‘একচীন নীতি’ আন্তর্জাতিক সমাজের অভিন্ন চেতনা: সিএমজি সম্পাদকীয়
2023-03-27 11:49:40

মার্চ ২৭: হুন্ডুরাস তাইওয়ান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ‘সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করার’ ঘোষণা দেওয়ার পর, গতকাল (রোববার) গণপ্রজাতন্ত্রী চীন ও হুন্ডুরাস আনুষ্ঠানিকভাবে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছে। এ পর্যন্ত বিশ্বে ১৮২টি দেশ চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করল এবং তাইওয়ান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তথাকথিত ‘কূটনৈতিক সম্পর্ক থাকা দেশের’ সংখ্যা মাত্র ১৩টি। এতে প্রমাণ হয় যে, ‘একচীন নীতি’ হল আন্তর্জাতিক সমাজের অভিন্ন চেতনা এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মৌলিক নিয়ম। হুন্ডুরাসের সিদ্ধান্ত ইতিহাসের সঠিক পক্ষে আছে এবং অধিকাংশ দেশের পাশে আছে। সিএমজি সম্পাদকীয় এসব কথা বলেছে।

 

সম্পাদকীয়তে আরো বলা হয়, বিশ্বে শুধু একটি চীন দেশ আছে। আর গণপ্রজাতন্ত্রী চীন সরকার হল চীনের প্রতিনিধিত্বকারী একমাত্র বৈধ সরকার। তাইওয়ান হল, চীনের ভূখণ্ডের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। যা অনস্বীকার্য ইতিহাস এবং আইনগত বাস্তবতা। ১৯৭১ সালে জাতিসংঘ সম্মেলনের ২৭৫৮ নং প্রস্তাবে ‘একচীন নীতি’ নির্ধারণ করা হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পানামা থেকে এলসালভাদর, নিকারাগুয়া থেকে হুন্ডুরাস, তাইওয়ানের সঙ্গে তথাকথিত ‘কূটনৈতিক  সম্পর্ক থাকা’ দেশগুলো একে একে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করছে। যা ‘একচীন নীতির’ ভিত্তিতে নেওয়া রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, যা বিশ্বের উন্নয়নের প্রবণতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ, নিজ দেশের স্বার্থের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ এবং জন- আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন। হুন্ডুরাসের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এডুয়ার্ডো রেইনার বলেছিলেন, চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, সারা বিশ্ব সেদিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

 

সেই সঙ্গে হুন্ডুরাসের বিনাশর্তে চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করা লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর মর্যাদাপূর্ণ উন্নয়নের তীব্র আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন। হুন্ডুরাস মধ্য আমেরিকা অঞ্চলের  গুরুত্বপূর্ণ দেশ। বর্তমানে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল উন্নয়ন। আর যুক্তরাষ্ট্র সবসময় লাতিন আমেরিকার দেশগুলোকে নিজ দেশের ‘ব্যাকইয়ার্ড’ মনে করে। সেখানে দীর্ঘসময় ধরে ‘মনরো মতবাদ’ প্রয়োগ করা হয়েছে, বর্বরোচিতভাবে লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করা হয়েছে এবং অন্য দেশের সঙ্গে তাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতায় বাধা দেওয়া হয়েছে। ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্র তথাকথিত ‘তাইপেই প্রস্তাব’ গ্রহণ করে। যে দেশ চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে। সম্প্রতি হুন্ডুরাসের প্রেসিডেন্ট জিওমারা কাস্ত্রো উন্মুক্তভাবে চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন, তারপর যুক্তরাষ্ট্রের একজন প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা দ্রুত হুন্ডুরাস সফর করেন। রয়টার্সের খবরে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র হুন্ডুরাস ও চীনের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে বাধা দিতে চায়। তবে, তা নিশ্চয় ব্যর্থ হবে। নিইউয়র্ক টাইমসের খবরে বলা হয়, তাইওয়ানের সঙ্গে হুন্ডুরাসের সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করা একদিকে তাইওয়ানের ওপর আঘাত, অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যর্থতা।

সবশেষ খবরে বলা হয়, চীন হুন্ডুরাসকে যৌথভাবে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগ, বিশ্ব উন্নয়ন উদ্যোগ, বিশ্ব নিরাপত্তা উদ্যোগ এবং বিশ্ব সভ্যতা উদ্যোগে অংশগ্রহণে স্বাগত জানায়। সেই সঙ্গে আমদানি বৃদ্ধি, পুঁজি বিনিয়োগ করা, অবকাঠামো নির্মাণে অংশ নেওয়াসহ বিভিন্ন পদ্ধতিতে চীন হুন্ডুরাসের কাছে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার সদিচ্ছা প্রকাশ করে। হুন্ডুরাস ‘একচীন নীতি’ মেনে চলবে, চীনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ করবে, দ্রুত দু’দেশের বিভিন্ন খাতের সহযোগিতা উন্নত করবে। চীন ও হুন্ডুরাসের বাস্তব সহযোগিতা দু’দেশের জনগণের জন্য কল্যাণকর হবে। যা উন্নয়নশীল দেশের সহযোগিতা জোরদার করবে এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের গণতন্ত্র বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখবে।

 

তাইওয়ান চীনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ‘স্বাধীন তাইওয়ান দাবিদারদের’ অপচেষ্টা নিশ্চয় ব্যর্থ হবে। কোনো দেশ বা ব্যক্তি, চীনের সার্বভৌমত্ব ও ভূখণ্ডের অখণ্ডতা রক্ষার দৃঢ় সংকল্প ও সামর্থ্যকে ছোট করে দেখতে পারবে না। বাস্তবতা প্রমাণ করেছে যে, আরো বেশি দেশ ইতিহাসের সঠিক পক্ষে দাঁড়াবে।

(শুয়েই/তৌহিদ/জিনিয়া)