করোনাভাইরাসের সাম্প্রতিক মহামারিটি শত বছরে বিশ্বে সংঘটিত সবচেয়ে গুরুতর সংক্রমণ রোগ হিসেবে বলা যায়।
তিন বছর আগে চীনে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হয়। এখন আমরা এই তিন বছর কঠোর লড়াইয়ের দিকে ফিরে তাকাই। ১৪০ কোটিরও বেশি চীনা মানুষ যৌথভাবে মহামারি প্রতিরোধে চেষ্টা করেছে। এতে সর্বাত্মক মাত্রায় জনগণের প্রাণের নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। এ সময় দেশের অর্থনীতি ও সমাজ উন্নয়নে মহামারির প্রভাব সবচেয়ে কম রাখা হয়েছে।
এক হাজারেরও বেশি দিন রাত, যা সত্যি অনেক কঠিন সময়, কিন্তু আমরা সেই ছায়া থেকে বের হয়েছি।
২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি সকালে, নতুন বছরের প্রথম দিনে নতুন আশা দেখা দেয়। চীনের হারবিন শহরের একটি হাসপাতালে এক জোড়া যমজ বোন নিরাপদে জন্মগ্রহণ করে। তাদের মা ছিলেন করোনা রোগী। মায়ের ও মেয়েদের নিরাপত্তায় তাঁর থাকার কমিউনিটি থেকে হাসপাতাল পর্যন্ত, সবাই যৌথভাবে চেষ্টা করে। এতে ওই পরিবারের নিরাপদ জীবন নিশ্চিত করা হয়েছে।
২০২৩ সালের নববর্ষের শুভেচ্ছা বাণীতে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বলেছিলেন, করোনাভাইরাসের মহামারি শুরু হলে আমরা সবাই জনগণকে শীর্ষস্থানে রাখা এবং মানুষের প্রাণকে শীর্ষস্থানে রাখার চেতনায় অভূতপূর্ব কঠিনতা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছি। এজন্য সবাই অনেক চেষ্টা করেছে।
সময় ফিরে যায় তিন বছর আগে, ২০২০ সালের ২৫ জানুয়ারি, ওইদিন চীনের চান্দ্রপঞ্জিকার নতুন বছরের প্রথম দিন। বেইজিংয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং মহামারির খবর শুনে সারা রাত ঘুমাতে পারেন নি। মহামারি প্রতিরোধের লড়াইয়ে বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ইচ্ছা রয়েছে। চীনের একটি স্পষ্ট নীতি হলো, জনগণের প্রাণের নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্য রক্ষায় যে কোনো ধরনের ত্যাগ স্বীকার করা।
মহামারি প্রতিরোধের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে, ২০২০ সালের ১০ মার্চ, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং উ হান শহরে গিয়ে জনগণের খোঁজ খবর নেন। তিনি সবাইকে বলেন, সরকারের নেওয়া সব ব্যবস্থার মূল্য উদ্দেশ্য হল জনগণের সংক্রমিত হওয়া প্রতিরোধ করা এবং সর্বাত্মক মাত্রায় আরো বেশি রোগীর প্রাণ উদ্ধার করা।
যেমন, উহান যেখানে চীনে সবার আগে করোনাভাইরাসের মহামারি সংক্রমণ ঘটে। সেখানে মহামারি প্রতিরোধে সাড়ে ৪২ হাজারের বেশি চিকিত্সক দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে উহানে যান। ৮০ লাখেরও বেশি প্রতিরোধক পোশাক, ৭০ হাজারেরও বেশি চিকিত্সার যন্ত্র, প্রথম দফায় উহানে পাঠানো হয়। শহরের ১৬টি স্টেডিয়াম ও প্রদর্শনী কেন্দ্রকে জরুরি-ভিত্তিতে অস্থায়ী হাসপাতালে রূপান্তর করা হয়। একজন গুরুতর রোগীর চিকিত্সা এবং উদ্ধারে দশ-বারো জন চিকিত্সক সেবা দেন। দেশের প্রথম শ্রেণীর বিশেষজ্ঞরাও এতে অংশ নিয়েছেন। মাত্র ৩০ ঘণ্টার শিশু থেকে শত বছরের বৃদ্ধা পর্যন্ত, কোনো একজনকেও বাদ দেয়া হয় নি। কোনো একজনের প্রাণকেও কম গুরুত্ব দেওয়া হয় নি।
