আকাশ ছুঁতে চাই ১০
2023-03-23 20:29:38

১. নারীদের ঐক্যবদ্ধ করতে চান ডেপুটি লি চিচুয়ান

২. চীনের শীর্ষ দশ ব্যবসায়ী নারী

৩. একটি পোশাক কারখানা স্বাবলম্বী করেছে নারীদের

নারী ও শিশু বিষয়ক অনুষ্ঠান আকাশ ছুঁতে চাই থেকে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা কথা বলি নারীর অগ্রযাত্রা, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ, সাফল্য, সংকট সম্ভাবনা নিয়ে। আমরা কথা বলি সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষের অধিকার নিয়ে।

নারীদের ঐক্যবদ্ধ করতে চান ডেপুটি লি চিচুয়ান

অনুষ্ঠানের শুরুতেই শুনবো এমন একজন জনপ্রতিনিধির কথা যিনি তার এলাকার নারীদের ঐক্যবদ্ধ করে দেশগঠনে ভূমিকা রাখছেন। আমার তৈরি একটি প্রতিবেদনে শুনবেন জনপ্রতিনিধি নারী লি চিচুয়ানের কথা। 

প্যাকেজ

 

চীনের ১৪তম ন্যাশনাল পিপলস  কংগ্রেসে যত জনপ্রতিনিধি যোগ দিয়েছেন তাদের মধ্যে ৪৯৭ ডেপুটি বা জনপ্রতিনিধি এসেছেন একেবারের তৃণমূলে কর্মরত শ্রমিক ও কৃষক ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে। সমস্ত জনপ্রতিনিধিদের ১৬.৭ শতাংশই  এই ব্যাকগ্রাউন্ডের। এদের মধ্যে অনেক নারীও আছেন। এমনি একজন নারী ডেপুটি লি চিচুয়ান। তিনি এসেছেন দক্ষিণ পশ্চিম চীনের ইউননান প্রদেশ থেকে। একটি পশুপালন খামারের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি।  গ্রামীণ মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে তিনি যোগ দেন কংগ্রেসে। 

 

চায়না মিডিয়া গ্রুপের অন্যতম প্রতিষ্ঠান সিজিটিএন এ সাক্ষাৎকার দেন তিনি। বলেন, তৃণমূল পর্যায় থেকে আসা একজন নারী ডেপুটি হিসেবে তিনি চান তার এলাকার নারীদের ঐক্যবদ্ধ করতে। 

লি চিচুয়ান বলেন, ‘আমি নারীদেরকে তাদের গতানুগতিক গণ্ডিবদ্ধ জীবন থেকে বেরিয়ে পেশাগত ক্ষেত্রে আরও এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানাই।’

তিনি মনে করেন হাউজ ওয়াইফ বা গৃহবধূর যে সনাতন ভূমিকা নারীর রয়েছে তা থেকে বেরিয়ে অর্থনীতি ও সমাজ উন্নয়নে তাকে ভূমিকা রাখতে হবে। 

লি তুলে ধরেন তার এলাকার জীবনমান উন্নয়নের চিত্র। আগে যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল বেশ সমস্যাযুক্ত। দুর্গম এলাকাগুলোতে যাওয়াই যেত না। এখন পরিবহন ব্যবস্থা অনেক উন্নত হয়েছে। গ্রামীণ জনগোষ্ঠী তাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারে পৌঁছাতে পারছেন সহজে। ২০১৩ সালের আগে গ্রামের বেশিরভাগ দরিদ্র মানুষ টালির ছাদ দেয়া কুঁড়েঘরে বাস করতেন।  ঘরে হাঁস মুরগি গবাদি পশু থাকতো। তারই উপরে মাচা বেঁধে থাকতো কৃষক ও পশুপালক পরিবার। তিনি নিজেও এমনি একটি পরিবারেই বড় হয়েছেন। এখন কিন্তু অবস্থা অনেকটাই অন্যরকম। এখন গ্রামের ছোট ছোট ভিলা বা বাড়িতে কৃষক ও পশুপালকরা বাস করেন। স্যানিটারি টয়লেট আছে প্রতিটি বাড়িতে। গ্রামের এই ছোট ছোট বাড়িগুলো বেশ সুন্দর ও আরামদায়ক। 

মানুষের জীবনমান ও খাদ্য পুষ্টিতেও অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে। 

কংগ্রেসে যোগ দেয়ার আগে লি বাড়ি বাড়ি ঘুরে মানুষের মতামত সংগ্রহ করেছেন। কংগ্রেসে এই নারী হয়ে উঠেছেন তার এলাকার মানুষের কণ্ঠস্বর।


চীনের শীর্ষ দশ ব্যবসায়ী নারী 


চীনের নারীরা উদ্যোক্তা হিসেবে দেশ গঠনে অনেক বড় ভূমিকা রাখছেন। চীনের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের মধ্যে অনেকেই নারী। চলুন শোনা যাক তাদের কথা।  

অতীতে এমন একটি ধারণা ছিল যে নারীরা ব্যবসা বোঝেন না। কিন্তু সেসব ধারণা অনেক আগেই ভুল প্রমাণিত হয়েছে। বিশ্বের অনেক বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান শক্ত হাতে চালাচ্ছেন নারীরা। চীনের ছোট বড় অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেরই প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী নারী। ফোর্বস চায়না সম্প্রতি চীনের সেরা ব্যবসায়ী নারীদের একটি তালিকা দিয়েছে। চলুন দেখা যাক, চীনের সেরা ব্যবসায়ী নারী কারা। 

