এবারের পর্ব সাজানো হয়েছে
১। প্রাচীন গ্রাম সিনচিয়াংয়ের হুওমু
২। চীনের মানুষ স্বভাবতই বন্ধুসুলভ:নূর মুহাম্মদ
৩। বেইজিংয়ের ৭৯৮ আর্ট জোন
বিশ্বব্যাপী অপরূপ সৌন্দর্যের চাদর বিছিয়ে রেখেছে বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি। কতো-শতো দেশ, কতো সংস্কৃতি, কতো ভাষা, কতো পেশা,.... কিন্তু আর্থিক অসঙ্গতি কিংবা সময়ের টানাটানিতে দেখা হয় না, ‘ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া’
‘একটি ধানের শিষের উপরে একটি শিশির বিন্দু...’সেই অদেখাকে দেখাতেই আমাদের আয়োজন "ঘুরে বেড়াই"।
দেশ-বিদেশের দর্শনীয় স্থান, সেখানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, এবং সেই স্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা অর্থনীতি নিয়ে আমাদের অনুষ্ঠান ‘ঘুরে বেড়াই’।
ঘুড়ে বেড়াই অনুষ্ঠানের ১১তম পর্ব আজ। আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি, আফরিন মিম।
১। প্রাচীন গ্রাম সিনচিয়াংয়ের হুওমু
আফরিন মিম , চীন আন্তর্জাতিক বেতার: চীনের সিনচিয়াং প্রদেশের বু আর চিন কাউন্টির খানাস হ্রদের কাছে অবস্থিত আদিম গ্রাম হুওমু । এখানকার সবুজ তৃণভূমি, সীমাহীন জঙ্গল এবং কুয়াশাচ্ছন্ন তুষারাবৃত পর্বত গ্রামকে করে তুলেছে অতুলনীয়।
শরতকালে এ গ্রামের চিত্রটা কিছুটা প্লাটে যায়। সোনালি পাতায় পুরো গ্রাম হলুদ বর্ণ ধারণ করে। পাহাড় ও বনের ছায়া যখন জলের উপর পড়ে মনে হয় এ যেন জলরঙের ছবি।
সিনচিয়াংয়ের থুভা জাতিগোষ্ঠীর তিনটি বাসস্থানের মধ্যে সবচেয়ে প্রত্যন্ত ও বৃহত্তম গ্রাম হচ্ছে এই হুওমু গ্রাম। এ গ্রামের বাসিন্দারা এখনো সরল এবং প্রাচীন জীবনধারায় অভ্যস্ত। স্থানীয়রা বেশিরভাগ পশুপালন করে জীবিকা নির্বাহ করে । এ এলাকার আবাসিক ঘরগুলো সাধারণত কাঠের হয়ে থাকে। আর এসব ঘরের অন্যতম বৈশিষ্ট্য প্রতিটা ঘরের দরজা পশ্চিমদিক মুখী।
এ গ্রামের আবাসিক এলাকার বিপরীতে অবস্থিত হুওমু নদী । নদীর উপর নির্মিত দুটি সেতু যেগুলো লোকেমুখে হওমু সেতু নামে পরিচিত। এ সেতু দুটি সাধারণত বেশিরভাগ সময়ই ব্যবহৃত হয় স্থানীয় পশুপালকদের গবাদি পশু পারাপারের জন্য ।
এ গ্রামকে বলা হয় ফটোগ্রাফাদের জন্য স্বর্গ । এখানকার সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের ছবি তুলতেই মূলত ফটোগ্রাফাররা আসে। এছাড়া যখন রাত ঘনিয়ে আসে, অসংখ্য তারায় সুশোভিত হয় আকাশ । মাটিতে শুয়ে আকাশের দিয়ে তাকিয়ে উপভোগ করা যায় তারার সৌন্দর্য। জুন থেকে অক্টোবর হচ্ছে এ গ্রামে ঘোরার সবচেয়ে উপযুক্ত সময়।
২। চীনের মানুষ স্বভাবতই বন্ধুসুলভ: নূর মুহাম্মদ
চীনের মানুষ স্বভাবতই বন্ধুসুলভ । যে কাউকেই সাদরে অভিবাদন জানায় তারা। এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন চীনে বসবাসরত বাংলাদেশী নূর মুহাম্মদ।
নূর মুহাম্মদ
উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে পাঁচ বছর আগে চীনে পাড়ি জমান তিনি। বর্তমানে বাস করছেন চীনের কুয়াংতং প্রদেশের কুয়াংচৌ শহরে। আর পড়ছেন চীনের চাইনিজ একাডেমি অব সাইন্সের অধীনে শেনচেন ইনিস্টিটিউট অব এডভান্সড টেকনোলোজিতে।
