মিয়াও জাতির সূচিকর্ম নারী
2023-03-24 12:25:03

লাল রং মানে হোয়াংহ্য নদী, সবুজ রং মানে ইয়াংসি নদী। অন্য পোশাক এখান থেকে নিচ পর্যন্ত সবই সূচিকর্ম বা বাটিক। তবে আমরা এখানে সিল্ক দিয়ে তৈরি করি।

পর্যটককে চীনের সংখ্যালঘু জাতি মিয়াও জাতির পোশাকের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া এই নারীর নাম ইয়াং ওয়েন লি। তিনি হলেন চীনের হুয়া উ গ্রামের একজন মিয়াও জাতি সূচিকর্মর অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারী। সাত বছর বয়সে তিনি মায়ের কাছ থেকে মিয়াও জাতির সূচিকর্ম শেখা শুরু করেন। এই পর্যন্ত ২০ বছরেরও বেশি সময় পার হয়েছে।

মিয়াও জাতির সূচিকর্ম হল মিয়াও জাতির লোক শিল্প। ইতিহাসে বলা হয়েছে, কয়েকশ’ বছর আগে, কয়েক ডজন মিয়াও জাতির মানুষ যুদ্ধ থেকে পালিয়ে গভীর পাহাড়ের হুয়া উ গ্রামে আশ্রয় নেয়। তারা এই প্রাচীন সূচিকর্মের কৌশল নিয়ে আসেন।
ইয়াং ওয়েন লি বলেন, মিয়াও জাতির সূচিকর্ম হল আমাদের পূর্বপুরুষের উত্তরাধিকার করা এক কৌশল। যা মিয়াও জাতির চমত্কার একটি কৌশল।

 

 শত বছর ধরে, ইয়াং ওয়েন লি’র পূর্বপুরুষরা এই পাহাড়ি এলাকায় চাষাবাদ করছেন, গান গেয়েছেন, নরম হাতে ইতিহাস অলঙ্কৃত করেছেন, জীবন সম্বন্ধে তাদের আশা বর্ণনা করেছেন। তবে, বাইরের সঙ্গে যোগাযোগের অসুবিধার কারণে বাইরের মানুষ মিয়াও জাতির সূচিকর্ম সম্বন্ধে খুব কমই জানে।

২০১৫ সালে চীন সরকার দারিদ্র্যবিমোচনের কার্যক্রম শুরু করে। গভীর পাহাড়ের ছোট ছোট গ্রাম হলেও সড়কপথ ও ইন্টারনেট চালু হয়েছে, পর্যটন শিল্প উন্নত হয়েছে। এর মাধ্যমে হুয়া উ গ্রামের মিয়াও জাতির সূচিকর্মও ধীরে ধীরে বিখ্যাত হয়ে উঠেছে।

২০১৯ সালে স্থানীয় সরকারের সাহায্যে, ইয়াং ওয়েন লি এবং স্বামী একটি বাটিক ও সূচিকর্মের কোম্পানি স্থাপন করেছে। সূচিকর্মের মাধ্যমে দারিদ্র্যবিমোচন কারখানা স্থাপন করা হয়েছে, মিয়াও জাতির সূচিকর্মের প্রশিক্ষণ ক্লাস চালু করা হয়েছে। এখন হুয়া উ গ্রামের পর্যটন শিল্প উন্নত হওয়ার সঙ্গে মিয়াও জাতির সূচিকর্ম সবার কাছে পরিচিত হয়ে উঠছে। ইয়াং ওয়েন লি’র কাছ থেকে এই কাজ শেখা তরুণ মানুষের সংখ্যা আরো বেশি হয়েছে।

 

ইয়াং ওয়েন লি বলেন, এটা এখানে রাখো, তারপর এ দিক দিয়ে পার হয়ে যাও। তোমাদের উচিত ভালোভাবে শেখা, ক্লাসে ভালোভাবে শোনা। তারপর তোমারা আরো ভালোভাবে তা জানতে পারবে। ভবিষ্যতে আরো বেশি মানুষ আমাদের মিয়াও জাতির সূচিকর্ম সম্বন্ধে জানতে পারবে।

