মার্চ ২১: স্থানীয় সময় গতকাল (সোমবার) বিকেলে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বিশেষ বিমানে করে মস্কো পৌঁছেছেন। মস্কোর ভানুকোভো বিমানবন্দরে প্রদত্ত এক লিখিত ভাষণে তিনি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এবং অভিন্ন উদ্বেগ-সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক ইস্যু নিয়ে প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে গভীরভাবে মতবিনিময় এবং নতুন যুগে চীন-রাশিয়ার কৌশলগত ও বাস্তব সহযোগিতার পরিকল্পনা প্রণয়নের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। আগের দিন প্রেসিডেন্ট সি রাশিয়ান মিডিয়াতে প্রকাশিত একটি স্বাক্ষরযুক্ত নিবন্ধে বলেছেন যে চীন-রাশিয়া সম্পর্কের আন্তর্জাতিক পরিবর্তনের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার চাবিকাঠি হল একে অপরের সাথে সঠিকভাবে আচরণ করার উপায় খুঁজে বের করা।
চীনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হওয়ার পর এটিই সি চিন পিংয়ের প্রথম বিদেশ সফর। বহির্বিশ্ব মনে করে যে এটি নতুন যুগে চীন-রাশিয়ার সার্বিক কৌশলগত অংশীদারিত্বের সম্পর্কের প্রতি চীনের গুরুত্বারোপের প্রতিফলন। এটি প্রমাণ করে যে চীন-রাশিয়া সম্পর্ক আরও পরিপক্ব এবং দৃঢ় হয়েছে, যা বিশ্ব নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য সহায়ক এবং বিশ্বের ইতিবাচক সম্পদও বটে।
রাষ্ট্র প্রধানদের মধ্যে বিনিময় হচ্ছে চীন-রাশিয়া সম্পর্কের কম্পাস এবং তারকা। বছরের পর বছর ধরে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিতে যা-ই ঘটুক না কেন- চীন ও রাশিয়ার রাষ্ট্রপ্রধানরা সব সময় ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বজায় রেখে আসছেন এবং নিয়মিত সফর বিনিময় করেছেন। ২০১৩ সালের পর চীন ও রাশিয়ার রাষ্ট্রপ্রধানরা দ্বিপাক্ষিক এবং আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানে ৪০ বার বৈঠক করেছেন, যা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের টেকসই, সুষ্ঠু এবং স্থিতিশীল উন্নয়নের জন্য দৃঢ়ভাবে পথ পরিচালনা করেছে।
দুই রাষ্ট্রপ্রধানের কৌশলগত দিকনির্দেশনার অধীনে উভয় পক্ষের রাজনৈতিক পারস্পরিক আস্থা ক্রমাগত গভীর, বাস্তব সহযোগিতা প্রসারিত, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ঘনিষ্ঠ ও কার্যকর এবং প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বন্ধুত্ব গভীরভাবে প্রোথিত হয়েছে। আর্থ-বাণিজ্যিক সহযোগিতাকে উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ২০২২ সালে চীন ও রাশিয়ার দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ১৯০ বিলিয়ন ছাড়িয়ে যাবে, যা ১০ বছর আগের তুলনায় ১১৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। চীন একটানা ১৩ বছর ধরে রাশিয়ার বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার হয়ে উঠেছে। রাশিয়ার সর্বস্তরের মানুষ এবার প্রেসিডেন্ট সি’র সফরের জন্য উন্মুখ হয়ে আছে।
রাশিয়ান একাডেমি অব সায়েন্সেসের ইনস্টিটিউট অব ওয়ার্ল্ড ইকোনমি অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনসের উপ-পরিচালক আলেকজান্ডার রোমানভ মনে করেন যে এই সফর নতুন যুগে রাশিয়া-চীন সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
বর্তমানে বিশ্ব শান্তিময় নয়। আধিপত্য বজায় রাখার জন্য কোনো কোনো বড় দেশ তথাকথিত ‘বড় শক্তির প্রতিযোগিতা’র জন্য বিভাজন এবং সংঘর্ষকে তীব্রতর করছে। চীন এবং রাশিয়া উভয়ই স্বাধীন ও স্বতন্ত্র পররাষ্ট্র নীতি অনুসরণ করে। তাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোটনিরপেক্ষ, অ-সংঘাত, এবং তৃতীয় পক্ষকে লক্ষ্য না বানানোর ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপের বিষয় নয়। চীন-রাশিয়া সম্পর্ক উন্নয়নের মধ্যে আরও পরিপক্ব ও দৃঢ় হয়ে উঠেছে এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধা, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান এবং জয়-জয় সহযোগিতার বৈশিষ্ট্যযুক্ত নতুন ধরনের সম্পর্কের মডেল স্থাপন করেছে। এটি বড় দেশগুলোর একে অপরের সাথে থাকার সঠিক উপায়কে স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করেছে এবং বর্তমান পরিবর্তনশীল ও বিশৃঙ্খল বিশ্বের জন্য এটি গভীর তাৎপর্য বহন করছে।
বৈশ্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা যায়, চীন ও রাশিয়া উভয়ই জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য। বিশ্ব শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুই পক্ষের মধ্যে সহযোগিতা জোরদার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন এবং রাশিয়া জাতিসংঘ, শাংহাই সহযোগিতা সংস্থা এবং ব্রিকসভুক্ত দেশগুলোসহ আন্তর্জাতিক বহুপাক্ষিক ব্যবস্থার আওতায় ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ও সমন্বয় বজায় রেখেছে, সক্রিয়ভাবে প্রকৃত বহুপাক্ষিকতা চর্চা এবং বিশ্ব বহুমুখীকরণ ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের গণতন্ত্রায়নকে উন্নত করেছে। বাস্তবতা দৃঢ়ভাবে প্রমাণ করেছে যে বিশ্ব যত বেশি অশান্তিপূর্ণ হবে, তত স্থিরভাবে চীন-রাশিয়া সম্পর্কের এগিয়ে যাওয়া উচিত।
দুনিয়ার বিষয়গুলো ভালোভাবে সমাধান করতে হলে আগে নিজেদের বিষয়গুলো ভালোভাবে সমাধান করতে হবে। চীনা জনগণ চীনের কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে একত্রে চীনা শৈলীর আধুনিকায়নের মাধ্যমে চীনা জাতির মহান পুনরুত্থানকে এগিয়ে নিচ্ছে। চীন উচ্চ মানের উন্নয়ন বাস্তবায়ন এবং উচ্চ মানের উন্মুক্ততা সম্প্রসারণ করার চেষ্টা করবে এবং যা রাশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে উন্নয়নের নতুন সুযোগ দেবে বলে মনে করে সিএমজি সম্পাদকীয়।
লিলি/এনাম/রুবি