‘ঘুরে বেড়াই’ পর্ব-১০
2023-03-21 20:38:05

 

এবারের পর্ব সাজানো হয়েছে  

১। শি চাহাই লেক: জলের তীরে বেড়ানো

২। চীনে ঘুরে নারী হিসেবে খুব শান্তি ফিল করেছি: গীতি আরা মিম


বিশ্বব্যাপী অপরূপ সৌন্দর্যের চাদর বিছিয়ে রেখেছে বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি। কতো-শতো দেশ, কতো সংস্কৃতি, কতো ভাষা, কতো পেশা,.... কিন্তু আর্থিক অসঙ্গতি কিংবা সময়ের টানাটানিতে দেখা হয় না, ‘ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া’  

‘একটি ধানের শিষের উপরে একটি শিশির বিন্দু...’সেই অদেখাকে দেখাতেই আমাদের আয়োজন "ঘুরে বেড়াই"। 

দেশ-বিদেশের দর্শনীয় স্থান, সেখানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, এবং সেই স্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা অর্থনীতি নিয়ে আমাদের অনুষ্ঠান ‘ঘুরে বেড়াই’। 

ঘুড়ে বেড়াই অনুষ্ঠানের নবম পর্ব আজ। আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি, আফরিন মিম।   


১। শি চাহাই লেক: জলের তীরে বেড়ানো 

বেইজিংয়ের একটি অসাধারণ সুন্দর জায়গা হলো শিচাহাই লেক এবং সেই লেকের তীরে দীর্ঘ হাঁটাপথ। জায়গাটা শহরের প্রাণকেন্দ্রে। ওখানে মূলত তিনটি লেক একটির সাথে অন্যটি সংযুক্ত। 

 


এখানকার সবচেয়ে বড় লেকটির নাম হোওহাই। অন্য দুটির নাম ছিয়ানহাই ও শিহাই।  একসাথে তিনটিকে বলা হয় শি চাহাই। বিশাল লম্বা লেক। এর কাছেই হলো নানলোকুশিয়াং হুথোং। হুথোং মানে গলি। হোওহাই লেক ও নানলোকুশিয়াং হুথোং মিলেই বিশাল এলাকা।  

 

লেকের তীর ধরে হাঁটা পথ। দুই তীরে রেস্টুরেন্ট আর বার। লেকের তীরে সুউচ্চ গাছপাল। স্থানে স্থানে পাথরের বেদী রয়েছে বসার জন্য। আর সামনে দিকে একটু হাটলেই দেখা মেলে তিব্বতী আর অন্যান্য  নৃগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী চীনাসামগ্রীর দোকান। 

 

লেকের সৌন্দর্য যাতে নষ্ট হয় এইজন্য এখানে নেই কোন হাইরাইজ ভবন। ভবন তোলার অনুমতিও নেই। এই লেকগুলোতে বিভিন্ন রকম লোকজ খেলা বা ম্যাজিক দেখানো হয় ছোট ছোট জায়গায়। লেকের বুকে ভাসে নৌকা, প্যাডেলবোট । 

 

বিকেলের রোদ মিলিয়ে আসে, অপূর্ব শোভা ছড়িয়ে একসময় টুপ করে ডুব দেয় সুয্যিমামা। ধীরে ধীরে সন্ধ্যা নেমে আসে লেকের বুকে। চারিদিকে ঝলমলে আলো জ্বলে ওঠে। রেস্টুরেন্টগুলোর আলো আর নৌকা ও ছোট্ট বোট থেকে আলোর প্রতিফলন ঘটে লেকের বুকে। এরপর আকাশে ওঠে চাঁদ। তার শোভা অন্য আলোকে ম্লান করে দেয়।

 

এখানে বিদেশি লোকের ভিড় বেশি। অবশ্য স্থানীয় লোকজনও আছেন প্রচুর সংখ্যায়। বেইজিংয়ে যেসব বিদেশি অনেকদিন ধরে আছেন হয়তো চাকরি, লেখাপড়া বা অন্য কোনো কারণে তাদের অনেকেই এখানে সন্ধ্যা কাটাতে আসেন। বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে তো বটেই, পথের পাশেও রয়েছে গানের আয়োজন। যেখানে গান পরিবেশন করেন চীনা শিল্পীরা। পাথরের বেদীতে বসে গল্প করেন অনেকে, কেউ বা গান শোনেন। কোথাও আবার কয়েকজন মিলে নাচেন। অনেক রাত পর্যন্ত লোক সমাগম থাকে এখানে। 

