অনেক বাঙালি বন্ধু হয়ত শুনেছেন, হোয়াংহ্য তথা হলুদ নদীকে একসময় "চীনের দুঃখ" বলা হতো। কারণ, প্রাচীনকালে, হলুদ নদী প্রায়শই বন্যায় প্লাবিত হতো, তত্কালীন চীনা জনগণের জন্য ছিল যা ভীষণ দুঃখের। তাই প্রাচীনকাল থেকেই চীনে একটি কথা প্রচলিত আছে: "হলুদ নদী শান্তিপূর্ণ হলে পৃথিবী শান্তিময়"।
চলতি বছরের ২২ মার্চ ৩১তম "বিশ্ব পানি দিবস" পালিত হবে এবং ৩৬তম "চীনা পানি সপ্তাহ" ২২ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত চলবে। ২০২৩ সালের চীনের "বিশ্ব পানি দিবস" এবং "চীনা পানি সপ্তাহ" কার্যক্রমের মূল প্রতিপাদ্য হল: "আইন-ভিত্তিক পানিশাসন শক্তিশালী করা এবং মাতৃনদী রক্ষায় একসাথে কাজ করা"।
হলুদ নদী এবং ইয়াংজি নদীর মতো গুরুত্বপূর্ণ নদীগুলির পরিবেশগত ব্যবস্থাপনা আরও বেশি মনোযোগ পেয়েছে এবং চীন মানুষ ও প্রকৃতির মধ্যে সুরেলা সহাবস্থানের লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
পানির কারণে শহরগুলির জন্ম, আর পানির কারণেই সভ্যতা বিকাশ লাভ করে। চীনা জাতির মাতৃনদী হলুদ নদী এবং ইয়াংজি নদী, শুধুমাত্র চীনা সভ্যতার উত্সই নয়, এগুলো গুরুত্বপূর্ণ পরিবেশগত নিরাপত্তা বাধা এবং চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। একটি উদাহরণ হিসাবে হলুদ নদীর কথা বলি। দেশের নদীর প্রবাহের মাত্র ২% সীমিত পানিসম্পদের জন্য, হলুদ নদীর পানি দেশের কৃষি খাতে সেচের ১৩% সরবরাহ করে, দেশের জিডিপি-র ১৪% নিশ্চিত করে এই নদী, এবং ৬০টিরও বেশি শহর ও ৩৪০টিরও বেশি জেলার জনসংখ্যার জন্য পানি সরবরাহ করে। কিন্তু মাটির ক্ষয়, পানির ঘাটতি, ক্ষুদ্র জলবিদ্যুতের অব্যবস্থাপনা এবং কঠিন বর্জ্যের অবৈধ ডাম্পিং-এর মতো একাধিক সমস্যা হলুদ নদী অববাহিকায় পরিবেশগত সুরক্ষা এবং উচ্চ-মানের উন্নয়নকে কমবেশি বাধাগ্রস্ত করছে।
২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং হ্যনানের চেংচৌ শহরে হলুদ নদীর অববাহিকার পরিবেশগত সুরক্ষাসংশ্লিষ্ট একটি আলোচনাসভায় সভাপতিত্ব করেন। তিনি উল্লেখ করেন যে, হলুদ নদী রক্ষা করা চীনা জাতির মহান পুনরুত্থানের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। হলুদ নদীর অববাহিকার পরিবেশগত সুরক্ষা এবং উচ্চ-মানের উন্নয়ন প্রধান জাতীয় উন্নয়ন কৌশল হয়ে উঠেছে।
২০২১ সালের অক্টোবরে, চীনা কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি এবং জাতীয় পরিষদ "হলুদ নদীর অববাহিকার পরিবেশগত সুরক্ষা এবং উচ্চ-মানের উন্নয়নের পরিকল্পনার রূপরেখা" জারি করে। ২০২২ সালে, "হলুদ নদীর অববাহিকার পরিবেশগত সুরক্ষা পরিকল্পনা" জারি করা হয়। এই পরিকল্পনায় হলুদ নদীর অববাহিকায় অসামান্য পরিবেশগত সমস্যাগুলো সমাধানের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করা হয়েছে।
সৌভাগ্যবশত, বছরের পর বছর শাসনের পর, হলুদ নদী অববাহিকার পরিবেশগত সুরক্ষাকাজে সুফল পাওয়া গেছে। পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২২ সাল পর্যন্ত, হলুদ নদী অববাহিকায় ভূপৃষ্ঠের পানির গুণগত মান ৮৭.৫% প্রথম থেকে তৃতীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৫.৬ শতাংশ বেশি। হলুদ নদীর মূল অংশের পানির গুণগত মান উন্নত হচ্ছে। এর অববাহিকায় অবস্থিত শহরগুলোর অংশের পানির মান ভাল থাকার দিন ৮০.৩ শতাংশে পৌঁছেছে।
হলুদ নদীর উত্স এবং হলুদ নদী ব-দ্বীপের জীববৈচিত্র্য ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেমন, হলুদ নদী ব-দ্বীপ প্রাকৃতিক সুরক্ষা অঞ্চলে পাখির সংখ্যা ১৯৯২ সালের ১৮৭ প্রজাতি থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৩৭১ প্রজাতিতে উন্নীত হয়েছে।
যাহোক, হলুদ নদীর অববাহিকায় পরিবেশগত সুরক্ষাকাজের ফলাফল এখনও আশানুরূপ নয় এবং পরিবেশের ভঙ্গুরদশা এখনও রয়ে গেছে। ২০২২ সালের অক্টোবরে, ত্রয়োদশ জাতীয় গণকংগ্রেসের স্থায়ী কমিটির অধিবেশনে, "গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের হলুদ নদী সুরক্ষা আইন" পাশ হয়। আইনটি সামনের পয়লা এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে। দূষণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা উন্নত করা এবং সরকারি নিয়ন্ত্রক দায়িত্ব জোরদার করা হল এ আইনের অন্যতম লক্ষ্য।
হলুদ নদী সুরক্ষা আইন একটি ব্যাপক এবং পদ্ধতিগত প্রাতিষ্ঠানিক নকশা দিয়েছে। এ আইনের বাস্তবায়ন হলুদ নদীর অববাহিকা উন্নয়ন মডেলের সবুজ রূপান্তরকে ত্বরান্বিত করার জন্য এবং মানুষ ও প্রকৃতির সুরেলা সহাবস্থানের জন্য অত্যন্ত বাস্তব তাত্পর্য রয়েছে।
পানি হল জীবনের উত্স, উত্পাদনের চাবিকাঠি এবং জীব-পরিবেশের ভিত্তি। চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং পানি নিয়ন্ত্রণের কাজকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেন এবং স্পষ্টভাবে "পানি সংরক্ষণের অগ্রাধিকার, স্থানিক ভারসাম্য, পদ্ধতিগত শাসন এবং দুই হাতের প্রচেষ্টা"-র ধারণা সামনে রাখেন, যা পানি নিয়ন্ত্রণ ও এর উন্নয়নকাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পথ নির্দেশ করে। নতুন যুগে আমি আশা করি, হলুদ নদীকে আর "চীনের দুঃখ" বলা হবে না, বরং সত্যিকার অর্থে "চীনের গর্ব" বলা হবে! (ইয়াং/আলিম/ছাই)