বিশ্ববাসীকে ক্ষুধামুক্ত রাখতে অল্প অল্প করে ভূমিকা রাখছে চীনের অত্যাধুনিক কৃষি প্রযুক্তি। পেছনে পড়ে থাকা ছোট ছোট গ্রামগুলো মুক্তি পাচ্ছে দারিদ্রের শেকল থেকে। স্বল্প পরিসরের উদ্যোগগুলো দেখছে সফলতার মুখ, অনুসঙ্গ হচ্ছে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির।
আধুনিক প্রযুক্তি এগিয়ে নিচ্ছে আপেল চাষ
পূর্ব চীনের শানতুং প্রদেশে ছিসিয়া সিটি হলো চীনের অন্যতম বড় আপেল চাষের এলাকা। এখানকার বেশিরভাগ আপেল বাগানে ব্যবহার করা হচ্ছে স্মার্ট প্রযুক্তি। আধুনিক ব্যবস্থাপনার কারণে এখানকার আপেলের গুণগত মান যেমন বাড়ছে তেমনি বিক্রির ক্ষেত্রেও সুবিধা হচ্ছে। চলুন ঘুরে আসা যাক একটি স্মার্ট আপেল বাগান থেকে।
তুষার জমা লাল আপেল ধরে আছে গাছে গাছে। রসালো আপেলগুলো দেখতে যেমন চমৎকার তেমনি খেতেও সুস্বাদু। শানতুং প্রদেশের ছিসিয়া সিটির বিভিন্ন আপেল বাগানে এমন আপেলের দেখা মিলছে। এগুলো গুণে মানে সেরা আপেল। এই এলাকায় রয়েছে চীনের অন্যতম বড় আপেল চাষ এলাকা।
এগুলো স্মার্ট আপেল খামার। ডিজিটাল পদ্ধতিতে এখানে আপেলের গুণগত মান ও আকার রক্ষা করা হয়। রসালো আপেল পেতে হলে প্রাকৃতিক সম্পদ এবং ডিজিটাল ব্যবস্থাপনার সমন্বয় দরকার। এই খামারে স্মার্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে আপেলের গুণগতমান নিয়ন্ত্রণ করা হয়। কখন পানি দরকার আর কখন সার দিতে হবে সেটা ডিজিটাল মনিটরিংয়ের মাধ্যমে স্থির করা হয়।
এসব খামারে লাইভ স্ট্রিমিংয়ের মাধ্যমে বাগান থেকে সরাসরি আপেল সরবরাহ করা হয়। এখান থেকে আপেল কেনা, বাজারে সরবরাহ সবকিছুই হয় স্মার্ট প্রযুক্তিতে।
আপেল বাগানে স্মার্ট প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে গ্রামীণ কৃষির যেমন উন্নতি হচ্ছে তেমনি আয়ও বাড়ছে। গ্রাম উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এই স্মার্ট আপেল খামারগুলো।
বাংলাদেশে ভালো মানের ফিড তৈরি করছে চীনা প্রতিষ্ঠান নিউ হোপ
চীন দেশের প্রতিষ্ঠান নিউ হোপ দেশের গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলায় গড়ে তুলেছে বেশ বড় আকারের একটি কারখানা। যেখানে প্রতিনিয়ত তৈরি করা হচ্ছে মাছ, মুরগি ও গরুর জন্য গুণগতমানের ফিড। যা পৌঁছে যাচ্ছে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। এই উৎপাদন কারখানায় ব্যবহার করা প্রযুক্তি আনা হয়েছে চীন দেশ থেকে। এমনকি দিনকে দিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের আধুনিক দেশগুলোর সবচেয়ে আপডেটেড ভার্সনের প্রযুক্তিও সমন্বয় করা হচ্ছে এখানে।
মাছ, মুরগি ও গরুর জন্য উচ্চ প্রযুক্তি ব্যবহার করে মান সম্মত এই খাবার তৈরি করছে বিশ্বজুড়ে খ্যাত চীনের শীর্ষ কৃষি শিল্প প্রতিষ্ঠান নিউ হোপ।
ঢাকা থেকে প্রায় ৫২ কিলোমিটার দূরত্বে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় গড়ে তোলা হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে নিউ হোপ ফীড মিল বাংলাদেশ লিমিটেড শুরু করে খাদ্য উৎপাদন।
৮ দশমিক ১১ একর জায়গার উপর নির্মিত এই প্রতিষ্ঠানে এখন কাজ করছেন প্রায় তিন শতাধিক কর্মচারী ও শ্রমিক।
প্রতিষ্ঠানটির প্রশাসনিক প্রধান সিউয়ান লি বলেন, “ ফীড তৈরির জন্য বেশিরভাগ প্রযুক্তি আমরা এনেছি চীন থেকে। এমনকি ভালো মানের কিছু মেশিনারিজ আনা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে । শুধু তাই নয়, মানসম্মত ফিড তৈরির জন্য বিশ্বের যেখানেই উন্নতমানের প্রযুক্তির উদ্ভাবন করা হয়েছে সবই এখানে আনা হয়েছে।“
বাছাইকৃত ও উৎকৃষ্ট মানের কাঁচামাল, ব্যাক্টেরিয়ামুক্ত উৎপাদিত ফীড, এভাবেই বাংলাদেশের আনাচে কাঁনাচে পৌঁছে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক মানের ফিড, যা তৈরির কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে এই চীনা কৃষি শিল্প প্রতিষ্ঠান।
বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সমন্বয় করেই চলছে এই প্রতিষ্ঠানের গবেষণাগার। যেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নির্ধারণ করা হয় করা ফিড তৈরীর বিভিন্ন উপাদান। একই সঙ্গে নিশ্চিত করা হয় এই ফিডের গুণগতমান।
খামারীকে মানসম্মত ফীড নিশ্চিত করে দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময় ধরে সাফল্যের শিখরে পৌছে যাওয়া এই ফীড মিল গেল দুই বছর সম্মুখীন হয়েছে নানা প্রতিবন্ধকতার। সব বাধা পেরিয়ে এগিয়ে যাওয়া খুব সহজ ছিলো বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক প্রধান সিউয়ান লি।
এই প্রতিষ্ঠান থেকে বার্ষিক মাছের খাবার উৎপাদিত হচ্ছে ৭০ হাজার টন। আর মুরগির খাবার উৎপাদিত হচ্ছে ১৯ হাজার টন। বিশ্ববিখ্যাত এই প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের তৃণমূল পর্যায়ের খামারিদের কাছে মানসম্মত মাছ, মুরগি ও গরুর খাবার পৌছে দিতে বাংলাদেশে নিউ হোপ গ্রুপের রয়েছে তিনটি প্রতিষ্ঠান।
প্রতিবার জাল টানলে ধরা পড়ে ৫০ হাজার কেজি মাছ
চীন দেশের চিলিন প্রদেশে ছগান নামের একটি লেক রয়েছে। মূলত এটিই হলো দেশটির বৃহত্তম মিঠা পানির হ্রদ। আপনারা জেনে নিশ্চয় অবাক হবেন, ছগান নামের চীনের বৃহত্তম এই মিঠা পানির হ্রদে প্রতিবার জাল টানলেই ধরা পড়ে ৫০ হাজার কেজি মাছ। আর এ বছর জেলেদের টার্গেট সব মিলিয়ে ১৫ লাখ কেজি মাছ ধরা। আর গুরত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো লেকটিকে মাছে স্বয়ংসম্পূর্ণ রাখতে প্রতিবছর ছাড়া হয় এক কোটিরও বেশি পোনা।
এই লেকের উপর বিশেষ প্রক্রিয়ায় বেশ কিছু ঘোড়া আনা হয়। ঘোড়াগুলোর পায়ের খুরের আঘাতে দুর্বল হতে থাকে বরফের আস্তরণ। পরবর্তীতে হ্যান্ড ড্রিলিংয়ের মাধ্যমে বরফগুলো ভেঙে মাছগুলো বের করে আনেন জেলেরা। এ সব নেটে ধরা পড়ে অনেক প্রজাতির মাছ। যেগুলো দেখতে যেমন তরতাজা আর আকৃতিতেও বড়োসড়ো।
উত্তর-পূর্ব চীনের চিলিন প্রদেশের সোংইয়ুয়ান সিটিতে ছ'গান লেক। চীনের বৃহত্তম মিঠা পানির এ হ্রদে তাদের লক্ষ্য প্রতিবার জাল টেনে ৫০ হাজার কেজি মাছ ধরা। তবে এ বছর তাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সব মিলিয়ে ১৫ লাখ কেজি মাছ ধরা। যা পুরো লেকের মাত্র এক শতাংশ মাছের সমান।
এটি মূলত চায়না মিডিয়া গ্রুপ-সিএমজি বাংলার বাংলাদেশ ব্যুরোর কৃষি বিষয়ক সাপ্তাহিক রেডিও অনুষ্ঠান। যা সঞ্চালনা করছেন ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট এইচ আর এস অভি।
এ রেডিও অনুষ্ঠানটি আপনারা শুনতে পাবেন বাংলাদেশের রেডিও স্টেশন রেডিও টুডেতে।
শুনতে থাকুন শেকড়ের গল্পের নিত্য নতুন পর্ব । যেখানে খুঁজে পাবেন সফলতা আর সম্ভাবনার নানা দিক। আর এভাবেই চীনা কৃষির সঙ্গে শুরু হোক আপনার দিন বদলের গল্প।