মার্চ ২০: বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ মহামারী ছড়িয়ে পড়ার পর তিন বছর গত হয়েছে। আর চীনের বিরুদ্ধে কোভিডের উত্স সম্পর্কে মার্কিন মিথ্যাচার নতুন করে শুরু হয়েছে। সম্প্রতি ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের খবরে বলা হয়, মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদে গৃহীত একটি বিলে মার্কিন সরকারকে কোভিড-১৯ মহামারীসম্পর্কিত সব তথ্য প্রকাশের জন্য বলা হয়। এর কিছুদিন আগে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা, দৃশ্যত কোনো প্রমাণ ছাড়াই, কোভিডের উত্সব চীনের উহান গবেষণাগার বলে প্রচার করেছে।
চীনের বিরুদ্ধে নতুন করে তদন্তের লক্ষ্য অবশ্যই চীনকে বেকায়দায় ফেলা। সম্প্রতি চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, এটি যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক কারসাজি। কোনো প্রমাণ না-থাকা সত্ত্বেও, উহানের পরীক্ষাগার থেকে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার মিথ্যা প্রচার করে যুক্তরাষ্ট্র আবারও নতুন খেলায় মেতেছে। এতে বরং বিশ্বব্যাপী মহামারীর উত্স অনুসন্ধানের বৈজ্ঞানিক কাজ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আন্তর্জাতিক সমাজ অবশ্যই এটি জানে।
দুই বছর আগে মার্কিন রাজনীতিকরা কোভিড-১৯ মহামারীকে কেন্দ্র করে চীনের ভাবমূর্তি নষ্ট করার প্রয়াস পেয়েছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন দেশের পন্ডিতরা তাদের অভিযোগ খন্ডন করেন। ব্রিটেনের বিখ্যাত্ চিকিত্সক অধ্যাপক টম জেফার্সন বলেন, কোভিড-১৯ মহামারীর উত্স চীন নয়। এ ভাইরাস সম্ভবত নর্দমা বা টয়লেটের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ব্রাজিলের ১৪ জন পন্ডিত ব্রাজিলের কোনো কোনো শহরের নর্দমার নমুনা পরীক্ষার পর প্রকাশিত যৌথ গবেষণা-প্রতিবেদনে বলেন, ব্রাজিলে ২০১৯ সালের নভেম্বরে কোভিড-১৯ ভাইরাসের অস্তিত্ব ছিল বলে প্রমাণ মিলেছে। ইতালি ও স্পেনও এ ধরণের প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ইতালির প্রতিবেদনে বলা হয়, সেদেশে ২০১৯ সালের অক্টোবরে কোভিড-১৯ ভাইরাসের উপস্থিতি ছিল। অথচ, তখন চীনে কোভিড-১৯ ভাইরাসের কোনো অস্তিত্ব ছিল না। এ ছাড়াও, মার্কিন প্রধান সংক্রমক রোগ বিশেষজ্ঞ আন্টোনি ফাউচি বিভিন্ন প্রমাণ দিয়ে বলেছেন, কোভিড-১৯ মহামারী চীনের গবেষণাগার থেকে ছড়িয়ে পড়েনি। সব ধরণের প্রমাণ দেখায় যে, চীন এর উত্স নয়।
মোদ্দাকথা, নতুন প্রচেষ্টা চীনকে অসম্মান করার আরেকটি মার্কিনীয় নির্লজ্জ পদক্ষেপ। এমন আচরণ যেন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। অথচ দেশটি নিজের কুকীর্তির কথা ভুলে যায়। রুশ-ইউক্রেন সংঘর্ষ শুরুর দিকে রাশিয়া ইউক্রেনে একটি মার্কিন পরীক্ষাগারে কোভিড-১৯ ভাইরাসসম্পর্কিত পরীক্ষা-নিরীক্ষার অস্ত্বিত্ব দেখতে পায়। তখন রাশিয়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে বিষয়টি তদন্ত করার অনুরোধ জানায়। তবে, যুক্তরাষ্ট্র এতে বাধা দেয় এবং দ্রুত পরীক্ষার সরঞ্জাম অন্যত্র সরিয়ে নেয়।
কোভিড-১৯ মহামারী বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ার আগে যুক্তরাষ্ট্র গোটা দেশে মহামারী প্রতিরোধমূলক মহড়া চালিয়েছিল। কিন্তু কেন? এছাড়াও, সন্দেহজনক ফোর্ট ডেট্রিক জৈব রাসায়নিক অস্ত্রের ঘাঁটি, অ্যানথ্রাক্স, ইবোলা লিকেজ দুর্ঘটনা, এমনকি রক্ত প্রকল্প—কোনটি কুখ্যাত নয়? বিশ্বজুড়ে মহামারীর উত্স অনুসন্ধান করতে চায় দেশটি, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে এ সংক্রান্ত অনুসন্ধঅন চালাতে দিতে রাজি নয় ওয়াশিংটন! এ কেমন দ্বৈতনীতি?!
পক্ষান্তরে, চীন সবসময় কোভিড-১৯ মহামারীর উত্স অনুসন্ধানকে সমর্থন করে আসছে এবং বিশ্বের বৈজ্ঞানিক উত্স অনুসন্ধানে অংশ নিয়েছে। মহামারী ছড়িয়ে পড়ার প্রথম দিকেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞরা চীনে এসে তদন্ত করেছেন। ফলাফলে বলা হয়, চীন কোভিড-১৯’র উত্স নয়। তা ছাড়া, বিভিন্ন পর্যায়ে চীন বিভিন্ন মহামারী প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। চীন সময়মতো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে মহামারীর অবস্থা সম্পর্কে জানিয়ে গেছে, প্যাথোজেন সনাক্ত করেছে, বিশ্বের সাথে ভাইরাসের জেনেটিক ক্রম ভাগাভাগি করেছে, এবং রোগ নির্ণয় ও চিকিত্সা পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে। চীন আন্তর্জাতিক সমাজের মহামারী প্রতিরোধকাজেও নানানভাবে সাহায্য করেছে।
প্রশ্ন হচ্ছে: যুক্তরাষ্ট্র কী করেছে? যুক্তরাষ্ট্র মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সবচেয়ে ব্যর্থ একটি দেশ। অথচ বিশ্বের সবচেয়ে ভালো চিকিত্সাব্যবস্থঅ আছে দেশটিতে। কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়ার প্রথম দিকে মহামারী যুক্তরাষ্ট্রে দু’টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে রাজনৈতিক লড়াইয়ের একটি হাতিয়ারে পরিণত হয়। যুক্তরাষ্ট্র চীনের মতো মহামারী প্রতিরোধ করেনি, কিন্তু সবসময় চীনের বদনাম করে আসছে। আমার মনে হয়, বিশ্বের জনগণের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের জবাবদিহি করা উচিত! (ছাই/আলিম)