মার্চ ২০: আজ (সোমবার) রাষ্ট্রীয় সফরে মস্কো গমন উপলক্ষে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ‘রাশিয়ান নিউসপেইপার’ পত্রিকায় একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করেছেন।
আমি এখন আপনাদেরকে ‘দৃঢ় অগ্রসর, চীন-রাশিয়া বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতা ও অভিন্ন উন্নয়নের একটি নতুন অধ্যায়ের উদ্বোধন’ শিরোনামের এই প্রবন্ধটি পড়ে শোনাব।
প্রেসিডেন্ট পুতিনের আমন্ত্রণে আমি শীঘ্রই রাশিয়ান ফেডারেশনে রাষ্ট্রীয় সফরে যাব। দশ বছর আগে আমি চীনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর রাশিয়াকে আমার প্রথম বিদেশ সফরের দেশ হিসেবে বেছে নিয়েছিলাম। গত ১০ বছরে আমি 8 বার রাশিয়া সফর করেছি। প্রতিবারই আমি এখানে প্রচুর উত্সাহ নিয়ে এসেছি এবং একটি পুরস্কৃত অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরে গিয়েছি। প্রেসিডেন্ট পুতিনের সাথে আমি চীন-রাশিয়া সম্পর্কের একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছি।
চীন এবং রাশিয়া একে অপরের বৃহত্তম প্রতিবেশী দেশ এবং সার্বিক কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদার। আমরা উভয়ই বিশ্বের প্রধান দেশ এবং জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য। উভয় দেশই একটি স্বাধীন ও স্বতন্ত্র পররাষ্ট্র নীতি অনুসরণ করে এবং উভয়ই চীন-রাশিয়া সম্পর্ককে কূটনৈতিক অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে।
গত ১০ বছরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দু’দেশের সহযোগিতার উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে এবং নতুন যুগে প্রবেশ করেছে। চীন ও রাশিয়া বিভিন্ন ক্ষেত্রে উচ্চস্তরের আদান-প্রদান ও সহযোগিতার সম্পূর্ণ ব্যবস্থা গঠন করেছে, যা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নয়নের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থাগত নিশ্চয়তা প্রদান করেছে।
বছরের পর বছর ধরে আমি প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ কাজের যোগাযোগ বজায় রেখেছি। আমরা দ্বিপাক্ষিক এবং আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানে ৪০ বার বৈঠক করেছি। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার জন্য নানা পরিকল্পনা তৈরি করেছি। অভিন্ন স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক বিষয় নিয়ে সময় মত যোগাযোগ করেছি এবং সম্পর্কের টেকসই, সুষ্ঠু এবং স্থিতিশীল বিকাশে দৃঢ়ভাবে নেতৃত্ব দিয়েছি।
চীন-রাশিয়া সম্পর্ক ৭০ বছরেরও বেশি সময় ধরে উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলছে। অতীতের দিকে ফিরে তাকালে আমরা গভীরভাবে অনুভব করি যে আজকের চীন-রাশিয়া সম্পর্কের উন্নতি অর্জন করা সহজ নয়। চীন-রাশিয়ার বন্ধুত্ব চিরকাল স্থায়ী হবে, যাকে অবশ্যই দ্বিগুণভাবে মূল্য দেওয়া উচিত। ইতিহাস এবং অনুশীলন আমাদের বলে দিয়েছে যে চীন-রাশিয়া সম্পর্কের আন্তর্জাতিক পরিবর্তনের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার চাবিকাঠি হল একে অপরের সাথে সঠিকভাবে আচরণ করার উপায় খুঁজে বের করা।
আমার আসন্ন রাশিয়া সফর বন্ধুত্ব, সহযোগিতা এবং শান্তির যাত্রা বলে আমি মনে করি।
দুই পক্ষের উচিত সামগ্রিক পরিকল্পনা জোরদার, দুই দেশের নিজ নিজ উন্নয়ন ও পুনরুজ্জীবনে মনোযোগ প্রদান, নতুন ধারণা নিয়ে নতুন সুযোগ তৈরি এবং নতুন চালিকা শক্তি যোগ করা। পারস্পরিক আস্থা বাড়ানো, সম্ভাবনাকে উদ্দীপ্ত করা এবং সর্বদা চীন-রাশিয়া সম্পর্কের উচ্চস্তরের অপারেশন বজায় রাখা প্রয়োজন।
বর্তমানে বিশ্ব শতাব্দীকাল ধরে অদৃশ্য বড় পরিবর্তনের সম্মুখীন হচ্ছে। এসময় শান্তি, উন্নয়ন, সহযোগিতা এবং অভিন্ন কল্যাণ হলো ঐতিহাসিক ধারা এবং অপ্রতিরোধ্য, বিশ্বের বহু-মেরুকরণ, অর্থনৈতিক বিশ্বায়ন এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের গণতান্ত্রিকায়নের ধারাও অপরিবর্তনীয় রয়েছে। একই সময়ে ঐতিহ্যগত এবং অপ্রথাগত নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জগুলো একে অপরের সাথে জড়িত, আধিপত্য এবং গুণ্ডামি গভীরভাবে ক্ষতিকারক হয়ে উঠেছে। বিশ্ব অর্থনীতির পুনরুদ্ধার দীর্ঘ এবং কঠিন হয়ে পড়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই সংকট দূর করার জন্য একটি সহযোগিতামূলক সমাধানের জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে।
দুনিয়ার বিষয়গুলো ভালোভাবে সমাধান করতে হলে আগে নিজেদের বিষয়গুলো ভালোভাবে সমাধান করতে হবে। চীনা জনগণ চীনের কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে একত্রে চীনা শৈলীর আধুনিকায়নের মাধ্যমে চীনা জাতির মহান পুনরুত্থানকে এগিয়ে নিচ্ছে। সংক্ষেপে চীনা-শৈলীর আধুনিকায়ন হল বিশাল জনসংখ্যার আধুনিকায়ন, সকল মানুষের সাধারণ সমৃদ্ধি, সামঞ্জস্যপূর্ণ বস্তুগত সভ্যতা ও আধ্যাত্মিক সভ্যতার আধুনিকায়ন, মানুষ ও প্রকৃতির সুরেলা সহাবস্থানের আধুনিকায়ন এবং শান্তিপূর্ণ উন্নয়নের পথে চলার আধুনিকায়ন। এসব চীনা বৈশিষ্ট্যগুলো আমাদের দীর্ঘমেয়াদী অনুসন্ধানকে ঘনীভূত এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আমাদের গভীর অভিজ্ঞতার প্রতিফলন ঘটায়। ভবিষ্যতে আমরা অটলভাবে চীনা-শৈলীর আধুনিকায়নের শিল্পকে উন্নত করব। উচ্চমানের উন্নয়নের প্রচেষ্টা চালাব এবং উচ্চস্তরের উন্মুক্তকরণকে প্রসারিত করব।
আমি বিশ্বাস করি, তা রাশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে নতুন উন্নয়নের সুযোগ প্রদান করবে।
লিলি/এনাম/রুবি