মার্চ ২৪: গত ২০ থেকে ২২ মার্চ পর্যন্ত রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের আমন্ত্রণে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং রাশিয়ায় রাষ্ট্রীয় সফর করেছেন। সফর শেষে চীনের রাষ্ট্রীয় কাউন্সিলর এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিন কাং এ সফরের অবস্থা সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন।
চীনের দুই অধিবেশনের সফল সমাপ্তির ঠিক পরেই প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং রাশিয়া সফরে যান। যা এ বছর চীনা রাষ্ট্রপ্রধানের কূটনীতির একটি নতুন দুয়ার খুলে দিয়েছে। এ সফরের সময়টি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ, পটভূমি বেশ জটিল হলেও এ সফর ফলপ্রসূ হয়েছে। সি চিন পিং-কেন্দ্রিক চীনের কমিউনিস্ট পার্টি বা সিপিসি’র কেন্দ্রীয় কমিটি দেশীয় উন্নয়ন এবং কূটনৈতিক কৌশলের সামগ্রিক পরিস্থিতির উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আন্তর্জাতিক জনমত মনে করে যে, প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের এবারের সফর বিশ্ব ভূ-রাজনীতিতে একটি সুদূরপ্রসারী ঘটনা। এতে শান্তি নির্মাণকারী হিসেবে চীনের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি, বড় রাষ্ট্র হিসেবে চীনের ভূমিকা ও দায়িত্ববোধ প্রদর্শিত হয়েছে, যা জটিল আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিতে আরও বেশি স্থিতিশীলতা প্রদান করবে এবং বিশ্বের বহু-মেরুকরণ এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের গণতন্ত্রায়নে সহায়ক হবে।
সফর উপলক্ষ্যে প্রেসিডেন্ট সি এবং প্রেসিডেন্ট পুতিন পৃথকভাবে স্বাক্ষরযুক্ত প্রবন্ধ প্রকাশ করেছেন এবং সর্বসম্মতিক্রমে চীন-রাশিয়া কৌশলগত সহযোগিতা আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার প্রধান শক্তি হিসেবে উল্লেখ করেছেন। সফরকালে তারা সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে দীর্ঘমেয়াদি ও গভীর যোগাযোগ করেছেন। প্রেসিডেন্ট সি জোর দিয়ে বলেছেন, চীন স্বাধীন ও স্বতন্ত্র শান্তিপূর্ণ কূটনৈতিক নীতিমালা অনুসরণ করে। নিজ দেশের বাস্তব অবস্থার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ পথে চলার অধিকার প্রত্যেক দেশেরই আছে। বিভক্তির পরিবর্তে একতা, অশান্তির পরিবর্তে শান্তিপূর্ণ বিশ্ব মানবজাতির সাধারণ স্বার্থের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। আন্তর্জাতিক সমাজের প্রত্যাশা পূরণ করে এবং মানবজাতির অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটি গঠন করতে চীন ও রাশিয়ার একসঙ্গে কাজ করা উচিত্। উভয় পক্ষ চীন-রাশিয়া সম্পর্ককে একটি বিস্তৃত এবং দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিকোণ থেকে দেখবে, জাতিসংঘ-কেন্দ্রিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা দৃঢ়ভাবে রক্ষা করবে এবং প্রকৃত বহুপক্ষবাদ অনুসরণ করবে।
১০ বছর পর প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং আবারও রাশিয়াকে তার নতুন মেয়াদের প্রথম গন্তব্যস্থান হিসাবে বেছে নিয়েছেন। এটি কোনও আকস্মিক ব্যাপার নয়। গভীর বিবেচনার পর নেওয়া একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত এটি। আজ পর্যন্ত চীন-রাশিয়া সম্পর্ক বিকাশের গভীর ঐতিহাসিক কারণ রয়েছে। চীন ও রাশিয়া একে অপরের বৃহত্তম প্রতিবেশী। চীন-রাশিয়ার সম্পর্ক জোটনিরপেক্ষতা, সংঘাতমুক্ত এবং তৃতীয় পক্ষকে লক্ষ্য না-করার নীতি মেনে চলে। দেশ দুটি পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং পারস্পরিক বিশ্বাস মেনে চলে, যা তাদের নিজ উন্নয়ন এবং পুনরুজ্জীবনকে উৎসাহিত করে। পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক ন্যায্যতা এবং ন্যায়বিচার বজায় রাখারও চেষ্টা করে। দুই দেশ প্রধান-দেশ সম্পর্কের একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। গত দশ বছরে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং এবং প্রেসিডেন্ট পুতিন ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বজায় রেখেছেন এবং একে অপরকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করেছেন। এবারের সফরে সি বলেন, আগামী বছর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। প্রেসিডেন্ট পুতিনের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে রাশিয়ার উন্নয়ন ও পুনরুজ্জীবনে ব্যাপক অগ্রগতি অর্জন করেছে। রুশ জনগণ প্রেসিডেন্ট পুতিনকে দৃঢ় সমর্থন দেবেন বলে আশা করেন সি চিন পিং। দুই রাষ্ট্রপ্রধানের মধ্যে উচ্চ স্তরের পারস্পরিক আস্থা নতুন যুগে চীন-রাশিয়ার সার্বিক কৌশলগত অংশীদারিত্বের জন্য কৌশলগত দিকনির্দেশনা এবং শক্তিশালী রাজনৈতিক নিশ্চয়তা দিয়েছে।
সফরকালে দুই প্রেসিডেন্ট যৌথভাবে ‘নতুন যুগে চীন ও রাশিয়ার সার্বিক কৌশলগত সহযোগিতার অংশীদারি সম্পর্ক গভীরতর করা বিষয়ক একটি যৌথ বিবৃতি’ এবং ‘২০৩০ সালের আগে চীন ও রাশিয়ার অর্থনৈতিক সহযোগিতার গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলোর উন্নয়নের পরিকল্পনা বিষয়ক যৌথ বিবৃতি’ স্বাক্ষর করেছেন। এতে পরবর্তীতে দু’দেশের সম্পর্কের উন্নয়ন এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা নিয়ে পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে।
দু’পক্ষ একে অপরের কেন্দ্রীয় স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট ইস্যুতে একে অপরকে সমর্থন করে এবং নিজ নিজ অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে বহিরাগত শক্তির হস্তক্ষেপকে যৌথভাবে প্রতিহত করার কথা পূনর্ব্যক্ত করেছে।
বলা যায়, প্রেসিডেন্ট সি’র এবারের রাশিয়ার সফর হলো ঐতিহাসিক মৈত্রী, সহযোগিতা ও শান্তির যাত্রা এবং প্রেসিডেন্ট সি’র কূটনৈতিক চিন্তাধারার আরেকবার সফল অনুশীলন।
লিলি/তৌহিদ/শিশির