‘তারুণ্যের অগ্রযাত্রা’ পর্ব ১০
2023-03-22 21:38:06

‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ অনুষ্ঠানে স্বাগত জানাচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী।  দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেওয়ার প্রধান হাতিয়ার তারুণ্য। তরুণরা চাইলেই পারে সমাজকে বদলে দিতে। এজন্য দরকার তাদের চিন্তা ও মেধার সমন্বয়। চীন ও বাংলাদেশের তরুণদের অফুরান সম্ভাবনার কথা তুলে ধরবো এই অনুষ্ঠানে। তরুণদের সৃজনশীলতার গল্পগাঁথা নিয়েই সাজানো হয়েছে আমাদের তারুণের অগ্রযাত্রা।   

১. চীনে স্নাতকদের চাকরি মেলা 

বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতকদের কর্মজীবন নিশ্চিত করতে বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে চীন সরকার। এই প্রকল্পের অংশ হিসেবে চীনের বিভিন্ন স্থানে চাকরি মেলার আয়োজন করা হয়েছে । পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিবন্ধী স্নাতকদের জন্যেও ব্যবস্থা করা হয়েছে বিস্তৃত কর্মসংস্থানের।  

 

বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকদের কর্মসংস্থান বাড়াতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে চীন সরকার। লক্ষ লক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকদের চাকরি খুঁজে পেতে সহায়তা করছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো। ধারনা করা হচ্ছে ২০২৩ এ চীনের বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকের সংখ্যা দাঁড়াবে ১ কোটি ১০ লাখে।  


চলতি মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকদের জন্য একটি বড় চাকরি মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো উত্তর-পশ্চিম চীনের শানসি প্রদেশের সিয়ান শহরে। মেলায় উৎপাদন, বৈজ্ঞানিক গবেষণা থেকে প্রযুক্তিগত পরিষেবা সহ মোট ১৯ টি সেক্টরে ৫৬ হাজার পদে চাকরি দেওয়া হয়েছে।  

 

সিয়ান চিয়ানথং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা হান ই লি বলেন চাকরি মেলা তাদের জন্য একটি ভালো সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে।  

 

‘এবারের চাকরি মেলায় বিভিন্ন সেক্টরের অনেক কোম্পানি এসেছে। মেলাটি চাকরি খুজতে আমাদের ভালো সুযোগ করে দিয়েছে।‘  


এদিকে ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি গ্র্যাজুয়েটস এমপ্লয়মেন্ট সার্ভিস প্ল্যাটফর্ম ৮৭ হাজারেরও বেশি চাকরি নিয়ে একটি অনলাইন নিয়োগ মেলা চালু করেছে। 


কিছু জায়গায় চাকরি প্রত্যাশীদের জন্যে ভর্তুকী ও প্রশিক্ষণের অফারও আছে। পূর্ব চীনের চিয়াংসি প্রদেশ ২০২২ সাল থেকে ইন্টার্নদের জন্য প্রায় ৭ কোটি ইউয়ান ভর্তুকি বরাদ্দ করেছে। এদিকে, পূর্ব চীনের চিয়াংসু প্রদেশ এই বছর ব্যবসা শুরু করতে ইচ্ছুক ৩ লাখ কলেজ শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দেবার উদ্যোগ নিয়েছে।    

 

সংশ্লিষ্ট তথ্যসূত্র অনুসারে, চীনে এবছর ৩১ হাজার ৮৪৩ জন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী স্নাতক শেষ করবে। তাদের কর্মজীবন নিশ্চিত করতে চায়না ডিসেবলড পারসনস ফেডারেশনের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকটি বিভাগ। 

 

প্রতিবন্ধীদের জন্য বিস্তৃত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানান চায়না ডিসেবল পারসনস ফেডারেশন এমপ্লয়মেন্ট সার্ভিস এন্ড এডমিনেস্ট্রেশনের ডিরেক্টর লাই ওয়েই। 

