চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সাপ্তাহিক আয়োজন: বিজ্ঞানবিশ্ব
2023-03-20 19:57:00

১০ম পর্বে যা থাকছে: 

* অবাক করা ফিচার নিয়ে উন্মুক্ত হলো জিপিটি ফোর 

* শীর্ষ ১০ বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি প্রকাশ করেছে চীন

* ২০২৩-এর শেষে আইনস্টাইন প্রোব স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করবে চীন 

* চীনা জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের সবচেয়ে হালকা নিউট্রন তারকা আবিষ্কার 



অবাক করা ফিচার নিয়ে উন্মুক্ত হলো জিপিটি ফোর 


শক্তিশালী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মডেল জিপিটি ফোর উন্মুক্ত করলো মাইক্রোসফট কোম্পানির ওপেন এআই। এতোদিন বিশ্ববাসীর জন্য জিপিটি থ্রি ও থ্রি পয়েন্ট ফাইভ সবার জন্য উন্মুক্ত ছিলো। এবার জিপিটি ফোর মডেলের নতুন সব ফিচার ও অবিশ্বাস্য সক্ষমতা অবাক করে দিচ্ছে পৃথিবীবাসীকে। গত ১৪ মার্চ ওপেন এআই জানায় তারা জিপিটি ফোর উন্মুক্ত করতে শুরু করেছে। যদিও বর্তমানে শুধু চ্যাটজিপিটি প্লাস ব্যবহারকারীরাই ব্যবহার করতে পারছেন জিপিটি ফোর মডেলটি। নতুন এই মডেল উন্মোচনের মাধ্যমে গুগলের সাথে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি তৈরির প্রতিযোগিতায়ও এগিয়ে গেলো মাইক্রোসফট।  

গত বছরের নভেম্বরে চ্যাটজিপিটি উন্মুক্ত হবার পর থেকেই পুরো বিশ্বে তোলপাড় শুরু হয়। চ্যাটজিপিটির হাত ধরে বিশ্ব যেনো প্রবেশ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এক অবাক দুনিয়ায়, যেখানে শুধু কমান্ড করে চ্যাটবট দিয়েই লিখিয়ে নেওয়া যায় ইমেইল, গল্প, কবিতা, কম্পিউটার কোড সহ আরো নানা বিষয়। সমাধান পাওয়া যায় অনেক জটিল সমস্যার। 

এবার ওপেন এআই উন্মুক্ত করতে শুরু করেছে জিপিটি ফোর মডেল, যেটি আগের থ্রি ও থ্রি পয়েন্ট ফাইভ মডেল থেকে অনেক অগ্রসর। ওপেন এআই বলছে, জিপিটি ফোর এখন শুধু লেখাই নয়, ছবি থেকেও কমান্ড বুঝতে পারে। যদিও এই ফিচারটি এখনই জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হচ্ছে না। আপাতত এটি নিয়ে আরো গবেষণা করছে তারা। 

 

ওপেনএআইয়ের এই জিপিটি ফোর মডেল উন্মুক্তের ঘোষণা জানান দেয় বিশ্বব্যাপী অফিসে কাজ করা মানুষেরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন চ্যাটবট কতটা পছন্দ করেছে। 

ভার্চুয়ালি নথি সম্পাদনার জন্য ‘ম্যাজিক ওয়ান্ড’ নামের নতুন এক সফটওয়্যার তৈরির ঘোষণা দিয়েছে গুগল গত মঙ্গলবার। সূত্র অনুযায়ী মাইক্রোসফটও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহয্যে নথি সম্পাদনার প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে এবং দ্রুতই ওপেন এআইয়ের এই সফটওয়্যার উন্মুক্ত হবার কথা রয়েছে। মাইক্রোসফটের একজন কার্যনির্বাহী বলেন জিপিটি ফোর মাইক্রোসফটের বিং সার্চ ইঞ্জিনকে শক্তিশালী করতেও কাজ করছে।

কিছু ক্ষেত্রে জিপিটি ফোর, জিপিটি থ্রি পয়েন্ট ফাইভ মডেল থেকে অনেক বেশি এডভান্সড।  

পেশায় যাবার পূর্বে মার্কিন ল’ স্কুলের স্নাতকদের জন্য প্রয়োজনীয় বার পরীক্ষার মতো পরীক্ষায় নতুন এই জিপিটি ফোর মডেল প্রথম সারির দশ ভাগ শিক্ষার্থীদের মতো স্কোর পেয়েছে। যেখানে জিপিটির আগের মডেল পায় শেষের সারির দশ ভাগ শিক্ষার্থীর মতো স্কোর, জানিয়েছে ওপেনএআই। 

