“চীন হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাজার। চীনের বসন্ত উৎসবের পর এখানে আসতে পারাটা আমার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।” ভক্সওয়াগেন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা বোর্ডের চেয়ারম্যান অলিভার ব্লুম সিনহুয়া বার্তা-সংস্থাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, অব্যাহতভাবে চীনে পণ্যদ্রব্যের মাত্রা সম্প্রসারণ করার প্রত্যাশা করেন।
ব্লুমের এবারের চীন সফর অসাধারণ হয়েছে। চীন মহামারী প্রতিরোধ ব্যবস্থা শিথিল করার পর আন্তঃসীমান্ত প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন পর্যায়ের প্রশাসক চীনকে কাঙ্ক্ষিত স্থান হিসেবে বিবেচনা করে সফর শুরু করে চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়নের নতুন সুযোগ কাজে লাগান।
চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শু ইয়ুথিং বলেন, কয়েক ডজন আন্তঃসীমান্ত কোম্পানির সদর দপ্তর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সম্প্রতি চীনে ব্যবসা পরিদর্শন সংক্রান্ত কার্যক্রম নিয়ে যোগাযোগ করেছে। ভক্সওয়াগেন গ্রুপ এর মধ্যে অন্যতম।
অলিভার ব্লুম ব্যাখ্যা করেন, তাঁর এবারের এক সপ্তাহের সফরে তিনি বেইজিং, ছাংছুন, শাংহাই ও হেফেই গিয়েছেন। সর্বত্র তিনি চীনা সহকর্মী, ব্যবসা অংশীদার এবং সরকারি প্রতিনিধিদের সঙ্গে মুখোমুখি মতবিনিময় করার সঙ্গে সঙ্গে অকুস্থলে বর্তমানে চীনা বাজারের কাঠামো উপলব্ধি করেছেন। পরিদর্শনের মাধ্যমে তিনি চলতি বছর চীনের অর্থনীতির প্রতি ইতিবাচক ও শুভ দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেন। তিনি অনুমান করেন, ২০২৩ সালে চীনের গাড়ির বাজার ধারাবাহিকভাবে পুনরুদ্ধার হবে। এর মধ্যে নতুন জ্বালানি গাড়ির বাজার আরও বিশাল এবং ব্যাপক হবে।
অনেক আন্তঃসীমান্ত প্রতিষ্ঠানের চীনে ব্যবসা পরিদর্শনের চাহিদা পূরণ করার জন্য এর আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বিদেশি প্রতিষ্ঠান এবং বিদেশি ব্যবসা সমিতির সঙ্গে নিয়মিত আদান-প্রদান জোরদার করার কথা জানিয়েছে। যাতে প্রতিষ্ঠানগুলোর সমস্যা সমাধানে সাহায্য দেয়া, বিদেশি প্রতিষ্ঠানের জাতীয় সুযোগ-সুবিধা কার্যকর করা, বিভিন্ন স্তরে বিদেশি পুঁজির প্রতিষ্ঠানের অভিযোগ আন্তঃবিভাগ সমন্বিত ব্যবস্থা সু-সম্পূর্ণ এবং বিদেশি পুঁজির প্রতিষ্ঠানের অধিকার রক্ষা করা যায়।
আমচাম দক্ষিণ চীন সম্প্রতি প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, দুই শতাধিক প্রতিষ্ঠানের ওপর পরিচালিত তদন্তের ফলাফলে দেখা গেছে, ৯০ শতাংশের বেশি প্রতিষ্ঠান চীনকে বিনিয়োগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও কাঙ্ক্ষিত স্থানগুলির অন্যতম হিসেবে দেখে এবং ৭৫ শতাংশ প্রতিষ্ঠান ২০২৩ সালে চীনে পুনরায় বিনিয়োগ করার পরিকল্পনা করছে।
গত ১৭ মার্চ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রকাশিত পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চলতি বছরের প্রথম দু’মাসে চীন ২৬ হাজার ৮৪৪ কোটি ইউয়ানের বৈদেশিক পুঁজি ব্যবহার করেছে। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬.১ শতাংশ বেশি।
ব্রিটিশ ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাস্ট্রাজেনেকার বিশ্বব্যাপী নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়াং লেই চীনের নীতিগত পরিবেশের ওপর উচ্চ মনোযোগ দেন। ২০২৩ সালে সরকারি কার্যবিবরণীতে উত্থাপিত “আরও বড় মাত্রায় বৈদেশিক পুঁজি আকর্ষণ ও ব্যবহার করা”র মাধ্যমে চীন অব্যাহতভাবে উন্মুক্তকরণ সম্প্রসারণ এবং বিদেশি প্রতিষ্ঠানের জন্য আরও উন্নতমানের নীতিগত পরিবেশ ও ব্যবসার পরিবেশ সরবরাহ করার আন্তরিকতা অনুভব করেছেন তিনি।
গত বছরের শেষ নাগাদ থেকে বিশ্ব ব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল, ফিচ রেটিং ও মরগান স্ট্যানলিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা পর পর চলতি বছর চীনের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির অভীষ্ট লক্ষ্য বাড়িয়ে চীনের অর্থনীতির সার্বিক সমবেত বিরাট “বাড়তি প্রভাব” সৃষ্টি হয়ে অব্যাহতভাবে বিশ্ব অর্থনৈতিক বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করার প্রধান ইঞ্জিনের ভূমিকা পালন করবে বলে মত দিয়েছে।
চলতি বছর চীনের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির অভীষ্ট লক্ষ্য হচ্ছে ৫ শতাংশ। সরকারি কার্যবিবরণীতে বৃদ্ধি স্থিতিশীল করার কথা জোরালো হয়েছে। ওয়াং লেইয়ের মতে, এটা চীন সরকারের অর্থনীতির স্থিতিশীল ত্বরান্বিত করার দৃঢ়প্রতিজ্ঞার প্রতিফলন। যা বিশ্ব অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য প্রত্যয় যোগায়।
তিনি বলেন, “আমরা দেখেছি, পরিষেবা সংস্কার সুবিন্যাস ও গভীরতর করতে চীন সরকারের দৃঢ়প্রতিজ্ঞা এবং অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বাস্তবায়ন, উন্নয়নের মান স্থিতিশীল উন্নত করার ফলাফল ও অধিকতর প্রতিশ্রুতি। এটা অ্যাস্ট্রাজেনেকা এবং অন্যান্য বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলোর চীনে উন্নয়ন করার জন্য শক্তিশালী চালিকাশক্তি ডেকে আনছে।
(প্রেমা/এনাম)