‘হিরো’
2023-03-23 14:52:58

আজকের অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় অংশে আমি ‘হিরো’ নামের চীনের একটি মুভি’র মাধ্যমে বিগত তিন বছরে মহামারীর বিরুদ্ধে চীনের অর্জিত সাফল্য এবং বর্তমানে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে চীনের অর্থনীতির পুনরুদ্ধারের অবদানের সঙ্গে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেব।

 

বর্তমানে গোটা চীনে ধীরে ধীরে অতীতের মতো প্রাণচাঞ্চল্য  ফিরে আসছে। অনেক চীনা পর্যটকও বিদেশ ভ্রমণ করছেন। এই সবই চীনের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মহামারী প্রতিরোধের কারণে সম্ভব হচ্ছে। চীন মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অসাধারণ সাফল্য পেয়েছে। মহামারীর বিরুদ্ধে এই তিন বছরব্যাপী লড়াই সম্পর্কে চীনে তৈরি বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র ও টিভি নাটক আছে।  ‘হিরো ’ সেগুলোর অন্যতম।

 

মুভিটি মহিলার দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে সাধারণ মানুষেরা কিভাবে প্রতিকূলতার মধ্যে ভালবাসা এবং আশা সন্ধান করার নিরাময়ের গল্প তুলে ধরে এবং সাধারণ মানুষের জীবনের প্রতি অসাধারণ অধ্যবসায়কে প্রতিফলিত করেছে। যখন আপনার সামনে হঠাৎ পরিবর্তন আসে, যখন দম্পতি অথবা স্বামী-স্ত্রী এবং শাশুড়ি ও পুত্রবধূর সম্পর্কের মধ্যে ফাটল দেখা দিতে শুরু করে, তখন প্রতিটি বাছাই মানব প্রকৃতি এবং মানুষের শক্তি ও হৃদয়ের উষ্ণতাকে প্রতিফলিত করে।

 

এ মুভি’র মোট তিনটি স্বাধীন গল্প আছে এবং প্রত্যেক গল্পকে আলাদাভাবে পরিচালনা করেন তিনজন নারী পরিচালক। মুভিতে তারা আমাদের পাশে সংকটের সম্মুখীন পারিবারিক সম্পর্ক এবং সংকটে পড়া নারীদের চেতনার জাগরণসহ নানা সামাজিক সমস্যা নিয়ে গবেষণা করার চেষ্টা করেছেন। মুভি উষ্ণতায় ভরা এবং অর্থ-সম্পন্ন।

 

পরিচালক লি শাও হোং শাশুড়ি ও পুত্রবধূর সম্পর্ক নিয়ে অন্বেষণ করেছেন। পরিচালক ছেন ছোং তরুণ প্রেমিক-প্রেমিকার গল্পের ওপর ফোকাস করেন এবং চাং এই চিয়া মধ্যবয়সী দম্পতির গল্প তুলে ধরেন।

 

এ তিনটি গল্পে তুলে ধরা তিন ধরণের সম্পর্ক প্রায়ই প্রত্যেকের সঙ্গে জড়িত এবং যা প্রত্যেকের বড় হওয়ার বিভিন্ন সময়পর্বে জীবনের প্রধান দ্বন্দ্ব হয়ে উঠতে পারে।

 

মুভি’র প্রথম গল্প মহামারীর সময় উ হান শহরে ঘটে। শেন ইউ দুর্ভাগ্যবশত মহামারিতে সংক্রমিত হয়। বাসায় তার শাশুড়ি তার জন্য কঠোর কোয়ারেন্টিনে ব্যবস্থা নিয়েছেন। চীনা চান্দ্র-পঞ্জিকার নববর্ষের আগের রাতে পরিবারের সদস্যরা একই হাউসে থাকলেও নিজ নিজ রুমে ভিডিও লিঙ্কের মাধ্যমে অনলাইনে নববর্ষ উদযাপন করতে বাধ্য হয়। কয়েক দিন পর শাশুড়িও আক্রান্ত হন। নিজের ছেলে ও নাতি’র সংক্রমণ এড়াতে শাশুড়ি তাদের বাসা থেকে বেরিয়ে যেতে বলেছেন। এভাবে একই বাসায় শুধুমাত্র শাশুড়ি এবং পুত্রবধূ থাকেন। একসাথে কোয়ারেন্টিনের সময় তাদের মধ্যে কি কি গল্প ঘটেছে? বলা যায়, চীনে শাশুড়ি এবং পুত্রবধূর সম্পর্কের মোকাবিলা একটু কঠিন। বিশেষ করে মহামারির সময় রোগে আক্রান্ত হয়ে জ্বর, কাশি, মাথাব্যথা, নানা কষ্টে ভোগতে বাধ্য হয়। শাশুড়ি এবং পুত্রবধূ কিভাবে একে অপরের সঙ্গে আচরণ করেন? চলচ্চিত্রে স্পষ্ট একটি উত্তর দেওয়া হয়।

 

দ্বিতীয় গল্প বেইজিংয়ে ঘটে। মহামারি শুরুর আগে সিও লু এবং ছেলেবন্ধু শাও হুয়া আলাদাভাবে বেইজিং এবং উহান শহরে থাকেন। বসন্ত উৎসব উদযাপন করতে সিও লু বেইজিংয়ের বাসায় ফিরে যান এবং ছেলেবন্ধু শাও হুয়া উ হান শহরে রয়ে যান। তারা প্রতিদিন সেলফোনের মাধ্যমে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করে। শাও হুয়ার সংক্রমণের খবর জানার পর তাকে যত্ন নিতে সিও লু নানা উপায়ে উ হান শহরে যাওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করে। তবে সেই সময় পরিবহনের সমস্ত পদ্ধতি বন্ধ ছিল। সিও লু ফোরের অসুস্থ ছেলেবন্ধুকে দেখা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। শাও হুয়া’র অবস্থা দিনের পর দিন ভয়াবহ হয়ে উঠে এবং অবশেষে সে মারা যায়। মহামারি’র পর সিও লু উ হানে গিয়ে হাসপাতাল থেকে শাও হুয়া’র সেলফোনসহ অবশিষ্টাংশ জিনিসগুলো ফেরত নিয়েছে এবং শাও হুয়া’র বাসায় চলে গিয়েছে। সে মনোযোগ দিয়ে শাও হুয়া’র বাসা পরিষ্কার করে। তারপর সে শাও হুয়া’র সেলফোন খুলে তাদের মিষ্টি স্মৃতিগুলো  মনে করতে থাকে।

 

শেষের গল্প হংকংয়ে ঘটে। শুরুতে একজন সাংবাদিকের লেন্সে রেকর্ড করা মহামারি পরিস্থিতিতে জনগণের জীবন কাটার নানা অবস্থা দেখানো হয়। নিঃসন্দেহ এই সাংবাদিক এ কাহিনীর প্রধান নারী চরিত্র। প্রতিদিন যেখানে খবর দেখা দেয়, সেখানে ছুটে যায় সে। তার স্বামীও একজন সাংবাদিক। সব সময়ই কাজে ব্যস্ত থাকাটি হলো তাদের স্বাভাবিক অবস্থা। ফলে তারা দু’জনই কাজের কারণে পরিবারকে খেয়াল করতে পারছে না এবং একে অপরকে দোষারোপ করছে। বার বার ঝগড়ার পর তারা বিচ্ছিন্ন থাকে এবং বিবাহ বিচ্ছেদের দ্বারপ্রান্তে চলে যায়।

 

সন্তানদের খুশি করার জন্য স্বামী তাদের নিয়ে সাগরের পাশে ভ্রমণ করেছে। ফিরে আসার পর মাত্রাতিরিক্ত জ্বর হয়ে হাসপাতালে পাঠানো হয় সন্তানদেরকে। স্ত্রী খুব রাগ এবং উদ্বিগ্ন হয়ে স্বামীকে বলেন, সন্তানদের ওপর কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে আমি কোনো দিন তোমাকে ক্ষমা করব না। হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরে আসার পর তাদের মধ্যে আরও গুরুতর ঝগড়া হয়। কাজের চাপ, সংসারের ছোটখাটো খুঁটিনাটি, ছেলে-মেয়েকে লালন পালনের নানা অসুবিধা, স্ত্রীর মনের অসন্তোষ পুরোপুরি প্রকাশ করার সঙ্গে সঙ্গে স্বামীর সমালোচনা করেছে, কারণ স্ত্রী মনে করেন, স্বামী কখনও তার সঙ্গে সংসারের কাজ ভাগ করে নেয়নি। ঝগড়া করতে করতে ক্লান্ত হয়ে তারা একে অপরের পাশে বসে সোফায় শুয়ে যায়। পরের দিন হাসপাতালের কল পেয়েছে তারা। ছেলে’র রোগের অবস্থা স্বাভাবিক হয়েছে। এ খবর শুনে তাদের মন শান্ত হয়ে ওঠে। স্ত্রী ক্যাবিনেটে রাখা ছবিগুলো দেখে আগের মিষ্টি সময় মাথায় ভেসে উঠে। মাঝেমাঝে কাজের চাপ থেকে রেহায় পেয়ে আশেপাশের মানুষের সম্পর্ক নিয়ে চিন্তা করা উচিৎ। প্রত্যেক মানুষ অন্যদের সমর্থন পেতে চায়, মাঝেমাঝে জীবন নিয়ে হতাশা বোধ করি, তবে কখনোই সময় মত বিনিময় ও যোগাযোগ করতে ভুলে যাবে না। পরিবারের সদস্যরা আমাদের বৃহত্তম সমর্থক এবং এগিয়ে যাওয়ার বৃহত্তম চালিকা শক্তি।

 

লিলি/এনাম/রুবি