বিদেশি ছাত্রছাত্রীদের ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ সংগীত ব্যান্ড মিউজিকের মাধ্যমে চীন ও বিশ্বকে সংযুক্ত করে
2023-03-28 14:24:44

চলতি বছর হল ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগের ১০ম বার্ষিকী। গত দশ বছরে, ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগের অধীনে, চীন এবং এর বরাবর দেশগুলির মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের আকার স্থিতিশীলভাবে উন্নত ও সম্প্রসারণ করেছে, অবকাঠামো ও উভয়ের যোগাযোগ আরও উন্নত হচ্ছে, শিল্প চেইন ও সরবরাহ চেইনের সহযোগিতার মান বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সঙ্গে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ বিভিন্ন দেশের স্বীকৃত পেয়েছে এবং বরাবর দেশগুলির মানুষকে সংযুক্ত করেছে। চীনের চিয়াংসি প্রদেশের নানছাং শহরে নানছাং এভিয়েশন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদেশি ছাত্রছাত্রীরা একটি সংগীত ব্যান্ড প্রতিষ্ঠা করেছে, এর নাম ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ সংগীত ব্যান্ড, এবং তারা মিউজিকের মাধ্যমে চীনা ও বিভিন্ন দেশের জনগণের অনুভূতি সংযুক্ত করেছে।

 

গানটি গেয়েছেন ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ ব্যান্ড। ব্যান্ডের সদস্যরা গানে বলছেন, ‘আগে আপনি চীনের মহাপ্রাচীর, নিষিদ্ধ নগর এবং ইয়াংসি নদীর কথা জানতেন, বর্তমানে আপনি চীনের উদ্ভাবনী শক্তি, উচ্চ গতির রেল এবং ৫জি দেখছেন।’

‘এক অঞ্চল, এক পথ’ সংগীত ব্যান্ড ২০১৩ সালে গড়ে ওঠে, ব্যান্ডের প্রথম ব্যাচের সদস্যরা ভারত, বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকার শিক্ষার্থী। বর্তমানে ব্যান্ড দলে চারজন সদস্য আছে।

বর্তমানে, ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ ব্যান্ডের চারজন সদস্য রয়েছে, তারা হল, তানজানিয়ার প্রধান গায়ক এবং কীবোর্ড প্লেয়ার ড্যানিয়েল, জাম্বিয়ার বেসিস্ট অ্যাবে, জিম্বাবুয়ের ড্রামার নিয়াসার এবং ব্যাকিং ভোকালিস্ট অলি।

 

প্রধান গায়ক ও কীবোর্ড প্লেয়ার ড্যানিয়েল ২০১৫ সালে চীনে আসেন এবং এখন নানচাং এভিয়েশন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিমান প্রকৌশল বিভাগের স্নাতক ছাত্র। তিনি বলেন, কয়েক বছর ধরে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য পরিবর্তন হয়নি। তিনি বলেন,

‘আমাদের ব্যান্ডের কিছু সদস্য স্নাতক হয়েছে, তারা বাড়ি চলে গেছে, আমরা এখনও এখানেই আছি, ব্যান্ডটি এখনও একই নাম ব্যবহার করে। হয়তো আমরা যখন স্নাতক হয়ে বাড়ি যাব, তখন অন্যরাও থাকবে যারা এখানে থাকবে, তারা ব্যান্ডদল পরিচালনা করবে। আমি যেমন বলেছি, আমরা এখানে বিদেশি ছাত্র। আমরা আমাদের দেশকে চীনা মানুষের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেই। সেই সঙ্গে, আমরা চীনকে জানতে পেরেছি এবং আমাদের দেশের লোকেরা আমাদের মাধ্যমে চীন সম্পর্কে আরও জানতে পেরেছে।’

 

ড্যানিয়েল বলেন যে, ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ ব্যান্ডের নামটি খুবই অর্থবহ। ব্যান্ডের সদস্যরা সবাই ‘এক অঞ্চল, এক পথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কিত দেশ থেকে এসেছেন। প্রত্যেকেই একে অপরকে সাহায্য করে এবং শেখে। তারা গানের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক বিনিময়ও করে। এটি ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগের চেতনার সঙ্গে যুক্ত।

