ট্রেনে করে কুয়ালালামপুর ভ্রমণ
2023-03-20 11:36:47

মালয়েশিয়ার নেগেরি তেরেঙ্গানু’র জেলিগা গ্রামের প্রধান ইব্রাহিমের আরও একটি “শখ” আছে। কাজ না থাকলে তিনি গ্রামের আশপাশে একটি নির্মাণ সাইটে যেতে পছন্দ করেন। এক একটি সেতুর পিলার বড় হতে দেখে, তাঁর উচ্চাকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের আরও কাছে গেছে।

 

“এসব পিলার মালয়েশিয়ার ইস্ট কোস্ট রেল লিঙ্কের জন্য নির্মিত হয়েছে। নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হবার পর ট্রেন সরাসরি দানগুন নদীর মধ্য দিয়ে চলে যাবে। আমরা এদিন তাড়াতাড়ি আসার জন্য অপেক্ষা করছি,” বলেছেন ৫৯ বছর বয়সী ইব্রাহিম। হাতে রেল লিঙ্কের পরিকল্পিত প্লট নিয়ে চোখের আনন্দ লুকাতে পারেন না তিনি।

 

“আমাদের গ্রাম স্টেশন থেকে মাত্র ২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। আমার বৃহত্তম আশা-আকাঙ্ক্ষা হলো গ্রামবাসীদের নিয়ে ট্রেনে করে কুয়ালালামপুরে ভ্রমণ করা।” তিনি বলেন, ট্রেন চালু হবার পর গ্রাম থেকে কুয়ালালামপুরে গমনের সময় ব্যাপকভাবে কমেছে। তিনি নিয়মিত সেখানে চাকরি করা সন্তানদের দেখতে পারেন।

ছয় শতাধিক কিলোমিটারের ইস্ট কোস্ট রেল লিঙ্কটিকে দেশটির পূর্ব ও পশ্চিম উপকূলকে সংযুক্তকারী “স্থল সেতু” মনে করা হয়। চীন যোগাযোগ নির্মাণ কোম্পানি (সিসিসিসি) সেটি নির্মাণ করে। প্রকল্প সম্পন্ন হবার পর মালয়েশিয়ার পূর্ব উপকূলের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে এবং বরাবর অঞ্চলের আন্তঃযোগাযোগের মান উন্নত  করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

 

সিসিসিসি’র ইস্ট কোস্ট রেল লিঙ্ক প্রকল্পের ভাইস জেনারেল ম্যানেজার ইয়ে শিয়াওইয়াং জানান, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রকল্পের নির্মাণকাজ ৪০ শতাংশের বেশি সম্পন্ন হয়ে দ্রুত নির্মাণ পর্যায়ে প্রবেশ করেছে। ২০২৬ সালের শেষ নাগাদ এ ও বি অংশের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হবে এবং ২০২৭ সালের শেষ নাগাদ সি অংশ সম্পন্ন হবে।

 

ইয়ে শিয়াওইয়াং বলেন, চালু হবার পর পূর্ব উপকূলের কেলান্তান রাজ্য থেকে পশ্চিম উপকূলের সেলাঙ্গর রাজ্য পর্যন্ত যাতায়াত সময় ৪ ঘণ্টা পর্যন্ত কমবে। অধিবাসীদের যাতায়াত সুবিধাজনক হবার সঙ্গে সঙ্গে লজিস্টিক কার্যকারিতা উন্নত হবে।

 

সম্প্রতি যৌথভাবে “এক অঞ্চল এক পথ” নির্মাণের দশম বার্ষিক ধারাবাহিক কার্যক্রম কেলান্তান রাজ্যের রাজধানী কোটা বারুতে অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় তথ্যমাধ্যম, বেসরকারি সংস্থা ও অধিবাসীরা নির্মাণ সাইটে গিয়ে “এক অঞ্চল এক পথ” ল্যান্ডমার্ক প্রকল্প অনুভব করেন।

মালয়েশিয়ায় চীনা দূতাবাসের মিনিস্টার থাং রুই বলেন, কেলান্তান হলো চীন ও মালয়েশিয়ার যৌথ “এক অঞ্চল এক পথ” ল্যান্ডমার্ক প্রকল্প ইস্ট কোস্ট রেল লিঙ্ক নির্মাণের আরম্ভ-বিন্দু। চীনা প্রতিষ্ঠান দ্রুততার সাথে প্রকল্প নির্মাণের সঙ্গে সঙ্গে ইতিবাচকভাবে সামাজিক দায়িত্ব পালন করে, প্রকল্পের বরাবর অধিবাসীদের জীবনযাপন উন্নত করার জন্য অবদান রাখে।

 

পার্শ্ববর্তী বাতাং হাবন গ্রামের প্রধান সেমি বলেন, চীনা প্রতিষ্ঠান প্রকল্প নির্মাণ করার সঙ্গে সঙ্গে গ্রামের জন্য রাস্তা নির্মাণ, ফুটবল মৈত্রী প্রতিযোগিতার আয়োজনও করে। সবাই ভাল বন্ধুতে পরিণত হয়েছে।

 

তিনি বলেন, ইস্ট কোস্ট রেল লিঙ্ক প্রকল্প স্থানীয় উন্নয়ন ত্বরান্বিত করেছে। অনেক স্থানীয় তরুণ-তরুণী প্রকল্পে কাজ করে। গ্রামবাসীরা রেলপথ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চালু হয়ে কৃষি পণ্যের বিক্রিতে সহায়তা দেয়ার প্রত্যাশা করে।

 

ইয়ে শিয়াওইয়াং বলেন, কোম্পানি প্রচুর স্থানীয় কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। চার হাজার ৮৪০ জন স্থানীয় কর্মী নিয়োগ করে। কোম্পানি চীন-মালয়েশিয়া রেলপথ মেধাশক্তি প্রশিক্ষণ পরিকল্পনার মাধ্যমে স্থানীয় রেলপথ পেশাদার ব্যক্তি লালন-পালন করার পাশাপাশি ৩ সহস্রাধিক স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের জন্য ব্যবসা সুযোগ ডেকে আনছে।

 

কেলান্তান টেকসই উন্নয়ন সমিতির চেয়ারম্যান হাফিজুল নিজাম আবদুল্লাহ নির্মাণ সাইট পরিদর্শন করার পর বলেন, ইস্ট কোস্ট রেল লিঙ্ক প্রকল্পের মাধ্যমে স্থানীয় তরুণ-তরুণীরা আরও বেশি শিক্ষা ও চাকরির সুযোগ অর্জন করেছ। প্রকল্প চালু হবার পর ব্যবসা ও লজিস্টিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে বলে প্রত্যাশা করেন তিনি। ফলে স্থানীয় পণ্য ও পরিষেবা সারা দেশে যেতে পারবে।

 

(প্রেমা/এনাম)