তালিকার শীর্ষস্থানে আছেন ওয়াং লাইচুন। তিনি লাক্সশেয়ার প্রিসিশন প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা এবং চেয়ারওম্যান। এই প্রতিষ্ঠান ইলেকট্রনিক কমপোনেন্ট তৈরি করে। দ্বিতীয় স্থানে আছেন ডং মিংচু। তিনি গ্রি ইলেকট্রিক অ্যাপলায়েন্স প্রতিষ্ঠানের চেয়ার ওম্যান। তৃতীয় স্থানে আছেন চাও নিং। তিনি উসিঅ্যাপ টেক কোম্পানি লিমিটেডের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং সহপ্রতিষ্ঠাতা। চতুর্থস্থানে আছেন মংওয়ানচৌ। তিনি হুয়াওয়েই কোম্পানির ডেপুটি চেয়ারওম্যান এবং সিএফও। বর্তমানে তিনি হুয়াওয়েইর রোটেটিং চেয়ারওম্যান। পঞ্চমস্থানে আছেন টিকটকের সিইও চাং নান। 

ষষ্ঠ হলেন দাই শান। তিনি আলিবাবা গ্রুপ হোল্ডিং লিমিটেডের হোলসেল মার্কেটপ্লেসের প্রেসিডেন্ট। সপ্তম স্থানে আছেন ছাং সুয়ে। তিনি ফোশান হাইথিয়ান ফ্লেভারিং অ্যান্ড ফুড কোম্পানি লিমিটেডের ভাইস চেয়ারওম্যান। অষ্টমস্থানে আছেন চিয়ান চুন। তিনি আইমেইক টেকনোলোজি ডেভেলপমেন্ট প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা এবং চেয়ারওম্যান। নবম স্থানে আছেন ছাও সিয়াওচুন। তিনি হাংচৌ টাইগারমেড কনসালটিং কোম্পানি লিমিটেডের সহ প্রতিষ্ঠাতা এওবং প্রেসিডেন্ট। দশম স্থানে আছেন চাও ইয়ান। তিনি হুয়াসি ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট গ্রুপের চেয়ারওম্যান এবং প্রেসিডেন্ট।

একটি পোশাক কারখানা স্বাবলম্বী করেছে নারীদের

একটি পোশাক তৈরির কারখানা পালটে দিয়েছে উত্তর পশ্চিম চীনের নিংসিয়া হুই স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের গ্রামীণ এলাকার দৃশ্যপট।এই এলাকার  গৃহিনী নারীরা এখন  পোশাক কারখানার শ্রমিক। পরিবার সামলিয়ে কারখানার কাজ তাদের একদিকে করেছে স্বচ্ছল অন্যদিকে করেছে স্বনির্ভর। আরও বিস্তারিত জেনে আসি আফরিন মিমের প্রতিবেদনে।

 

পোশাক কারখানা। সেলাই মেশিনে অন্তর্বাস সেলাই করছেন প্রায় ৩০ জন নারী। এই আত্মপ্রত্যয়ী নারীদের ঘরের বাইরে  পোশাক কারখানায় কাজ করার শুরু খুব বেশিদিন আগের নয়। 

কয়েক বছর আগেও এই নারীদের পরিচয় ছিল গৃহিনী। পরিবারের দেখভাল করেই সময় কেটে যেতো তাদের। কিন্তু চার বছর আগের শুরু করা একটি পোশাক কারখানা পালটে দিয়েছে তাদের পরিচয়। নারীদের এই কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে  উত্তর-পশ্চিম চীনের নিংশিয়া হুই স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের হেলান কাউন্টির চিনরং গ্রামে।

২০১৯ সালে হংকংয়ের বাসিন্দা  বেনি সো  তার ম্যাকাও-ভিত্তিক কোম্পানির উৎপাদন লাইনের কিছু অংশ হিসেবে শুরু করে এই পোশাক কারখানা। 

জানা যায় এই পোশাক কারখানার মাধ্যমে আয় বেড়েছে গ্রামীন নারীদের। একসময় যাদের কোন আয় ছিল না, তারাই এখন আয় করছে ৫ থেকে ৬ হাজার ইউয়ান।  

নিংশিয়ায় অবস্থিত এই কারখানায় কাজ করছে প্রায় শতাধিক শ্রমিক।  আর যাদের মধ্যে বেশির ভাগই নারী। আর কারখানার এসব নারী শ্রমিকরা পরিবার ও কারখানা সামলাচ্ছে সমানতালে বলছেন প্রথম থেকেই কারখানায় কাজ করা করা চাং খাই খাই ।  তিনি বলেন, "এই চাকরি পাওয়ার পর স্বামীর থেকে কোন টাকা নিতে হয় না। বাড়ির কাছে হওয়ায় আমি পরিবারের যত্নও নিতে পারছি আবার কাজ করতে পারছি সময় মতো”।  

গেল কয়েক বছরের মহামারীতে অন্যান্য কারখানার মতো খুব বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়নি কারখানাটি। জানা যায়, এই কারখানার বার্ষিক উৎপাদন বেড়েছে ৬ মিলিয়ন ইউয়ান। আরও উৎপাদন বাড়াতে চলতি বছরের শেষ নাগাদ আরও ২০০জনকে নিয়োগের লক্ষ্য রেখেছেন কারখানা কর্তৃপক্ষ। 

একসময়ের দারিদ্র্যপীড়িত এই গ্রাম কারখানা চালু হওয়ার পর থেকেই দরিদ্র গ্রামের তালিকা থেকে হয়েছে মুক্ত।

সুপ্রিয় শ্রোতা আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা। 

অনুষ্ঠানটি কেমন লাগছে সে বিষয়ে জানাতে পারেন আমাদের কাছে। আপনাদের যে কোন পরামর্শ, মতামত সাদরে গৃহীত হবে। আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আবার কথা হবে আগামি সপ্তাহে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাই চিয়েন।

সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া

অডিও এডিটিং: রফিক বিপুল