২০২১ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং হুয়া উ গ্রাম পরিদর্শনের সময় বলেছিলেন, মিয়াও জাতির সূচিকর্ম একদিকে ঐতিহ্যবাহী, আরেকদিকে খুবই আধুনিক। যা শিল্প-সংস্কৃতির বিষয়। ভালোভাবে উন্নত করে মিয়াও জাতির সংস্কৃতি সমৃদ্ধ করা যাবে, সেই সঙ্গে দারিদ্র্যবিমোচন এবং গ্রামীণ পুনরুদ্ধারে অবদানও রাখা যাবে।

সি চিন পিং-এর কথা শুনে ইয়াং ওয়েন লি’র নতুন আইডিয়া  হয়। আগের চেয়ে আরো পরিশ্রম বাড়িয়ে দেন তিনি।

ঐতিহ্যিক মিয়াও জাতির সূচিকর্ম আরো ভালোভাবে আধুনিক বাজারের সঙ্গে সংযোগ করানোর জন্য তিনি অনলাইনে ডিজাইন শিখেন এবং স্থানীয় নারী কর্মীদের সঙ্গে কাজ করেন।

তিনি বলেন, আমরা ব্যাগ, পোশাক, অথবা দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত সব জিনিসে সূচিকর্ম করতে পারি। তবে কীভাবে তা সূচিকর্মের সঙ্গে সংযোগ করা যায় এবং সুন্দরভাবে তৈরি করা যায়, তা নিয়ে চিন্তা করতে হয়।

 

তিনি সাংবাদিককে জানান, এটা হল আমাদের কাগজ কাটা সূচিকর্ম। আমরা এটা বইয়ের প্রচ্ছদ এবং কাপড়েও প্রয়োগ করি। দেখুন, এটা হল একটি মা প্রজাপতি, দেখুন আমার হাতের নেকটাই, তা অন্য ধরনের কৌশল, ঠিক যেন তারার মত ঝিকমিক করছে!

এমন পদ্ধতিতে ইয়াং ওয়েন লি ঐতিহ্যিক মিয়াও জাতির সূচিকর্মের উত্তরাধিকারের নতুন পদ্ধতি উন্মোচন করেছেন। একদিকে আরো বেশি মানুষ মিয়াও জাতির সূচিকর্ম সম্পর্কে জানতে পারছে ও পছন্দ করছে, অন্যদিকে গ্রামের নারী কর্মীরা এতে ভালো আয় করতে পেরেছেন।

 

ইয়াং ওয়েন লি অনলাইনে লাইভস্ট্রিমিং-এর মাধ্যমে মিয়াও জাতির সূচিকর্মের পণ্যও বিক্রি করেন।

তিনি বলেন, আপনাদের সবাইকে লাইভে স্বাগত জানাই। এই চা-এর স্বাদ বেশ ভালো। দেখুন এটা হল আমাদের একটি চাবির ব্যাগ। এই সূচিকর্ম নারীর হাতের কাজ। এক দিনে এমন মাত্র দশটা তৈরি করা যায়।

চীনে বিভিন্ন জাতির ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি ভালোভাবে সংরক্ষিত হয়েছে। চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদের প্রকাশিত ১৫৫৭টি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারের তালিকায়, সংখ্যালঘু জাতির আইটেম ৩০ শতাংশের মত। দেশের তিন হাজারেরও বেশি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারীর মধ্যে সংখ্যালঘু জাতির প্রতিনিধির সংখ্যা ৮ শতাধিক।

বিভিন্ন জাতির সংস্কৃতি, যেন আকাশের তারার মতো! যা চীনের আকাশকে আরো সুন্দর করে তুলেছে।