মার্চ ২৩: গত ২০ থেকে ২৩ মার্চ পর্যন্ত চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের আমন্ত্রণে সেদেশ সফর করেছেন। আন্তর্জাতিক জনমত মনে করে যে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের এবারের সফর বিশ্ব ভূরাজনীতিতে একটি সুদূরপ্রসারী ঘটনা। এতে শান্তির নির্মাণকারী হিসেবে চীনের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি, বড় রাষ্ট্র হিসেবে চীনের ভূমিকা ও দায়িত্ববোধ প্রদর্শিত হয়েছে, যা জটিল আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিতে আরও বেশি স্থিতিশীলতা প্রদান করবে এবং বিশ্বের বহু-মেরুকরণ এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের গণতন্ত্রায়নে সহায়ক হবে।
গত দশ বছরে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং এবং প্রেসিডেন্ট পুতিন ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বজায় রেখেছেন এবং একে অপরকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করেছেন। দুই রাষ্ট্রপ্রধানের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের পারস্পরিক আস্থা নতুন যুগে চীন-রাশিয়ার সার্বিক কৌশলগত অংশীদারিত্বের সম্পর্কের জন্য কৌশলগত দিকনির্দেশনা এবং শক্তিশালী রাজনৈতিক নিশ্চয়তা প্রদান করেছে। নতুন পরিস্থিতিতে চীন ও রাশিয়া সার্বিক কৌশলগত অংশীদারিত্বের সম্পর্ককে উন্নত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যা শুধুমাত্র দুই দেশের জনগণেরই উপকার করবে না, বরং মানবজাতির উন্নয়ন ও অগ্রগতিতেও নতুন অবদান রাখবে।
সফরকালে দুই প্রেসিডেন্ট যৌথভাবে ‘নতুন যুগে চীন ও রাশিয়ার সার্বিক কৌশলগত সহযোগিতার অংশীদারিত্বের সম্পর্ক গভীরতর করা বিষয়ক একটি যৌথ বিবৃতি’ এবং ‘২০৩০ সালের আগে চীন ও রাশিয়ার অর্থনৈতিক সহযোগিতার গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলোর উন্নয়নের পরিকল্পনা বিষয়ক যৌথ বিবৃতি’ স্বাক্ষর করেছেন। এতে পরবর্তীতে দু’দেশের সম্পর্কের উন্নয়ন এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রের সহযোগিতা নিয়ে পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়।
দু’পক্ষ একে অপরের কেন্দ্রীয় স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট ইস্যুতে একে অপরকে সমর্থন এবং নিজ নিজ অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে বহিরাগত শক্তির হস্তক্ষেপকে যৌথভাবে প্রতিহত করার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে।
দু’পক্ষের মধ্যে বড় আকারের বৈঠককালে আবারও চীনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে সর্বসম্মতভাবে পুনর্নির্বাচিত হয়ে নতুন সরকার গঠন উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট সি’কে উষ্ণ অভিনন্দন জানিয়েছেন পুতিন।
তিনি বলেন,
‘তাইওয়ান, হংকং ও সিনচিয়াংসহ নানা বিষয়ে নিজের স্বার্থ সুরক্ষা করতে চীনকে দৃঢ় সমর্থন করে রাশিয়া। বেইজিংয়ে সৌদি আরব ও ইরানের সংলাপে ঐতিহাসিক সাফল্য অর্জনের জন্য চীনকে অভিনন্দন জানিয়েছে রাশিয়া। বিশ্বের বড় রাষ্ট্র হিসেবে চীনের গুরুত্বপূর্ণ মর্যাদা ও সক্রিয় প্রভাবের প্রতিফলন এটি। আন্তর্জাতিক বিষয়ে বস্তুনিষ্ঠ ও ন্যায়সঙ্গত অবস্থানের কারণে চীনের প্রশংসা করেছে রাশিয়া। চীনের উত্থাপিত বিশ্ব নিরাপত্তা প্রস্তাব, বিশ্ব উন্নয়ন প্রস্তাব ও বিশ্ব সভ্যতা প্রস্তাবকে সমর্থন করে মস্কো। চীনের সঙ্গে আন্তর্জাতিক বিষয়ে সহযোগিতা ঘনিষ্ঠতর করতে ইচ্ছুক রাশিয়া।’
সফরকালে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ইউক্রেন সংকট নিয়ে প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে অকপট ও গভীর মতবিনিময় করেছেন। প্রেসিডেন্ট সি বলেন, ইতিহাস থেকে জানা গেছে, সংলাপ এবং আলোচনার মাধ্যমে সর্বদা বিরোধের সমাধান করা হয়েছে। সব পক্ষ একটি সাধারণ, ব্যাপক, সহযোগিতামূলক এবং টেকসই নিরাপত্তা ধারণা পোষণ করলে এবং সমান, যুক্তিপূর্ণ এবং বাস্তবসম্মত আলোচনা ও পরামর্শ করলে অবশ্যই ইউক্রেন সংকটের একটি যুক্তিসঙ্গত সমাধান খুঁজে পাওয়া যাবে।
তিনি আরও বলেন,
‘গত মাসে চীন ‘ইউক্রেন সংকটের রাজনৈতিক সমাধানে চীনের অবস্থান’ শীর্ষক দলিলপত্র প্রকাশ করেছে। ইউক্রেনের সংকটের বিষয়ে চীন সর্বদা জাতিসংঘ সনদের উদ্দেশ্য ও নীতিমালা অনুসরণ করছে, একটি বস্তুনিষ্ঠ এবং ন্যায্য অবস্থানকে সমর্থন করছে, সক্রিয়ভাবে শান্তি আলোচনার প্রচার করছে, বিষয়টির যোগ্যতার ভিত্তিতে নিজের অবস্থান নির্ধারণ করছে এবং সর্বদা দৃঢ়ভাবে শান্তি ও সংলাপের পাশে দাঁড়িয়েছে।’
রাশিয়া যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শান্তিপূর্ণ আলোচনা পুনরায় শুরু করার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে এবং রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক পদ্ধতিতে ইউক্রেন সংকটের সমাধানে সক্রিয় ভূমিকা রাখায় চীনকে স্বাগত জানায় মস্কো।
লিলি/এনাম/রুবি