বছরে ১১০০ কোটি ফুল বিক্রি হয় এশিয়ার ফুলের রাজধানীতে
2023-03-24 18:15:20

প্রতিটি ফুলের পিছনে একটি অভিন্ন গল্প রয়েছে। এরা উষ্ণ, মিষ্টি, রোমান্টিক ও সুখী। সব ফুলই একই জায়গা থেকে আসে। সে জায়গার নাম তৌ নান। নিখিল চীনের প্রতিটি ১০টি ফুলের মধ্যে ৭টি এ স্থান থেকে আনা হয়। শুধু চীনে নয়, বরং এশিয়ার ফুলের রাজধানী হিসেবে এখানকার ফুল জাপান, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনামসহ ৪০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলে বিক্রি করা হয়।

 

তৌ নান ফুল বাজার চীনের ইয়ুন নান প্রদেশের খুন মিং শহরের তিয়ান হ্রদের পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত। এটি এশিয়ার বৃহত্তম ফুলের বাজার। ২০২২ সালে তৌ নান ফুলের বাজারে ফুল লেনদেনের পরিমাণ ১১০০ কোটি ছাড়িয়েছিল। বাণিজ্য মূল্য ১২১০ কোটি ইউয়ানের বেশি ছিল। রঙিন ফুলের মধ্য দিয়ে এশিয়ার ফুলের রাজধানীর বিস্ময় লেখা হয় এবং একজনের পর একজনের সমৃদ্ধ হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়েছে।

 

ঊনষাট বছর বয়সী ওয়াং সিউ হুয়া তৌ নান বাজারের সর্বপূর্বের ফুল চাষিদের একজন। তিনি আমাদের সাংবাদিককে তৌ নান বাজারের ফুলের গল্প শুনিয়েছেন। গত শতাব্দীর ৭০-এর দশকে স্থানীয়  গ্রামবাসীরা সুষ্ঠু পরিবেশে ব্যাপকভাবে শাকসবজি চাষ করতে শুরু করেন। ১৯৮৩ সালে একজন গ্রামবাসী বাইরে থেকে গ্ল্যাডিওলাস নিয়ে নিজের কৃষিক্ষেতে পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করেন। তা থেকে তুলনামূলক ভালো উপার্জন হয়। যার ফলে স্থানীয় গ্রামবাসীরা ফুল চাষ করতে শুরু করেন।

 

ওয়াং সিউ হুয়া বলেন, “আমার পরিবার ১৯৮৭ সাল থেকে ফুল চাষ করে আসছে। প্রথম দিকে ছোট একটি কৃষিক্ষেতে পরীক্ষামূলকভাবে ফুল চাষ করা হতো। এর আয়তন ২০০ বর্গমিটার হতে পারে। প্রথম কিস্তি গ্ল্যাডিওলাস তোলার পর তিনি অন্য গ্রামবাসীর মতো সাইকেলে চড়ে ফুলটি বিক্রি করতে যেতেন। একটি ফুল তখন ০.২ থেকে ০.৩ ইউয়ান দামে বিক্রি হয়। এখন এ দাম অনেক সস্তা মনে হবে। তবে সে সময় এক কেজি শাকসবজি মাত্র এ দামের ১০ ভাগের একভাগে বিক্রি হতো।

 

উপার্জন বেড়ে যাওয়ার পর ওয়াং সিউ হুয়া অব্যাহতভাবে চাষের আয়তন বাড়ান। ধীরে ধীরে তিনি গ্রামে ফুলের বড় চাষিতে পরিণত হন। ১৯৯২ সালে নিজের চাষ করা ফুল বাজারের চাহিদা মেটানো না হপেরে ওয়াং সিউ হুয়া এজেন্ট হিসেবে কাজ করতে শুরু করেন। তিনি গ্রামবাসীদের ফুল দামে ক্রয় করে বাজারে বিক্রি করেন। ২০১৩ সালে তিনি আবার ফুল নিয়ে লজিস্টিক ব্যবসা শুরু করেন। ওয়াং সিউ হুয়া’র সমৃ

দ্ধ হওয়ার গল্প তৌ আন অঞ্চলে ফুলের কারণে সমৃদ্ধ হওয়া অনেকের গল্পের অন্যতম একটি।

 

জানা গেছে, তৌ নান ফুল বাজারের পার্শ্ববর্তী ৩ কিলোমিটার আওতায় ৭০ হাজার মানুষ ফুল সংক্রান্ত কাজে লিপ্ত রয়েছে। বি ছিয়ান ছিয়ান তৌ নান অঞ্চলের অধিবাসী। ২০২০ সালের বসন্ত উৎসবের সময় তার পরিবারের চাষ করা ফুল বিক্রিতে সমস্যা দেখা দেয়। তাই তিনি লাইভস্ট্রিমের মাধ্যমে ফুল বিক্রি শুরু করেন। গত ৩ বছর ধরে বি ছিয়ান ছিয়ান ৬০০টিরও বেশি লাইভ করেছেন। পেশাগত ব্যাখ্যা, সহজসরল চরিত্র এবং ফুলের গুণের কারণে তার অনেক ফলোয়ার আছেন। তিনি বলেন, “আমি এক সময় এক ঘণ্টার মধ্যে ২ লাখ ফুল বিক্রির রেকর্ড সৃষ্টি করেছি।”

 

শুধু জনপ্রিয় উপস্থাপক হিসেবে নতুন রূপ নিয়েছেন তা নয়, বি ছিয়ান ছিয়ান অনেক গ্রামবাসীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ দিয়েছেন। বর্তমানে তার ফুল ঘাঁটিতে বার্ষিক ৩০০০ জন কর্মী থাকে। প্রতিবছর তাদের ৩ লাখ ইউয়ান বেতন দেওয়া হয়। আরেকজন তরুণ চাও ইয়োং নেং দীর্ঘদিন ধরে তৌ নান অঞ্চলে পরিশ্রম করেন। ২০১৭ সালে তিনি হুয়া ই পাও নামক ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম প্রতিষ্ঠা করেন। সে প্ল্যাটফর্মে গ্যারান্টিযুক্ত লেনদেনের জন্য ফুল ব্যবসায়ী এবং ফুল চাষিদের যুক্ত করা হয়। বর্তমানে প্ল্যাটফর্মে নিবন্ধিত ফুল চাষি ও সমবায়ের সংখ্যা ৩৭০০টিরও বেশি। ক্রেতার সংখ্যা ৩.৫ লাখেরও বেশি। এ প্ল্যাটফর্ম চালু হওয়ার পর এ পর্যন্ত ফুল লেনদেনের পরিমাণ ১৩০ কোটি ছাড়িয়েছে, যার মূল্য ১২০ কোটি ইউয়ান।

 

সক্রিয় লেনদেনের কারণে তৌ নান ফুল বাজার প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে। উদ্ভাবন এ বাজারের প্রাণশক্তির চাবিকাঠি। বসন্তের ধ্বনিতে তৌ নান ফুল বাজার ফুলের মতোই বর্ণাঢ্য হয় উঠবে।(রুবি/এনাম)