্ধতিতে আজকাল টমেটো চাষ করা হচ্ছে চীনের বিভিন্ন প্রদেশে। এমনি একটি ডিজিটাল খামার রয়েছে শানতুং প্রদেশের তচৌ সিটিতে।
টমেটো উৎপাদন হয় গ্রিন হাউজে। টমেটোর স্বাদ নির্ভর করে মূলত চিনি ও অ্যাসিডের অনুপাতের উপর। আরও বিশেষভাবে বলতে গেলে এর গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলো হলো চিনি, জল, সার এবং সূর্যের আলো।
এই উপাদানগুলো নিয়ন্ত্রণ করার জন্য স্মার্ট খামারে রয়েছে বিশেষ প্রযুক্তি। এই বিশেষ প্রযুক্তিতে গ্রিন হাউজের ভিতরে যে উপাদান ঠিক যতটুকু দরকার ততোটুকুই দেয়া সম্ভব।
এর মাধ্যমে প্রতি বর্গ সেন্টিমিটারে যতটুকু সূর্যালোক ও পানি দরকার তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়।
ডিজিটাল টেকনোলজি ব্যবহারের মাধ্যমে এই খামার সাফল্যের সঙ্গে গ্রাহকের বিশেষ চাহিদা অনুযায়ী টমেটো সরবরাহ করছে। পাশাপাশি বেড়েছে টমেটোর উৎপাদনের পরিমাণও ।
তারা মূলত যে পদ্ধতি ব্যবহার করছে সেটা হলো গ্রিন হাউজের ভিতরে কার্বন ডাই অক্সাইডের ঘনত্ব নিয়ন্ত্রণ করা। গাছের উৎপাদন এর উপর নির্ভর করে। বাতাসের গতি, বাইরের বাতাসের সঙ্গে গ্রিন হাউজের ভিতরের বাতাসের মিশ্রণও স্কাইলাইটের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
উচ্চ-মানের কৃষিজমি তৈরি করছে চীন
বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষি ক্ষেত্রকে প্রতিনিয়ত সমৃদ্ধ করছে চীন। আর পর্যাপ্ত খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করছে নিজ দেশের নাগরিকদের জন্য।
দেশটির কৃষি ও গ্রামীণ বিষয়ক মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গেল বছর বড় পরিসরে এরকম উচ্চমানের কৃষি জমি তৈরি করা হয়েছে, যার পরিমাণ প্রায় সাত মিলিয়ন হেক্টর।
বছর চারেক আগে দেশটির কৃষি বিভাগ থেকে পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল ২০২২ সালের মধ্যে এক বিলিয়ন মু অর্থাৎ প্রায় ৬৬.৭ মিলিয়ন হেক্টর উচ্চ-মানের কৃষিজমি প্রস্তুত করা।
নতুন বছরে দেশটির লক্ষ্য ৪৫ মিলিয়ন মু বা প্রায় তিন মিলিয়ন হেক্টর নতুন উচ্চ-মানের কৃষিজমি তৈরি করা এবং একইসঙ্গে ৩৫ মিলিয়ন মু বা প্রায় ২.৩৩ মিলিয়ন হেক্টর উচ্চ-মানের কৃষিজমি আপগ্রেড করা।
চীনে উচ্চমানের কৃষি জমির আয়তন এখন দেশের মোট আবাদি জমির অর্ধেকেরও বেশি।
আর এভাবেই বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষি ক্ষেত্রকে প্রতিনিয়ত সমৃদ্ধ করছে চীন। আর পর্যাপ্ত খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করছে নিজ দেশের নাগরিকদের জন্য।
জীববৈচিত্র্য রক্ষায় কার্যকর উদ্যোগ নিয়েছে চীন
প্রকৃতি সুরক্ষায় সব সময়ই বিশেষ নজর দিয়ে থাকে চীন। জলাভূমি পুনরুদ্ধার ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য সম্প্রতি বেশ কিছু কার্যকর উদ্যোগ নিয়েছে উন্নয়নে উদীয়মান এই দেশ। এ কারণে প্রতি বছর শীতের সময়ে বিরল কিছু পাখির আগমন ঘটে দেশটির বিভিন্ন প্রদেশে।
১০ লাখেরও বেশি পাখির জন্য দারুন এক পরিবেশ তৈরী করে রেখেছে চীনের থিয়াওচিনি জলাভূমি।
দেশটির এই মনোরম জলাভূমিতে পরিযায়ী পাখিরা নিতে পারে বিশ্রাম। রয়েছে পুষ্টিকর খাবারের ভালো সুব্যবস্থাও। আর এভাবেই পূর্ব এশীয়-অস্ট্রেলাসিয়ান রুটের পাখিদের জন্য এই জলাভূমিটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান হিসেবে জায়গা পেয়েছে বিশ্বব্যাপী।
শুধু পরিযায়ী পাখি নয়, এটি আকর্ষণ করে বিশ্বের বিরল পাখিদেরও।
পূর্ব চীনের চিয়াংসু প্রদেশ এবং মধ্য চীনের হেনান প্রদেশ স্থানীয় জলাভূমি পুনরুদ্ধার এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য ব্যাপক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
মিলু হরিণ গবেষক সিয়ে শেংবিন বলেন, "আমরা বসন্ত উৎসবের আগেই মিলু হরিণদের পুষ্টি নিশ্চিত করতে চাই। এজন্যই আমরা সম্পূরক খাদ্য সরবরাহ করা শুরু করেছিলাম। একই সময়ে, জলাভূমিতে পরিদর্শন বাড়িয়েছি। গর্ভবতী মিলু হরিণদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তাদের বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণের দিকে আরও মনোযোগ দিয়েছি, যাতে তাদের বাচ্চাগুলোর ভেলিভারি সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়।"
এতসব উদ্যোগ নেয়ার পর মিলু হরিণদের বেঁচে থাকার হার প্রতি বছর বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাড়ছে গর্ভবতীর সংখ্যাও।
প্রকৃতির প্রতি বন্ধুতের হাত বাড়িয়ে এভাবেই পুরো বিশ্বের নজর কেড়েছে চীন।
এটি মূলত চায়না মিডিয়া গ্রুপ-সিএমজি বাংলার বাংলাদেশ ব্যুরোর কৃষি বিষয়ক সাপ্তাহিক রেডিও অনুষ্ঠান। যা সঞ্চালনা করছেন ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট এইচ আর এস অভি।
এ রেডিও অনুষ্ঠানটি আপনারা শুনতে পাবেন বাংলাদেশের রেডিও স্টেশন রেডিও টুডেতে।
শুনতে থাকুন শেকড়ের গল্পের নিত্য নতুন পর্ব । যেখানে খুঁজে পাবেন সফলতা আর সম্ভাবনার নানা দিক। আর এভাবেই চীনা কৃষির সঙ্গে শুরু হোক আপনার দিন বদলের গল্প।