 

রেস্টুরেন্টগুলোতে ঐতিহ্যবাহী চীনা খাবার যেমন হটপট, বেইজিং ডাক, সাপের মাংস, ঝিনুক ও শামুকের ডিশ ইত্যাদি আছে। আছে তিব্বতী, উইগুর ও মোঙ্গোলীয় খাবার। 

 

শিচাহাই লেক এলাকায় ঢুকতে কোনো টিকেট লাগে না। যে কোন সময় পর্যটকরা এখানে যেতে পারেন , আর উপভোগ করতে পারেন এই এলাকার সৌন্দর্য । 


২।  চীনে ঘুরে নারী হিসেবে খুব শান্তি ফিল করেছি: গীতি আরা মিম

চীনে ঘুরে একদিকে নিজেকে সেইফ ফিল করতাম ,অন্যদিকে আত্মবিশ্বাসী ছিলাম খুব। এভাবেই নিজের চীনে ঘুরার অভিজ্ঞতার গল্প বলছিলেন বাংলাদেশের মেয়ে গীতি আরা মিম। 

 

গীতি আরা মিম 

তিনি চীনের সাউদার্ন মেডিকেল কলেজ থেকে পড়ালেখা করেছেন। সেই সুবাদে দীর্ঘ চার বছর থেকেছেন চীনের কুয়াংতং প্রদেশের কুয়াংচৌ শহরে। চার বছরের অভিজ্ঞতায় কুয়াংচৌ শহরকে জাদুর শহর ও স্বপ্নপুরী মনে করেন এই তরুণী। 

তিনি জানান, “ কুয়াংচৌ শহরের মিউজিয়াম, অপেরা হল, লাইব্রেরী,আর্ট এক্সিবেশন্স, পার্ল রিভার এরকম বিভিন্ন জায়গায় আমার যেতে খুব ভালো লাগতো। মূলত কুয়াংচৌ শহর আমি মন দিয়ে ঘুরেছি, যখন ভালো লেগেছে, যখন সময় পেয়েছি তখনই আমি ঘুরতে যেতাম”। 

 

গীতি আরা মিম 

বাংলাদেশের চেয়ে চীন অনেক বেশি অর্গানাইজড ।যার কারণে চীন দেশে ঘুরতে তিনি সব সময় আত্নবিশ্বাসী ছিলেন। 

তিনি বলেন, “ চীনের আইন-কানুন খুব স্ট্রং তাই আমি মন খুলে একা একা ঘুরতে পারতাম। আমি বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে গিয়ে খাবার টেস্ট করেছি, তাদের বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠান উপভোগ করেছি”। 

 

বন্ধুদের সাথে গীতি আরা মিম 

কুয়াংচৌর পাশাপাশি বেশ কয়েকবার শেনজেন ঘুরেছেন মিম। তিনি জানান, “ আমার শহর থেকে ট্রেনে করে মাত্র দুই ঘন্টায় আমি শেনজেন পৌছে যেতাম। সেখানকার সমুদ্র সৈকত আমার খুব ভালো লাগতো। সেখানে সারাদিন কাটিয়ে সন্ধ্যায় ফিরে আসতাম। 

 

বন্ধুদের সাথে রেস্টুরেন্টে চীনা খাবার খাচ্ছেন গীতি আরা মিম 

ঘুরতে জানলে চীন ঘুরার জন্য সবচেয়ে উপযোগী পর্যটন গন্তব্য বলেও জানান এই তরুণী।

যারা চীনে ঘুরতে যেতে চায় তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, চীনের যাওয়ার আগে নিজের মাইন্ডটা একটু বড় করে যেতে হবে। চীনাদের সম্মান করা, তাদের বুঝতে পারা  আর ভাষারটা জানতে পারলে চীন ঘুরার অভিজ্ঞতা খুব স্মুথ হবে”। 

পরিকল্পনা ও প্রযোজনা ও অডিও সম্পাদনা- আফরিন মিম 

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী