‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ অনুষ্ঠানে স্বাগত জানাচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী। দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেওয়ার প্রধান হাতিয়ার তারুণ্য। তরুণরা চাইলেই পারে সমাজকে বদলে দিতে। এজন্য দরকার তাদের চিন্তা ও মেধার সমন্বয়। চীন ও বাংলাদেশের তরুণদের অফুরান সম্ভাবনার কথা তুলে ধরবো এই অনুষ্ঠানে। তরুণদের সৃজনশীলতার গল্পগাঁথা নিয়েই সাজানো হয়েছে আমাদের তারুণের অগ্রযাত্রা।
১. কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে চীনের বিভিন্ন স্থানে চাকরি মেলা অনুষ্ঠিত
চীনজুড়ে স্নাতকদের কর্মসংস্থান করে দিতে বসন্তকালীন চাকরি মেলার আয়োজন করছে চীনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। মেলাগুলোর ফলে চীনের এন্টারপ্রাইজ ও গণ প্রতিষ্ঠান গুলো যেমন খোঁজ পাচ্ছে তরুণ প্রতিভার, তেমনি সদ্য কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় পাশ করে বের হওয়া তরুণ শিক্ষার্থীরাও সহজেই খোঁজ পাচ্ছে একটি নিশ্চিন্ত জীবনের। যে চাকরির পেছনে ছুটতে হয় মানুষকে প্রতিনিয়ত, সে চাকরিই কিনা তাদের হাতের মুঠোয় ধরা দিচ্ছে।
সম্প্রতি চীনের চিয়াংসু প্রদেশের নানচিং ইউনিভার্সিটি অব অ্যারোনটিকস এন্ড অ্যাস্ট্রোনটিকস একটি চাকরি মেলার আয়োজন করেছে। মেলাটিতে স্নাতকদের জন্য মোট ১০ হাজার চাকরির ব্যবস্থা করেছে ৩০০ চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান।
একই সময়ে শহরের আরেক প্রান্তে বিখ্যাত চায়না ফার্মাসিউটিক্যাল ইউনিভার্সিটিও চাকরি মেলার আয়োজন করে। এই মেলায় ২০ হাজার চাকরি নিয়ে ৪০০ ফার্মাসিউটিক্যাল এন্টারপ্রাইজ ও গণ প্রতিষ্ঠান যোগদান করে।
এসব প্রতিষ্ঠানগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের মেজর সাবজেক্টগুলোর সাথে সামঞ্জস্য রেখে চাকরির শর্তাবলী যোগ করে। পাশাপাশি তরুণ প্রতিভাবানদের আকৃষ্ট করতে আকর্ষনীয় আবাসস্থল সুবিধাও অফার করছে অনেক প্রতিষ্ঠান।
চায়না ফার্মাসিউটিক্যাল ইউনিভার্সিটি ভর্তি এবং কর্মসংস্থান অফিসের পরিচালক লিউ ইয়ান লি বলেন নিয়োগ প্রচারপত্র স্নাতকদের সঠিক সময়ে সঠিক তথ্য পেতে সাহায্য করছে।
‘ নিয়োগ প্রচারপত্রে শহরভিত্তিক অগ্রাধিকারমূলক নীতি সম্পর্কে তথ্য থাকে। এই প্রচারপত্র গুলো সময়মতো স্নাতকদের চাকরি খোঁজার ক্ষেত্রে অনেক সাহায্য করে।’
এদিকে মধ্য চীনের হেনান প্রদেশে হেনান ইউনিভার্সিটি অব চাইনিজ মেডিসিন ২০টিরও বেশি চীনের প্রদেশ ও শহর থেকে চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান জোগার করে চাকরি মেলার আয়োজন করেছে। এই বসন্তে হেনান প্রদেশ ১ হাজার ৪ শ’ এর বেশি কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে, যা প্রায় ৭ লাখ ৪০ হাজার কাজের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে।
হেনান ইউনিভার্সিটি অব চাইনিজ মেডিসিনের ভর্তি ও কর্মসংস্থান অফিসের উপ-পরিচালক ওয়াং সিয়াও রুই বলেন তাদের অনলাইন এবং অফলাইন নিয়োগের লেকচারগুলো চলমান থাকবে।
‘এই মেলায় মোট ৪০০ চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান ১২ হাজার চাকরির সুযোগ দিচ্ছে। ৫ হাজার স্নাতক এসেছেন এই মেলায়। ভবিষ্যতে আমাদের অনলাইন এবং অফলাইন নিয়োগের লেকচারগুলোও অব্যাহত থাকবে।’