বিগত পাঁচ বছরে নূর মুহাম্মদ ঘুরেছেন চীনের বিভিন্ন প্রদেশের ,বিভিন্ন শহরে। তিনি জানান, “ আমি ঘুরে বেড়িয়েছি চিয়াংসু প্রদেশের রাজধানী নানচিংয়ে, চাংচৌ শহরে। এছাড়া ঘুরেছি কুয়াংতং প্রদেশের বিভিন্ন জায়গায়।
চীনা দুই শিশুর সাথে নূর মুহাম্মদ
এসব জায়গার ঘুরে বেড়ানোর অভিজ্ঞতার স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, “ আমি যেসব জায়গায় ঘুরেছি চেষ্টা করেছি স্থানীয় মানুষদের সাথে মিশতে। জানতে পেরেছি তাদের বর্ণিল জীবনযাপন সম্পর্কে । তারা খুব অতিথিপরায়ন , ভিনদেশী কেউ যদি তাদের ভাষায় কিছু বলে তারা খুব খুশি হোন এবং কৌতুহল নিয়ে তাকায় থাকেন।
“ চীন একটি বৃহৎ দেশ। বহু জাতিগোষ্ঠী তাদের আচার আচরণ ,সংস্কৃতির বজায় রেখে হাজার হাজার বছরে চীনে বাস করছে। তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুব ভালো। যেকোন প্রয়োজনে সেখানকার প্রশসান খুব সাহায্য করে”
তারা চীনে ঘুরতে কিংবা পড়তে যেতে চায় তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ভাষা যেকোন জাতি কিংবা দেশকে জানতে খুব সাহায্য করে । তাই কেউ ঘুরতে কিংবা পড়তে যদি আসে তার আগে একটু ভাষা জেনে আসতে পারলে তার জন্য খুব সহজ হবে চীন”।
৩। বেইজিংয়ের ৭৯৮ আর্ট জোন
শান্তা মারিয়া , চীন আন্তর্জাতিক বেতার: চীনের আধুনিক শিল্পকলা বিষয়ে ধারণা পাওয়া যায় বেইজিংয়ে ৭৯৮ আর্ট জোন থেকে। এটাকে তাশানজি আর্ট ডিসট্রিক্টও বলা হয়। এটি বেইজিংয়ের ছাওইয়াং জেলায় অবস্থিত। এখানে বেইজিং কুয়ের ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল এবং বেইজিং ডিজাইন উইকের অনুষ্ঠানও হয়।
সাধারণ পর্যটকরা অনেকেই এই স্থানটির খোঁজ জানেন না। তবে যারা ছবি আাঁকার সঙ্গে যুক্ত তারা এ স্থানটি বেশ পছন্দ করেন।
এই এলাকাটি দূর থেকে দেখলে মনে হয় কতগুলো কারখানা ভবন। কিন্তু কাছে গেলে দেখা যায় এখানে রয়েছে প্রথিতযশা আধুনিক শিল্পীদের আর্ট গ্যালারি যেখানে নানা রকম চোখ জুড়ানো শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হচ্ছে।
একসময় এই এলাকায় ছিল বেশকিছু কারখানা। পরে এখান থেকে কারখানা সরিয়ে নেয়া হয়। নব্বই দশকের শেষে এবং নতুন শতকে এখানে শিল্প গ্যালারি গড়ে তোলা হয়। বেশ কয়েকটি ভাস্কর্যও স্থাপন করা হয়। এর পর বেইজিংয়ের নামকরা শিল্পীরা এই এলাকার প্রতি আকৃষ্ট হন। তার কারখানা শেডগুলোর ভিতরে নিজের নিজের স্টুডিও গ্যালারি গড়ে তোলেন।
২০০৪ সালে এখানে তাশানচি আন্তর্জাতিক আর্ট ফেস্টিভ্যাল হয়। বেইজিং দ্বিবার্ষিক শিল্পকর্ম প্রদর্শনীও এখানে হয়েছে বেশ কয়েকবার।
এই এলাকায় পর্যটকরা বিভিন্ন শিল্পীর স্টুডিওতে তাদের শিল্পকর্ম দেখার পাশাপাশি কিনতেও পারবেন। এখানে রয়েছে বেশ কয়েকটি রেস্টুরেন্ট যা অনন্য শৈল্পিক রুচিতে সাজানো।
এখানে বেশ কয়েকটি বুটিক হাউজও আছে। এখান থেকে ঘর সাজানোর শৈল্পিক সামগ্রী এবং আসবাব কেনা যায়। বিভিন্ন স্টুডিওর সামনে এখন পথের ধারে ধারে শোভা পায় আধুনিক শিল্পকলার প্রতীক সব ভাস্কর্য।
পুরো এলাকাটিতে রয়েছে বেশ কিছু গ্রাফিতি।
চীনের বর্তমান শিল্পধারা সম্পর্কে ধারণা পেতে হলে পর্যটকরা যেতে পারেন ৭৯৮ আর্ট জোনে। এখানে কোন গ্যালারিতে ঢুকতেই কোন টিকেটের প্রয়োজন হয় না।
পরিকল্পনা ও প্রযোজনা ও অডিও সম্পাদনা- আফরিন মিম
সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী