গণতন্ত্রের শুধু একটি রূপ নেই বিভিন্ন রূপ আছে
2023-03-29 10:16:32

২০২১ সালে অনলাইনে যুক্তরাষ্ট্র একটি গণতন্ত্র শীর্ষসম্মেলন আয়োজন করেছিল। ২০টি দেশ এতে আমন্ত্রণ পেলেও তাতে অংশগ্রহণ প্রত্যাখ্যান করে। পাশাপাশি, অনলাইনে দর্শক হয়েছিল মাত্র শতাধিক! সে সম্মেলনে কোনো ঘোষণা বা অভিন্ন কার্যক্রমের কথা বলা হয়নি এবং আলোচ্য বিষয়ে বিশ্বের তথ্যমাধ্যমে কোনো প্রশংসাও চোখে পড়ে নি। বাইডেন প্রশাসনের এই প্রহসন তাড়াহুড়ো করে শেষ করা হয়।

 

এক বছরের কিছু বেশি সময় পর, যুক্তরাষ্ট্র আবারও গণতন্ত্রের শীর্ষসম্মেলন আয়োজন করতে যাচ্ছে। তাদের মতে, প্রথমবার ব্যর্থতার প্রধান কারণ হল যুক্তরাষ্ট্র এককভাবে সে অনুষ্ঠান আয়োজন করেছিল। যা কোনোভাবেই গণতান্ত্রিক নয়। তাই এবার তারা কোস্টারিকা, নেদারল্যান্ডস, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাম্বিয়াকে নিয়ে যৌথভাবে সম্মেলন আয়োজন করতে যাচ্ছে। বিভিন্ন মহাদেশ থেকে কয়েকজন ‘বন্ধু’ নিয়ে সম্মেলন আয়োজন করলে তা অবশ্যই গণতন্ত্রের প্রতিফলন হবে বলে মনে করছে মার্কিন প্রশাসন। তবে, বিষয়টি হল যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্রকে টুল ও অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে এবং ছোট গ্রুপ করে নিজের আধিপত্য রক্ষা করার চেষ্টা করে যাচ্ছে।

 

গণতন্ত্রের শীর্ষসম্মেলনে অবশ্যই গণতন্ত্রের কথা বলতে হয়। গণতন্ত্র শব্দটি প্রাচীন গ্রিক ভাষা থেকে এসেছে। যার অর্থ- সার্বভৌমত্ব জনগণের হাতে, জনগণের দ্বারা শাসন। এ শব্দটির ইতিহাস আড়াই হাজার বছরের প্রাচীন এবং তা মানবজাতির রাজনৈতিক সভ্যতা উন্নয়নের ফলাফল। পদ্ধতি ও বিষয়বস্তুর দিক থেকে গণতন্ত্রের যে কোন উন্নয়ন হল, মানবসভ্যতার অগ্রগতি এবং তা আমাদের অভিন্ন প্রত্যাশা। গণতন্ত্রের কোনো দোষ নেই, তবে যুক্তরাষ্ট্র ভুলভাবে গণতন্ত্রকে নিজের আধিপত্য রক্ষার উপকরণ হিসেবে মনে করছে। তাদের মতে গণতন্ত্র শুধুই যুক্তরাষ্ট্রের এবং শুধু তারাই গণতন্ত্রের পদ্ধতি ও বিষয়বস্তু নির্ধারণ করতে পারে। একটি দেশে কি গণতন্ত্র আছে? তা জনগণই বলতে পারে। শুরু থেকেই গণতন্ত্রের মূল উদ্দেশ্য হল- জনগণই হলো প্রভু। প্রতিটি দেশের নিজস্ব বাস্তব অবস্থা অনুযায়ী গণতন্ত্রের উন্নতি করা উচিত্। তবে এখন যুক্তরাষ্ট্র সবার পক্ষ থেকে নিজেই জোর করে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, তারা গণতন্ত্রকে নিজের মতো করে সংজ্ঞায়িত করে! এমন আচরণই তো অগণতান্ত্রিক!

 

পাশাপাশি, যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি ও সামাজিক জীবনে দেখা যায় নানা ধরনের অগণতান্ত্রিক সমস্যা। যেমন, যুক্তরাষ্ট্র নিজের মত প্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলে। আসলে এমন স্বাধীনতারও পূর্বশর্ত সেখানে রয়েছে। মার্কিন সরকার ও পুঁজির স্বার্থের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় এমন বক্তব্য সেখানে সীমাবদ্ধ। যেমন ২০২২ সালের ডিসেম্বরে টুইটারের সিইও ইলন মাস্ক এবং রিপোর্টার ম্যাট তাইবি টুইটারে জানান যে, মার্কিন সরকার সব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কঠোর সমালোচনা করেছে এবং কখনও কখনও সরাসরি মিডিয়ার কভারেজে হস্তক্ষেপ করে। সে বছরের সেপ্টেম্বরে, নর্ড স্ট্রিম প্রাকৃতিক গ্যাস পাইপলাইনের বিস্ফোরণ বিশ্বকে হতবাক করেছে। কে সেটা করেছে এবং কেন করেছে তা বিশ্ব জানতে চায়। ২০২৩ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি পুলিৎজার পুরস্কার বিজয়ী ও প্রবীণ অনুসন্ধানী প্রতিবেদক সেমুর মাইরন হার্শ মার্কিন সরকারকে ওই ‘বিস্ফোরণের পিছনের হাত’ বলে উল্লেখ করেন। তবে, এ খবরের বিষয়ে পাশ্চাত্য তথ্যমাধ্যম কিছুই বলেনি, যা খুবই আশ্চর্যজনক।

 

‘মার্কিন গর্বিত গণতন্ত্রও’ এখন অর্থের রাজনৈতিক হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে।  পরিসংখ্যান অনুযায়ী ৯১ শতাংশ মানুষ মার্কিন কংগ্রেস নির্বাচনে তাকেই নির্বাচন করে, যার অর্থের পরিমাণ বেশি। নির্বাচিত ‘জনগণের প্রতিনিধিরা’ সাধারণ মানুষ নয়, বরং- তার বিনিয়োগকারীদের পক্ষে কথা বলেন।

 

গণতন্ত্র হল আমাদের অভিন্ন মূল্যবোধ। তবে বিশ্বে নিখুঁত কোনো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নেই। সব দেশের জন্য উপযোগী- একক গণতান্ত্রিক ধারণা ও ব্যবস্থা নেই। যুক্তরাষ্ট্র বা চীন যাই হোক-না-কেন, নিজ দেশের বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতেই গণতন্ত্রের ব্যবস্থা করতে হবে। চীনে বলা হয়, শত ফুল ফুটতে দাও- যা ফুলের বৈচিত্র্য। গণতন্ত্রের বৈচিত্র্যের উপর নির্ভর করে মানবিক রাজনৈতিক সভ্যতার উন্নয়ন এগিয়ে যাবে। প্রতিটি দেশে গণতন্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা ও তার উন্নয়নে রয়েছে সেসব জাতির ঐতিহাসিক বৈশিষ্ট্য।

 

যদি আমরা গণতন্ত্রের কথা আলোচনা করি, তাহলে অন্যদেরকে নির্দেশ দেওয়া ও অভিযোগ করার বদলে, বাস্তবতা ও বস্তুনিষ্ঠ সত্য বিষয় নিয়ে মতবিনিময় করতে হবে।