২০২১ সাল। ডেল্টা উপ-ধরনের ভাইরাসের সৃষ্ট মহামারির নতুন ঢেউ চীনের ২০টিরও বেশি প্রদেশে ছড়িয়ে পড়ে। চীন দ্রুত পরীক্ষা করা, দ্রুত রোগী চিহ্নিত করা, ঝুঁকি মোকাবিলা করা এবং রোগীকে ভালোভাবে বিন্যাস ও চিকিত্সা দেওয়ার মাধ্যমে মহামারি মোকাবিলা ও নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
বিদেশি তথ্যমাধ্যম এভাবে মূল্যায়ন করে: চীন হল বিশ্বে ডেল্টা করোনাভাইরাসের মহামারির সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে সক্ষম একমাত্র দেশ।
মহামারি প্রতিরোধে চীন সরকার কখনই ব্যয়ের কথা চিন্তা করে নি।
করোনাভাইরাসের রোগী চিকিত্সা করার ফি চীন সরকার বহন করে। টিকা ও টেস্ট কিটসহ বিভিন্ন ওষুধ গবেষণায় সরকার অর্থ বরাদ্দ দেয়। জনগণের টিকা গ্রহণের ফি সরকার বহন করে, করোনাভাইরাস চিকিত্সার বিভিন্ন ওষুধ দেশের চিকিত্সা বীমায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যাতে লোকজন কম খরচে ওষুধ কিনতে পারে।
বর্তমানে চীনে করোনাভাইরাসের টিকা গ্রহণের হার ৯০ শতাংশেরও বেশি। চীনে কমিউনিটি হাসপাতালের সংখ্যা ২৬০০টিরও বেশি, গ্রামের চিকিত্সা কক্ষ ৬ লাখেরও বেশি। তৃণমূল পর্যায়ের চিকিত্সা সংস্থার সংখ্যা দশ লাখের মত।
২০২৩ সালের ১৭ জানুয়ারি, চীন ২০২২ সালের অর্থনৈতিক সূচক প্রকাশ করে। মহামারির প্রাদুর্ভাব হলেও চীনের জিডিপি’র পরিমাণ ১২০ ট্রিলিয়ন ইউয়ান ছাড়িয়ে যায়, যা আগের বছরের চেয়ে ৩ শতাংশ বেশি। অর্থনীতি ও সমাজের স্থিতিশীল উন্নয়ন নিশ্চিত হয়েছে।
মহামারির ছায়া থেকে বের হয়ে চীন আরো প্রাণচঞ্চল হয়ে উঠছে। শুধু নিজ দেশের মহামারি প্রতিরোধ এবং অর্থনীতি উন্নয়নই নয়, চীন মহামারি প্রতিরোধে সক্রিয়ভাবে আন্তর্জাতিক সমাজকে সহযোগিতাও করেছে।
মহামারি শুরু হলে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং জোর দিয়ে বলেছিলেন যে, মানবজাতি একটি অভিন্ন ভাগ্যের কমিউনিটি। তিনি মানবস্বাস্থ্যের অভিন্ন ভাগ্যের কমিউনিটি গড়ে তোলার গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ উত্থাপন করেন।
এশিয়া থেকে আফ্রিকা, ইউরোপ থেকে লাতিন আমেরিকা পর্যন্ত দফায় দফায় করোনাভাইরাসের টিকা চীন থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাঠানো হয়। এ পর্যন্ত চীন ১২০টিরও বেশি দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাকে ২.২ বিলিয়ন ডোজ টিকা দিয়েছে।
বিশ্বের ১৫৩টি দেশ ও ১৫টি আন্তর্জাতিক সংস্থাকে মহামারি প্রতিরোধক সামগ্রী দিয়েছে, ৩৪টি দেশে চিকিত্সক দল পাঠিয়েছে, ১৮০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চল, ১০টিরও বেশি আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে মহামারি প্রতিরোধের বিষয়ে ৩ শতাধিক আলোচনাসভা আয়োজন করেছে। যা নয়া চীন প্রতিষ্ঠার পর চীনের বৃহত্তম আকারের আন্তর্জাতিক জরুরি মানবিক কার্যক্রম। যা পুরোপুরিভাবে চীনের দায়িত্ব ও শক্তির প্রতিফলন।
এই এক হাজারেরও বেশি দিন মানব ইতিহাসের দীর্ঘ নদীর খুবই অল্প সময়! তবে, তা আমরা কখনোই ভুলতে পারবো না। আশা করি, মানবজাতির ভবিষ্যত আরো সুন্দর হয়ে উঠবে।