কথোপোকথনে দুটি মডেলকে এক মনে হলেও কাজের জটিলতা বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে মডেল দুটির মধ্যে পার্থক্যও টের পাওয়া যায়। জিপিটি ফোর মডেল আরো নির্ভরযোগ্য, সৃজনশীল এবং সূক্ষ্ম থেকে সূক্ষ্মতর নির্দেশনাবলী মেনে চলতে সক্ষম।" একটি অনলাইন প্রদর্শনীতে ওপেনএআইয়ের প্রেসিডেন্ট গ্রেগ ব্রকম্যান দেখিয়েছেন, কীভাবে একটি হাতে আঁকা ওয়েবসাইটের ডিজাইনের ছবি থেকে জিপিটি ফোরের সাহায্যে একটি বাস্তব ওয়েবসাইট তৈরি করা যায়। 

আরবিসি ক্যাপিটাল মার্কেটস-এর বিশ্লেষক ঋষি জালুরিয়া বলেন, মাইক্রোসফট জিপিটি ফোর গ্রহণের ফলে উপকৃত হবে। 


|| প্রতিবেদন: আব্দুল্লাহ আল মামুন

|| সম্পাদনা: সাজিদ রাজু


শীর্ষ ১০ বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি প্রকাশ করেছে চীন


চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় গত শুক্রবার ২০২২ সালের চীনের শীর্ষ ১০ বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি প্রকাশ করেছে।

তালিকার শুরুতেই রয়েছে মঙ্গল গ্রহের পৃষ্ঠতলের গঠন উন্মোচন করা মার্স রোভার চুরংয়ের রাডারের নাম। গবেষণাটি শুধু মঙ্গল গ্রহের পৃষ্ঠ নিয়েই ধারণা দেয়নি, সেখানে পানির উপস্থিতির প্রমাণ পেয়েছে। এটি গ্রহটির ভূতাত্ত্বিক ইতিহাস এবং জলবায়ু পরিস্থিতির সম্পর্কে আরো বিস্তারিত বুঝতে সাহায্য করবে।

 

তালিকার দ্বিতীয় স্থানে আছে সক্রিয়, পুণরাবৃত্তিক ও দ্রুতগামী রেডিও বার্স্ট শনাক্ত করবার প্রযুক্তি। এই আবিষ্কার রহস্যময় রেডিও তরঙ্গের উৎপত্তি নিয়ে বিস্তর পর্যবেক্ষণের ভিত্তি স্থাপন করেছে। 

সমুদ্রের জল থেকে সরাসরি হাইড্রোজেন উৎপাদনের জন্য নতুন নীতি এবং প্রযুক্তি পেয়েছে তৃতীয় স্থান। শিল্পকে দীর্ঘদিন ধরে জর্জরিত করেছে এই সমস্যা। অবশেষে এর সমাধান হলো। 

অন্যান্য অগ্রগতিগুলোর মধ্যে রয়েছে করোনার ভেরিয়েন্ট ও করোনানাশের পদ্ধতি, উচ্চ দক্ষতা সম্পন্ন পেরোভস্কাইট সৌর কোষের বিকাশসহ আরো বেশ কয়েকটি বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি। 


|| প্রতিবেদন: আব্দুল্লাহ আল মামুন

|| সম্পাদনা: সাজিদ রাজু



২০২৩-এর শেষে আইনস্টাইন প্রোব স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করবে চীন 


মহাজাগতিক ঘটনা আরো ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে একটি নতুন এক্স-রে স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠাবে চীন।চলতি বছরের শেষদিকে আইনস্টাইন প্রোব স্যাটেলাইটটি মহাকাশে পাঠানোর পরিকল্পনা করছে চীন।  

মহাবিশ্বে প্রতিনিয়ত ঘটছে নানা ঘটনা। আগে এসব ঘটনা প্রযুক্তি ব্যবহার করেও পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয়নি। তবে চীনের আইনস্টাইন প্রোব স্যাটেলাইটের সাহায্যে এখন খুব সহজেই পর্যবেক্ষণ করা যাবে অদেখা, অজানা মহাকাশও।  

চলতি বছরের শেষদিকে নতুন এই এক্স-রে স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠাবে চীন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একটি সুপারনোভা বিস্ফোরণের প্রথম আলোক রশ্মিটি ধারণ করতে সক্ষম হবে এটি। মহাকর্ষীয় তরঙ্গের উত্স অনুসন্ধান এবং চিহ্নিত করতেও সহায়তা করবে নতুন এই এক্স-রে স্যাটেলাইট।  

পাশাপাশি মহাবিশ্বে ঘটে যাওয়া ক্ষণস্থায়ী ঘটনাগুলোও এর মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা যাবে।

স্যাটেলাইটটিতে একটি আধুনিক লবস্টার-আই টেলিস্কোপ লাগানো হবে যেনো মহাকাশে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো আরও গভীর ও ব্যাপকভাবে শনাক্ত করা যায়। 

আইনস্টাইন প্রোবের প্রধান বিজ্ঞানী ইউয়ান ওয়েইমিন বলেন এই স্যাটেলাইট প্রকল্পটি উন্নয়নের চূড়ান্ত পর্যায়ে প্রবেশ করেছে। 

তিনি বলেন, “টেলিস্কোপটি অন্ধকার মহাবিশ্বের একটি বিস্তৃত দৃশ্য পর্যবেক্ষণ করতে পারে। লবস্টার-আই টেলিস্কোপ প্রযুক্তির জন্য এখন আমরা মহাবিশ্বের অদেখা দিকগুলোও দেখতে পারবো।“  

প্রযুক্তিটি সর্বপ্রথম ২০১০ সালে তৈরি করা হয়। ২০২২ সালে এটি প্রথম মহাকাশের এক্স-রে ম্যাপ বানাতে সফল হয় এবং পৃথিবীতে পাঠায়। 


|| প্রতিবেদন: আব্দুল্লাহ আল মামুন

|| সম্পাদনা: সাজিদ রাজু


চীনা জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের সবচেয়ে হালকা নিউট্রন তারকা আবিষ্কার 


পৃথিবী থেকে ৩৮৫ আলোকবর্ষ দূরে একটি বাইনারি সিস্টেমে অদ্ভুত ধরণের নিউট্রন তারকা শনাক্ত করেছে চীনের জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের একটি দল। ধারণা করা হচ্ছে, এটি পৃথিবীর সবচেয়ে কাছের হালকা নিউট্রন তারকা।

 

পিকিং বিশ্ববিদ্যালয় এবং চায়নিজ অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেসের অধীনে জাতীয় জ্যোতির্বিদ্যা পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের গবেষকরা এই অনুসন্ধান চালায়। 

চীনের বৃহৎ স্কাই এরিয়া মাল্টি-অবজেক্ট ফাইবার স্পেকট্রোস্কোপিক টেলিস্কোপ এবং উত্তর পূর্ব চীনের সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্ত্বশাসিত অঞ্চলের অবস্থিত নানশান ওয়ান মিটার ওয়াইড ফিল্ড টেলিস্কোপের পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে সম্প্রতি এ আবিষ্কারের কথা জানানো হয়।

এখন পর্যন্ত, এমন অদ্ভুত রেডিও সংকেতসম্পন্ন মাত্র সাতটি বস্তু আবিষ্কৃত হয়েছে। পৃথিবী থেকে প্রায় ১ হাজার ৬৩০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত এই বস্তুওগুলোকে ডাকা হয় ম্যাগনিফিসেন্ট সেভেন নামে।

পূর্বে নিউট্রন নক্ষত্রগুলো কোর-কল্যাপস সুপারনোভার মাধ্যমে আকার নিয়েছে বলে বিশ্বাস করা হতো। 

গবেষণা অনুসারে, স্কাই এরিয়া মাল্টি-অবজেক্ট ফাইবার স্পেকট্রোস্কোপিক টেলিস্কোপ এই নিউট্রন স্টারটির চারপাশে একটি ছোট অ্যাক্রিশন ডিস্কের উপস্থিতি শনাক্ত করেছে।  


|| প্রতিবেদন: রওজায়ে জাবিদা ঐশী

|| সম্পাদনা: সাজিদ রাজু


অনুষ্ঠান কেমন লাগছে আপনাদের তা আমাদের জানাতে পারেন facebook.com/CMGbangla পেজে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক ভিডিও প্রতিবেদন দেখতে ভিজিট করতে পারেন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল CMG Bangla। 

পরিকল্পনা, প্রযোজনা ও অডিও সম্পাদনা- আব্দুল্লাহ আল মামুন


স্ক্রিপ্ট সম্পাদনা: সাজিদ রাজু, শিহাবুর রহমান


সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী