বসন্তকাল তথা মার্চ মাস হচ্ছে চেরি ফুল উপভোগের সময়। চীনের উ হান বিশ্ববিদ্যালয়ের চেরি ফুলের দৃশ্য খুব বিখ্যাত, যা বরাবরই অনেক পর্যটক আকর্ষণ করে। সম্প্রতি এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৩ সালের কোভিড-১৯ মহামারি প্রতিরোধক চিকিত্সক ও নার্সদের জন্য বিশেষ চেরি ফুল উপভোগ-অনুষ্ঠান গত দু’বছরের মতো আয়োজন করেছে। চলতি বছর মোট ১৬ হাজার করোনা প্রতিরোধকর্মী ও তাদের আত্মীয়রা চেরি ফুল উপভোগ করতে আসেন। তিন বছর আগে নানা প্রদেশ থেকে আসা চিকিত্সক ও নার্সরা ব্যাপক ঝুঁকির মুখে উ হানে কোভিড-১৯ মহামারি প্রতিরোধ করতে আসেন। এরপর থেকে প্রতিবছর চেরি ফুলের সাহায্যে তাদেরকে কৃতজ্ঞতা জানানো হয়। এ ধরণের একে অপরের প্রতি আবেগ প্রকাশের দৃশ্য সত্যি মনোমুগ্ধকর!
তিন বছর আগে উ হান শহরে কোভিড-১৯ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর অগণিত চিকিত্সা কর্মী বিনা দ্বিধায় "করোনা লড়াই নামের আহ্বানপত্র লিখেছেন। তারা সক্রিয়ভাবে চিকিত্সা দলে অংশগ্রহণ করেন। তাদের মাংস ও রক্ত দিয়ে মানুষের জন্য একটি "প্রতিরক্ষা প্রাচীর" তৈরি করেন। মহামারি প্রতিরোধের জন্য উ হানের হুয়াংশি শহরে ত্রাণসাহায্য করেছে সিয়াং সু প্রদেশ। ই ছাং শহরকে ত্রান সাহায্য করেছে ফু চিয়ান প্রদেশ ইত্যাদি। সে সব প্রদেশ থেকে আসা চিকিত্সা কর্মীরা মারাত্মক ভাইরাসের মুখে ভয় পান না? অবশ্যই ভয় পান। তবে তাঁরা জানেন ‘অভিন্ন ভাগ্য চেতনার গুরুত্বটা। অভিন্ন ভাগ্যের চেতনা শুধু চীনের প্রদেশ থেকে প্রদেশের মধ্যে প্রতিফলিত নয়, বরং চীনের সঙ্গে বিভিন্ন দেশের মধ্যেও তা প্রতিফলিত হয়েছে।
চীনে কোভিড-১৯ মহামারির প্রাদুর্ভাবের প্রথম দিকে আন্তর্জাতিক সমাজ বিভিন্ন পদ্ধতিতে চীনকে সমর্থন দিয়েছে। বাংলাদেশসহ বহু দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা চীনকে প্রতিরোধ সামগ্রীসহ নানা ত্রাণসাহায্য করেছে। ২০০৮ সালে চীনের ওয়েন ছুয়ান ভয়াবহ ভূমিকম্প ঘটার পর ইতালি সর্বপ্রথম চিকিত্সা দল দুর্গত অঞ্চলে পাঠায়। এবারে চীনে কোভিড-১৯ মহামারির পর ইতালি সরকার ও জনগণ চীনকে প্রয়োজনীয় ত্রাণ দিয়েছে। আফ্রিকার অনেক দেশ নিজের অর্থনৈতিক কঠিনতার প্রেক্ষাপটেও চাঁদা ও ত্রাণ প্রদান করেছে। নিরক্ষীয় গিনি, যার জনসংখ্যা মাত্র ১ মিলিয়নের বেশি, চীনকে ২০ লাখ ডলার নগদ সহায়তা দিয়েছে। সে সব মনোমুগ্ধকর ঘটনা চীনারা কেবল মনে রাখে না, বরং "ফোঁটা জলের অনুগ্রহ বসন্তের দ্বারা প্রতিদান দেয়। যখন বিশ্বে মহামারি গুরুতর হতে উঠে, তখনো চীন দুর্যোগে ভুগছে। তবে চীন যথাসাধ্য নানা দেশকে করোনা প্রতিরোধ করতে সাহায্যক করে। তখন দেখা যাচ্ছিল যে চীনের একটি প্রদেশ একেক দেশকে সাহায্য করেছে। সি ছুয়ান প্রদেশের চিকিত্সা দল ইতালিতে, শাংহাই চিকিত্সা দল ইরানে, চিয়াং সু প্রদেশের চিকিত্সা দল পাকিস্তানে এবং কুয়াং তো প্রদেশের চিকিত্সা দল ইরাকে সাহায্য করেছে। চিকিত্সাকর্মীরা দেশ থেকে গিয়ে বিদেশে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। চীন মোট ৩৪টি দেশে ৩৭টি চিকিতসা বিশেষজ্ঞ দল পাঠিয়েছে এবং রিজার্ভেশন ছাড়াই চীনের মহামারীবিরোধী অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছে। তাছাড়া, চীন ১৫৩টি দেশ ও ১৫টি আন্তর্জাতিক সংস্থাকে দশ হাজার কোটি প্রতিরোধ সামগ্রী প্রদান করেছে। বিশ্বের ১৮০টির বেশি দেশ ও অঞ্চল এবং ১০টির বেশি আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে যৌথভাবে কোভিড-১৯ মাহামরি প্রতিরোধ ও চিকিত্সা নিয়ে ৩০০টির বেশি বিনিময় অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। বিশ্বে সর্বপ্রথম করোনা ভ্যাকসিনকে বিশ্ব গণপণ্য হিসেবে ব্যবহারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং ১২০টি দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাকে ২২০ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন প্রদান করেছে চীন। সে সব কর্মকান্ড মানব জাতির অভিন্ন স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কমিউনিটি গঠনে সচেতনতার প্রতিফলন।
গত ২৩ মার্চ ছিল চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং “মানব জাতির অভিন্ন স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কমিউনিটি গঠন”র উদ্যোগ উত্থাপনের দশম বার্ষিকী। গত দশ বছরে চীন ও বিভিন্ন দেশের মধ্যে সহযোগিতা অনেক জোরদার হয়েছে, বিশেষ করে চীন ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কোভিড-১৯ মহামারি প্রতিরোধে যেভাবে সহযোগিতা চালিয়েছে চীন, তাতে মানব জাতির অভিন্ন স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কমিউনিটি গঠন উদ্যোগের গুরুত্ব ও তাত্পর্য আরও বেড়েছে।
(রুবি/এনাম)