ব্যান্ডের সদস্যরা চীন ও তাদের মাতৃভূমির মধ্যে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ প্রকল্পের সঙ্গে খুব পরিচিত। জাম্বিয়ার বাসস্ট অ্যাবে বলেন:

‘আমাদের দেশ জাম্বিয়া ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত, আমি জানি যে কেনেথ কাউন্ডা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্প আমাদের দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়তা করেছে এবং একে দক্ষিণ আফ্রিকার একটি পরিবহনকেন্দ্রে পরিণত করেছে।’

ব্যান্ডের প্রধান গায়ক, তানজানিয়ার ড্যানিয়েল বলেছেন:

‘আমাদের দেশে বেশ কয়েকটি বন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্প রয়েছে, যা তানজানিয়ার অর্থনীতির জন্য এবং আশেপাশের দেশগুলির জন্যও খুব উপকারী হবে- যারা বন্দরটি ব্যবহার করতে পারবে।’

বর্তমানে ৫২টি আফ্রিকান দেশ এবং আফ্রিকান ইউনিয়ন কমিশন চীনের সঙ্গে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ বিষয়ক সহযোগিতা নথিতে স্বাক্ষর করেছে এবং অনেক যুগান্তকারী প্রকল্প পরিচালনা করছে। ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগের যৌথ নির্মাণ চীন ও আফ্রিকার মধ্যে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার অবকাঠামো নির্মাণ দ্রুততর করছে। আফ্রিকায় চীনের নির্মাণ প্রকল্পের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার পর, অনেক তরুণ আফ্রিকান চীনে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পড়তে আসে। অলি, জিম্বাবুয়ের ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ ব্যান্ডের ব্যাক সিংগারদের একজন, তিনি বলেন,

‘জিম্বাবুয়েতে আমি চীনাদের দেখেছি। তারা সেখানে যান নির্মাণ কাজ ও রাস্তা তৈরি করতে। তারা খুব অল্প সময়ের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প সম্পন্ন করেন, যা অনন্য এবং মনোযোগ আকর্ষণ করে। আমি সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং শিখতে চাই। আমি ভাবলাম, কেন চীনে যাব না? কারণ আমি যে চীনাদের দেখছি তারা এই নির্মাণগুলি করছে, এবং আমি বলতে পারি যে তারা নিখুঁত ও সুন্দরভাবে কাজ করছে। তাই আমি তাদের কাছ থেকে শিখতে চাই, কারণ তারা অনন্য স্থাপনা তৈরি করছে।’

 

চীনে আসার পর, অলি ‘আই বিলিভ’ গানটির প্রেমে পড়েন। তিনি এই চীনা গানে তার স্বপ্ন পূরণের শক্তি খুঁজে পান। তিনি বলেন,

‘আমি ‘আই বিলিভ’ গানটি পছন্দ করি। এটি আমাকে আমার স্বপ্নে বিশ্বাস করতে এবং আমার স্বপ্ন বাস্তবায়নে উৎসাহিত করে।’

‘এক অঞ্চল, এক পথ’ ব্যান্ডের ড্রামার নিয়াস। তিনি জিম্বাবুয়ে থেকে এসেছেন। অলির মতো একই অভিজ্ঞতা তার। নিয়াসার বলেন:

‘অবকাঠামো খাতে চীনের অনেক সুবিধা রয়েছে। আমার দেশে, আমি চীনের নির্মাণ প্রকল্প দেখেছি। উদাহরণস্বরূপ, জিম্বাবুয়েতে আমাদের জাতীয় স্টেডিয়ামটি ১৯৮০ সালে নির্মিত হয়েছিল। এই প্রকল্পে চীন সহায়তা করেছিল। আমি দেখতে পাচ্ছি, এটা কতটা শক্তিশালী। আমি মনে করি, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার জন্য চীন একটি ভাল জায়গা, যা আমার বর্তমান মেজর। এ ছাড়া আমি বিশ্বের অন্য প্রান্তগুলোও দেখতে চাই। আপনি যদি প্রাচ্যের দেশগুলির কথা বিবেচনা করেন, তবে চীন সবচেয়ে বিখ্যাত।’

 

চীনে অধ্যয়নের আগে, নিয়াসা অন্য তরুণ আফ্রিকানদের মতো, চীনের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে তেমন কিছু জানতেন না, এমনকি কিছু নাটকীয় কল্পনা এবং ভুল ধারণাও ছিল। নিয়াসার বলেন যে, তিনি মনে করতেন যে চীনে, সবাই চীনা চলচ্চিত্র এবং টেলিভিশন নাটকের মতো কুংফু জানে এবং এমনকি দেয়ালের উপর দিয়ে উড়তে পারে। তিনি বলেন,

‘আমি কল্পনা করতাম যে, চীন খুব দ্রুত বিকাশ হচ্ছে এবং এটি সত্য। আরেকটি জিনিস আমি ভাবতাম যে, চীনা লোকেরা কুংফু জানে, কিন্তু তা নয়। আমার কল্পনায়, প্রতিটি চীনাই আমরা যা টিভি নাটকের মতো দেখি। কিন্তু এখন দেখছি, চাইনিজরা উড়তে পারে না, তারা আমাদের মতোই সাধারণ মানুষ।’

 

নিয়াসা বিশেষ করে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ ব্যান্ডের ‘আমি ও আমার চীনা শিক্ষক’ গানটি পছন্দ করেন। এই গানটি চীনে আসা একজন বিদেশি ছাত্রের বিস্ময়কর যাত্রা এবং তাদের চোখে পরিশ্রমী চীনা জনগণের কথা বলে। গানটির অন্যতম নির্মাতা ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ ব্যান্ডের প্রধান গায়ক ড্যানিয়েল বলেছেন:

‘চীনে স্ব-উন্নতি নামে একটি প্রবাদ আছে, যা প্রকৃতির কার্যকলাপের মতোই চীনা জনগণের ক্রমাগত অগ্রগতি এবং তাদের লক্ষ্য অর্জনের জন্য অবিরাম সংগ্রামের চেতনা প্রকাশ করেছে। আমি মনে করি, এর মূল কারণ হলো, চীন বছরের পর বছর ধরে উন্নত হয়েছে।’

 

অনেক আফ্রিকান শিক্ষার্থী চীনের উন্নয়ন এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে আফ্রিকার সঙ্গে ফলপ্রসূ সহযোগিতা প্রত্যক্ষ করেছে। কিন্তু কিছু পশ্চিমা মিডিয়া চীন-আফ্রিকা সহযোগিতা সম্পর্কে মিথ্যা কথা প্রচার করে, দীর্ঘদিন ধরে তথাকথিত ‘ঋণের ফাঁদ’ তুলে ধরেছে। এই বিষয়ে, নিয়াসার বিশ্বাস করেন, আফ্রিকান দেশ ও চীন সমতা ও পারস্পরিক সুবিধার ভিত্তিতে সহযোগিতা করছে, তবে কিছু পশ্চিমা দেশ ও মিডিয়া মিথ্যা প্রচারের কারণে ভুল বোঝাবুঝির মধ্যে রয়েছে।

 

ব্যান্ডের প্রধান গায়ক ড্যানিয়েল বলেন, চীনের মহাকাশ প্রযুক্তির দ্রুত বিকাশ হচ্ছে। তিনি আশা করেন, তিনি চীনে যে মহাকাশের জ্ঞান শিখেছেন, তা তানজানিয়ায় ফিরিয়ে নিয়ে যাবেন। যাতে তিনি তার শহর নির্মাণে অবদান রাখতে পারেন। তিনি আফ্রিকা ও চীনের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ বিনিময়ে অবদান রাখার জন্য তার গান ব্যবহার করবেন বলে আশা করেন।

তিনি বলেন, ‘আমি চীনে না থাকলেও, আমি যেখানেই যাই না কেন, আমি অনুভব করি যে, চীন আমার সঙ্গে কোথাও না কোথাও থাকবে এবং আমি অনুভব করি, আমি এখনও বড় চীনা পরিবারের অংশ। এমনকি যখন আমি তানজানিয়ায় থাকি, আমি অনেক চীনাদের সঙ্গে দেখা করি। এভাবে গান গাওয়ার সুযোগ থাকলে অবশ্যই করব।’

 

(জিনিয়া/তৌহিদ)