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলতি বছর চীনে ১ কোটি ১৫ লাখ শিক্ষার্থী স্নাতক শেষ করে কর্মক্ষেত্রে যোগ দেবেন বা নিজের ব্যবসা শুরু করবে্ন, এমনটিই প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
প্রতিবেদকঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন
২. কুয়াংচৌতে অনুষ্ঠিত হলো এশিয়া ইয়ুথ লিডারস ফোরাম
দক্ষিণ চীনের কুয়াংতং প্রদেশের রাজধানী কুয়াংচৌতে গেল সপ্তাহে এশিয়া ইয়ুথ লিডারস ফোরাম অনুষ্ঠিত হয়েছে। বেল্ট অ্যান্ড রোড বা এক অঞ্চল এক পথ উদ্যোগে সংশ্লিষ্ট প্রতিবেশি দেশগুলোর জনগণের মধ্যকার বন্ধনকে উন্নীত করা এবং বিশ্বব্যাপী শাসন, বিনিময় ও পারস্পরিক শিক্ষায় তরুণদের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে মানবতার জন্য একটি সুন্দর ভবিষ্যত সম্প্রদায় গড়ে তোলা এবারের এশিয়া ইয়ুথ লিডারস ফোরামের লক্ষ্য।
প্রযুক্তি সহযোগিতা, উচ্চ-মানের উন্নয়ন, স্বাস্থ্যসেবা বৃদ্ধি, আর্থিক বিনিয়োগ, উদ্ভাবন ও উদ্যোগে উৎসাহ দেওয়া এবং কুয়াংতং-হংকং-ম্যাকাও বৃহত্তর উপসাগরীয় অঞ্চলের উন্নয়নসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করতে এশিয়ার দেশগুলোর প্রায় ৪ শ’ তরুণ তিনব্যাপী অনুষ্ঠিত এই ফোরামে অংশগ্রহণ করেন।
শান্তি বজায় রাখা, স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করা এবং এই অঞ্চলে সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো মোকাবিলা করার সময় ধারণা বিনিময়, বন্ধুত্ব শক্তিশালী করা এবং প্রতিভা প্রদর্শনে এশিয়ার তরুণ নেতাদের সুযোগ করে দেয় এই ফোরাম। ফোরামের একজন অংশগ্রহণকারী তরুণ বলেন,
"তরুণদের প্রচেষ্টা ছাড়া এশিয়ার উন্নয়ন সম্ভব নয়। আমি বিশ্বাস করি, তরুণেরা এশিয়ায় সহযোগিতা বাড়াতে পারে এবং ইতিবাচক সহযোগিতা প্রতিষ্ঠায় সব ক্ষেত্রে একটি শক্তিশালী এশিয়ান অর্থনীতির বিকাশের জন্য ভবিষ্যতে আরও বিনিময় করতে পারে"।
বিশ্বব্যাপী শাসনে আরও বেশি অবদান রাখার ক্ষেত্রে তরুণদের অনুপ্রাণিত করতে অনলাইনে বা বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে ফোরামে অংশ নেওয়া তরুণদের উদ্দেশ্যে নিজেদের প্রত্যাশা প্রকাশ করেন একাধিক দেশের রাজনৈতিক নেতারা।
ফোরাম শেষে তরুণ উদ্যোক্তাদের নিয়ে একটি বৃক্ষ রোপণ কর্মসূচি ও একটি শিল্প প্রদর্শনীর পরিকল্পনা করা হয়।
প্রতিবেদকঃ রওজায়ে জাবিদা ঐশী
৩.
চীনের গ্রামাঞ্চলের মানুষকে বিনোদন দিতে একঝাঁক চীনা তরুণ কাজ করছেন। তারা বিভিন্ন উপায়ে এই গ্রামবাসীকে বিনোদন দিচ্ছেন। এসবের মধ্যে প্রজেক্টরের মাধ্যমে সিনেমা দেখানো অন্যতম। দর্শকদের কাছ থেকে ভালো সাড়াও পেয়েছেন তারা। তাদের মধ্যে একজন উদ্যমী তরুণ ইউয়ান মিং।
প্রকৃতির মাঝে, খোলা আকাশের নিচে সিনেমা দেখছে মানুষ, চীনের গ্রাম পর্যায়ে এখন দেখা মিলছে এমন চিত্রের। যেখানে পরিবারের ছোট বড় সদস্যরা একসঙ্গে বসে উপভোগ করছেন মজার কোন সিনেমা অথবা ঐতিহাসিক কোন ডকুমেন্টারি। ইউয়ান মিং কাজ করছেন মূলত একজন সিনেমা প্রজেকশনিস্ট হিসেবে।
ছোটবেলা থেকেই চলচ্চিত্রের প্রতি ভীষণ আগ্রহী ইউয়ান মিং। শৈশবে একবার প্রজেক্টর দেখে খুব অবাক হয়েছিলেন। তিনি জানতে চেয়েছিলেন, প্রজেক্টরের ভিতরে কি করে এতো চমৎকার জিনিস থাকতে পারে!
বড় হয়ে প্রজেক্টরের এই কাজকেই জীবনের অন্যতম পেশা হিসেবে বেছে নেন ইউয়ান মিং। দুর্দান্ত গতিতে এগিয়ে চলছে তার কাজ। গেল ছয় বছরে ১৮০টিরও বেশি গ্রামে প্রজেক্টের মাধ্যমে চলচ্চিত্র দেখিয়েছেন তিনি। আর এই কার্যক্রম উপভোগ করেছেন কয়েক লাখ গ্রামীণ দর্শক।
এই কাজের বাইরে ক্যালিগ্রাফি করতে ভীষণ ভালোলাগে তার। ইউয়ান মিং মনে করেন, পছন্দের কাজগুলো হৃদয়কে একদম শান্ত করে দেয়। বর্তমানে চীনের গ্রাম পর্যায়ে গুরত্ব বেড়েছে চলচ্চিত্র প্রজেকশনের কাজের। অনেক তরুণই এখন ঝুঁকছেন এই কাজে।
৪.
প্রত্নতত্ত্বখাতকে সমৃদ্ধ রাখতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে একদল চীনা তরুণ। প্রাচীন সভ্যতার মূল্যবান নিদর্শনের সাক্ষীও হচ্ছেন তারা। একইসঙ্গে পূর্বপুরুষদের লাইফস্টাইল সম্পর্কেও ধারণা পাচ্ছেন এই উদ্যমী তরুণরা। প্রাচীন সভ্যতার ইতিহাস ঐতিহ্য সুরক্ষিত রাখতে সবকিছু নিয়ে পাশে রয়েছে দেশটির সরকার।
তরুণ প্রত্নতত্ত্ববিদ চাও চেন। চীনের সিছুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের পিএইচডি শিক্ষার্থী। সাধারণত এই বিভাগের কাজ হলো প্রাচীন যুগে মানুষের ব্যবহার করা জিনিসপত্রের ধ্বংসাবশেষ পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে সে যুগের সংস্কৃতি সম্পর্কে অধ্যয়ন করা।
সম্প্রতি সিছুয়ান প্রদেশের সানসিংদুই এলাকায় ভ্রমণ করেছেন চাও চেন। সেখানকার ধ্বংসাবশেষ খনন এলাকায় ছবি তোলা এবং রেকর্ডিংয়ের কাজ করেছেন তিনি। ঐতিহ্যবাহী সিছুয়ান সভ্যতার উৎপত্তি সম্পর্কে নানা অজানা তথ্য পেয়েছেন তিনি। একইসঙ্গে পূর্বপুরুষদের জীবন-আচরণ নিয়ে গবেষণাধর্মী এই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিজেকে আরও সমৃদ্ধ করার সুযোগ পেয়েছেন চাও চেন।
এই কাজ করতে গিয়ে প্রত্নতত্ত্ব বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করতে হয় চাও চেনের। এভাবেই নানারকম অভিজ্ঞতা ও সৃজনশীলতায় সমৃদ্ধ হয়েছেন তিনি।
‘আমার কাছে প্রত্নতাত্ত্বিক এ কাজগুলো অনেকটা গুপ্তধন খোঁজার মতো। এই কাজে নিয়োজিত হওয়ার পর প্রাচীন সভ্যতার মানুষদের সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য পেয়েছি। একইসঙ্গে সাক্ষী হয়েছি প্রাচীন যুগের নানা মূল্যবান নিদর্শনের’
কাজ থেকে অবসর পেলেই বাস্কেটবলে মেতে ওঠেন এই প্রত্নতত্ত্ববিদ। যদিও প্রত্নতত্ত্ব ও বাস্কেটবল ভিন্ন দুই বিষয়, তবে এই দুই ক্ষেত্রেই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন অসীম ধৈর্য আর দলগত সহযোগিতা।
চাও চেন প্রত্যাশা করেন, ভবিষ্যতে আরও বেশি তরুণ প্রত্নতাত্ত্বিক কাজে যুক্ত হবেন। আর এভাবেই সুরক্ষিত হবে প্রাচীন সভ্যতার ইতিহাস আর ঐতিহ্য।
প্রতিবেদকঃ হাবিবুর রহমান অভি
আমাদের ‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ আজ এই পর্যন্তই । পরবর্তী অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ জানিয়ে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। শুভকামনা সবার জন্য।
পরিকল্পনা ,পরিচালনা ও সঞ্চালনা : রওজায়ে জাবিদা ঐশী
অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল
সার্বিক সম্পাদনা: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী