মার্চ ২২: স্থানীয় সময় গতকাল (মঙ্গলবার) বিকেলে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ক্রেমলিনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন। চীন-রাশিয়া সম্পর্ক এবং অভিন্ন উদ্বেগ-সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক ইস্যু নিয়ে দুই প্রেসিডেন্ট আন্তরিক, বন্ধুত্বপূর্ণ এবং ফলপ্রসূ আলোচনা করেন এবং অনেক নতুন ও গুরুত্বপূর্ণ ঐকমত্যে পৌঁছান। উভয় পক্ষ সুপ্রতিবেশীসুলভ বন্ধুত্বপূর্ণ এবং জয়-জয় সহযোগিতার মাধ্যমে কল্যাণকর নীতির ভিত্তিতে বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিনিময় ও সহযোগিতাকে উন্নত এবং নতুন যুগে সার্বিক কৌশলগত অংশীদারিত্বের সম্পর্ককে গভীরতর করতে একমত হয়েছে। আজকের সংবাদ পর্যালোচনায় এ নিয়ে শুনবেন একটি প্রতিবেদন।
প্রেসিডেন্ট পুতিন ক্রেমলিনের জর্জ হলে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের জন্য একটি জমকালো অভ্যর্থনার আয়োজন করেন।
দুই রাষ্ট্রপ্রধান একাধিক ছোট ও বড় আকারের বৈঠক করেছেন।
বৈঠককালে সি চিন পিং উল্লেখ করেছেন যে চীন এবং রাশিয়া একে অপরের বৃহত্তম প্রতিবেশী। রাশিয়ার সাথে দীর্ঘমেয়াদী সুপ্রতিবেশীসুলভ এবং বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে সুসংহত এবং বিকাশ করা ঐতিহাসিক যুক্তির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। এটি চীনের কৌশলগত বাছাই- যা কোনো অস্থায়ী ঘটনার কারণে পরিবর্তন হবে না। দশ বছর আগে আমার প্রথম রাশিয়া সফরের পর থেকে চীন এবং রাশিয়া একে অপরকে সম্মান, একে অপরকে বিশ্বাস এবং একে অপরের উপকার করে আসছে। সময় পার হওয়ার সাথে সাথে দুই দেশের সম্পর্ক আরও শক্তিশালী এবং আরও ব্যাপক, বাস্তববাদী এবং কৌশলগত হয়েছে। আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি যেভাবেই পরিবর্তিত হোক না কেন, নতুন যুগে চীন-রাশিয়ার সার্বিক কৌশলগত অংশীদারিত্বের সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে চীন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমার এবারের রাশিয়া সফর বন্ধুত্ব, সহযোগিতা ও শান্তির যাত্রা। নতুন যুগে চীন-রাশিয়ার সার্বিক কৌশলগত অংশীদারিত্বের সম্পর্ক বৈচিত্র্যময় করে তুলতে দুই দেশের জনগণের জন্য আরও সুবিধা তৈরি করতে এবং মানবজাতির উন্নতিতে আরও বেশি অবদান রাখতে ইচ্ছুক চীন।
সি চিন পিং বলেন, বর্তমানে শতাব্দীর পরিবর্তন বিকশিত হচ্ছে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য এবং বিশ্বের প্রধান শক্তি হিসেবে চীন ও রাশিয়ার দায়িত্ব রয়েছে। দুই দেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রত্যাশা পূরণ এবং মানবজাতির অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটির গঠনকে বেগবান করতে কাজ করতে হবে। উভয় পক্ষের উচিত একে অপরের মূল স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে একে অপরকে সমর্থন এবং অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বহিরাগত শক্তির হস্তক্ষেপের যৌথ প্রতিরোধ করা। আন্তর্জাতিক বিষয়ে, বিশেষ করে জাতিসংঘ, শাংহাই সহযোগিতা সংস্থা এবং ব্রিকসভুক্ত দেশসমূহের বহুপাক্ষিক ব্যবস্থার আওতায় যোগাযোগ ও সমন্বয় জোরদার, সত্যিকারের বহুপাক্ষিকতা চর্চা, আধিপত্যবাদ ও ক্ষমতার রাজনীতির বিরোধিতা, মহামারীর পরে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারকে বেগবান করা, বহুমুখীতার উন্নয়ন এগিয়ে নেয়া এবং বিশ্ব ব্যবস্থার সংস্কার করা উচিৎ।
দুই রাষ্ট্রপ্রধান দুই দেশের সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রধানদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার প্রতিবেদন শোনেন।
প্রেসিডেন্ট সি বলেন,
‘উভয় পক্ষের যৌথ প্রচেষ্টায় চীন-রাশিয়ার সম্পর্ক সর্বদা একটি শক্তিশালী, সুষ্ঠু এবং স্থিতিশীল উন্নয়নের প্রবণতা বজায় রেখেছে। রাজনৈতিক পারস্পরিক আস্থা, স্বার্থের একীকরণ এবং দুই দেশের জনগণের বন্ধন অব্যাহত রয়েছে। আর্থ-বাণিজ্য, বিনিয়োগ, জ্বালানি ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রে দু’দেশের সহযোগিতা অব্যাহতভাবে অগ্রসর হয়েছে। আমাদের সহযোগিতার ক্ষেত্রটি প্রসারিত হচ্ছে এবং ঐকমত্য আরও জোরদার হচ্ছে।’
বৈঠককালে পুতিন বলেন,
‘আবারও চীনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে সর্বসম্মতভাবে পুনর্নির্বাচিত হয়ে নতুন সরকার গঠন উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট সি’কে আমি উষ্ণ অভিনন্দন জানাচ্ছি। বর্তমানে রাশিয়া-চীন সম্পর্ক খুব ভালোভাবে বিকশিত হচ্ছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুই দেশের সহযোগিতার ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে। সরকার, আইন প্রণয়নকারী সংস্থা, সকল স্তর এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনিময় ও সহযোগিতা খুবই সক্রিয় রয়েছে। আশা করা যায় যে উভয় পক্ষ অর্থনীতি, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, জ্বালানি, মহাকাশ, ও আন্তঃসীমান্ত পরিবহনসহ নানা ক্ষেত্রে নতুন অগ্রগতি লাভের জন্য দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান যোগাযোগ চ্যানেলগুলোর ভূমিকা পালন করবে।’
দুই প্রেসিডেন্ট মনে করেন, এবারের সফরকালে দু’দেশের বিনিময় গভীর হয়েছে, বিষয় বৈচিত্র্যময় হয়েছে এবং তা নতুন যুগে চীন ও রাশিয়ার সার্বিক কৌশলগত সহযোগিতার অংশীদারিত্বের সম্পর্কের উন্নয়নে নতুন চালিকা শক্তি প্রদান করেছে।
লিলি/এনাম/রুবি