‘আমরা প্রতিবন্ধীদের জন্য জব ভ্যাকেন্সি তৈরি করেছি। ইন্টারনেট ইকোনমি এবং ডিজিটাল ইকোনমি বিকাশের সাথে সাথে প্রতিবন্ধী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকদেরও বিস্তৃত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।‘  

 

শুধু প্রতিবন্ধী স্নাতক চাকরিপ্রত্যাশীদের কথা মাথায় রেখে  জব হান্টিং শুরু হয়েছে। এর প্রথম চাকরি মেলাটিতে মোট ৬ হাজার ৫৮০টি চাকরি আছে।  


প্রতিবেদকঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন 

২.  স্বপ্ন পূরণ করতে কঠোর পরিশ্রম দরকার: রেন ছিওয়েই। 

তরুণদের অনেক বড় স্বপ্ন দেখতে হবে। কারণ এই স্বপ্ন তাদের শিখরে পৌঁছাতে সাহায্য করবে। তবে শুধু স্বপ্ন দেখে বসে থাকলে চলবে না সঙ্গে চাই কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যবসায়, এমনটিই বলেছেন অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন স্কেটার রেন ছিওয়েই।  

 

চীনের অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন স্কেটার রেন ছিওয়েই দেশের যুবকদেরকে বড় স্বপ্ন দেখার এবং কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের সঙ্গে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।   বেইজিংয়ে সদ্য অনুষ্ঠিত এবারের ১৪ তম জাতীয় গণকংগ্রেসের প্রথম অধিবেশনে ডেপুটি হিসেবে যোগদান কালে তার স্বপ্নের-সত্য গল্পটি শেয়ার করেন রেন।   


বেইজিং ২০২২ শীতকালীন অলিম্পিকে তার স্বর্ণ জয়ী কীর্তিটির জন্য বিশ্বের অন্যতম সেরা শর্ট-ট্র্যাক স্পিড স্কেটার হিসাবে পরিচিত রেন ছিওয়েই। 

জীবনের যেকোনো কিছুতে পারদর্শী হতে, শুধুমাত্র আবেগ এবং আগ্রহ দিয়ে চলে না। বরং উন্নতির চেয়ে ধারাবাহিক এবং অব্যাহতভাবে কঠোর পরিশ্রম দরকার বলে মনে করেন রেন। সাফল্যের দিকে এগিয়ে যেতে প্রত্যেকেরই নিজের স্বপ্নে লেগে থাকা উচিত বলেও মনে করেন তিনি।  স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজেকে নিবেদিত করতে হবে বলে জানান রেন ছিওয়েই।  

 

"আমার বন্ধুরা আমাকে 'হাতি' বলে ডাকে কারণ একটি হাতির পক্ষে শুয়ে থাকা কঠিন। আমি কখনোই বসে থাকার মানুষ না এবং আমার সাফল্যের সাধনায় এক পা পিছিয়ে যাবো না।  একজন ক্রীড়াবিদ হিসেবে, পার্টির সদস্য এবং এনপিসি-র একজন ডেপুটি হয়ে আমার দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে পেরে গর্ববোধ করছি।’

এসময় রেন দেশকে বিশ্ব ক্রীড়া শক্তিতে রূপান্তর করতে সবধরনের সহযোগিতার অঙ্গীকার করেন।   


উত্তর-পূর্ব চীনের হেইলংচিয়াং প্রদেশের হারবিনে তার জন্ম। মাত্র ৮ বছর বয়সে প্রথম স্পিড স্কেটিং প্রশিক্ষণে অংশ নেন রেন ছিওয়েই।


প্রতিবেদকঃ রওজায়ে জাবিদা ঐশী 


৩.  কফির প্রতি তরুণদের ঝোঁক বাড়ছে 

চা বা কফির সঙ্গে তরুণদের একটা বিশেষ সম্পর্ক বিদ্যমান। বিশেষ করে কফির প্রতি তরুণদের আগ্রহ বেশি থাকায় ভোক্তাদের বড় অংশই এ প্রজন্মের দখলে। চীনেও তরুণদের পছন্দের পানীয় হয়ে উঠেছে কফি। কফির শহর হিসেবে পরিচিত সাংহাইয়ে তিন মাসব্যাপী চলছে কফি কার্নিভাল। এতে তরুণদের সাড়া মিলছে চোখে পড়ার মতো- এমনটিই বলছেন আয়োজকরা।   

 

সাংহাইয়ের কফি সংস্কৃতি খুব পুরানো ঐতিহ্য। এরই মধ্যে সাংহাই কফির রাজধানী হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছে। এই সংস্কৃতিকে নতুনভাবে চাঙ্গা করতে "কফি টুগেদার" শিরোনামে চায়না মিডিয়া গ্রুপের সাংহাই ব্যুরো, চায়না গ্লোবাল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক সিজিটিএন এবং ৫G নতুন মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ইয়াংশিফিনের যৌথ আয়োজনে সাংহাইতে তিন মাসব্যাপী কফি কার্নিভালটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। 

   

আয়োজকদের মতে, এই ইভেন্টের একটি বিশেষত্ব হল এটি শুধুমাত্র স্টারবাক্সের মতো বড় ব্র্যান্ডগুলোই নয়, জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছোট কিন্তু অনন্যমানের ব্র্যান্ডগুলোকেও সুযোগ করে দিচ্ছে। এটি কফি বাজারে প্রাণশক্তি যোগ করে এবং ভোক্তাদের ভালো ব্র্যান্ডের কফির স্বাদ নেওয়ার সুযোগ করে দেয়।


সাংহাই, ১৯ শতকে কফির স্বাদ নেওয়া প্রথম চীনা শহর। এই শহরে বর্তমানে ৮ হাজারের বেশি কফি শপ আছে, যা বিশ্বের অন্য যেকোনো শহরের চেয়ে বেশি। সুতরাং, এটা আশ্চর্যজনক নয় যে, এ শহর এবং কফির সঙ্গে একটি নিবিড় সম্পর্ক জড়িয়ে আছে বলে মনে করেন স্থানীয় তরুণ বাসিন্দা ইয়ং ফু।

   

"কফি সংস্কৃতি সম্পর্কে আমাদের আলাদা ধারণা রয়েছে। আমরা যখন ছোট ছিলাম, তখন এটি জেগে থাকার জন্য একটি পানীয়ের মতো ছিল, কিন্তু এখন এটি একটি অভ্যাস বা জীবনযাত্রায় পরিণত হয়েছে। ভবিষ্যতে কফিপ্রেমি মানুষ আরো বাড়বে।‘’ 

 

 এধরণের ইভেন্ট কফি খাওয়ার জন্য নতুন সম্ভাবনার দার উন্মুক্ত করবে বলে মনে করেন আয়োজকরা।


আয়োজকরা আরো জানান, তরুণদের কফি কেন্দ্রিক সম্পৃক্ততা বাড়ছে। বর্তমান প্রজন্ম কফি খাওয়াকে দৈনন্দিন জীবনের একটি স্বাভাবিক অংশ মনে করে। কারণ পড়াশোনা কিংবা কাজে মনোযোগ বাড়াতে এবং নিজেদের চাঙ্গা করে নিতে কফির কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করে তরুণরা। তাই সাংহাইয়ের কফি কার্নিভাল  তরুণদের কাছ থেকে এমন একটি বার্তা দিচ্ছে যে, "কফি জীবনের একটি উপায় হয়ে উঠেছে"  বলে জানান আয়োজকরা।  

 


কফির শহর সাংহাইয়ে চলমান এই কার্নিভালটি জুন পর্যন্ত চলবে বলেও জানানো হয়।   


প্রতিবেদকঃ রওজায়ে জাবিদা ঐশী 


আমাদের ‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ আজ এই পর্যন্তই । পরবর্তী অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ জানিয়ে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। শুভকামনা সবার জন্য। 


পরিকল্পনা ,পরিচালনা ও সঞ্চালনা : রওজায়ে জাবিদা ঐশী 

অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল 

সার্বিক সম্পাদনা: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী