১৯৯৪ সালে সিসিটিভি কুয়াংস্যি চুয়াং জাতির স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের লংশেং বিভিন্ন জাতির স্বায়ত্তশাসিত জেলায় একটি তথ্যচিত্র তৈরী করে। তখন সেখানে পাহাড়ী এলাকায় অবস্থিত একটি ইয়াও জাতির গ্রাম অনেক দরিদ্র ছিল। বাসিন্দাদের বসবাসের অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। ২৬ বছর পর গ্রামটি এখন পুরোপুরি বদলে গেছে।
লংশেং জেলায় দাচাই নামের একটি গ্রাম আছে। গ্রামটি পাহাড়ী অঞ্চলে অবস্থিত। এখানে যাতায়াতব্যবস্থা খারাপ ছিল। ২০০৩ সালে এখানে গ্রাম-পর্যটন উন্নয়নের কাজ শুরু হয়। তখন স্থানীয় বাসিন্দাদের বছরে মাথাপিছু গড় আয় ছিল ৭০০ ইউয়ানেরও কম। বর্তমানে গ্রামটির কমিউনিস্ট পার্টির সম্পাদক ফান বাও ইউ'র পুরানো বাড়িঘর হলো গ্রামটির সর্বশেষ পুরানো ঘর।
ফান বাও ইউ ১৭ বছর আগে পর্যটন শিল্প উন্নয়নের কাজ শুরু করেন। চলতি বছর তিনি ৫০ লাখ ইউয়ান দিয়ে পুরানো বাড়িঘরের কাছাকাছি একটি চার তলা ভবন নির্মাণ করেছেন। এটি হলো তাঁর দ্বিতীয় পারিবারিক হোটেল।
১৯৯৯ সালে ফান বাও ইউ বেইজিংয়ের একটি পর্যটনস্থানে কাজ করতেন। বেইজিংয়ে কাজ করার এক বছরে ফান বাও ইউ'র আয় বেশি ছিল না। তখন তিনি নিজের জন্মস্থানে পর্যটন শিল্প উন্নয়নের কথা জানতে পারেন। তিনি দাচাই গ্রামে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
তখন দাচাই গ্রামের অবস্থা ছিল খারাপ। গ্রাম থেকে বাইরে যাওয়ার কোনো সড়কপথ ছিল না। কিন্তু এখানকার দৃশ্য খুবই সুন্দর। অনেক ফটোগ্রাফার দৃশ্যের ছবি তোলার জন্য এখানে আসতেন। ফান বাও ইউ মনে করেন, তাঁর জন্মস্থানের পর্যটন-শিল্প অবশ্যই উন্নত হতে পারে।
কিন্তু ২০০৩ সালে দাচাই'র মাথাপিছু বার্ষিক আয় ৭০০ ইউয়ানেরও কম ছিল। ফান বাও ইউ নিজের হোটেল নির্মাণ করতে চাইলেন। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দাদের চোখে এটি ছিল খুবই কঠিন ও অলাভজনক কাজ।
ফান বাও ইউ বলেন, ‘বেইজিংয়ে কাজ করার সময় আমার বেতন কম ছিল। কিন্তু আমি কিছু অর্থ সঞ্চয় করেছি। পরে আমি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছি। আমি আমার গরুগুলোও বিক্রয় করেছি। তিন বছরের মধ্যে আমি নিজের প্রথম হোটেল নির্মাণ করতে সক্ষম হই।’
এভাবে ফান বাও ইউ নিজের প্রথম হোটেল চালু করেন। ২০০৩ সালের ২৬ জুন দাচাই গ্রামের পর্যটন-কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। একই দিন ফান বাও ইউ'র হোটেলও চালু হয়।
তিনি বলেন, ‘আমার হোটেল চালু হওয়ার প্রথম দিনে আমি ৩৫০ ইউয়ান পেয়েছি। তখন আমাদের গ্রামের মাথাপিছু বার্ষিক আয় ছিল শুধু ৭০০ ইউয়ান।’
এখানকার দরিদ্র গ্রামবাসীরা নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের উপায় খুঁজে পেয়েছেন। কিন্তু তাঁরা জানেন, পর্যটন শিল্প উন্নয়নের ভিত্তি হলো গ্রামটির অবকাঠামো উন্নয়ন করা। ২০০৭ সালে দাচাই গ্রাম একটি পর্যটন কোম্পানির সঙ্গে সহযোগিতার চুক্তি স্বাক্ষর করে। দু'পক্ষ একসাথে অবকাঠামো উন্নয়ন করে।
এ সম্পর্কে ফান বাও ইউ বলেন, ‘আমাদের গ্রামের সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য হলো আমাদের টেরেস। আমরা ভালোভাবে টেরেস চাষ করলে, সুন্দর দৃশ্য পাওয়া যায়। এর মাধ্যমে আরো বেশি পর্যটককে আকর্ষণ করা যাবে।’
২০১৫ সালে দারিদ্র্যবিমোচন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ শুরুর পর, লংশেং জেলার পৌর সরকার ৫০ কোটি ইউয়ান বরাদ্দ দিয়ে দাচাই গ্রামসহ বিভিন্ন স্থানের পর্যটন অবকাঠামো উন্নয়ন করে। গোটা জেলার পর্যটনস্থানগুলোকে নতুন সড়কপথের মাধ্যমে সংযুক্ত করা হয়।
ফান বাও ইউ বলেন, ‘বিগত কয়েক বছরে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। পর্যটকের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে, আমাদের আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের গ্রামে ২৯৩টি পরিবার আছে। বর্তমানে গ্রামে পারিবারিক হোটেল ১৮৬টি। প্রতিটি পরিবারের হোটেল থেকে বার্ষিক আয় গড়ে ৬০ হাজার ইউয়ান। কেউ কেউ ৩ থেকে ৪ লাখ ইউয়ানও আয় করেন।’
এ ছাড়াও, গ্রামের মানুষ ৭ শতাংশ লভ্যাংশ পেয়ে থাকে। ২০১৯ সালে কালেকটিভ অর্থনৈতিক লভ্যাংশ মোট ৭২ লাখ ইউয়ান ছিল, যা মাথাপিছু ৫৮০০ ইউয়ানেরও বেশি। এটি হলো গ্রামটির ইতিহাসের নতুন রেকর্ড।
গ্রামবাসী ফান ইং ফান গত বছর ৫.৮ হাজার ইউয়ান লভ্যাংশ পেয়েছেন। তিনি টানা তিন বছর গ্রামটির সর্বোচ্চ লভ্যাংশ পেয়ে আসছেন। ২০১৯ সালে দাচাই গ্রাম সম্পূর্ণভাবে দারিদ্র্য থেকে মুক্ত হয়।
২০১৫ সালে দাচাই গ্রামে দারিদ্র্যবিমোচন পরিকল্পনা কার্যকর হওয়ার পর, গ্রামটির কমিশন ৩০ জনেরও বেশি তরুণ নিয়ে সিড়ির ধাপের মতো থাককাটা মাঠ সুরক্ষাকাজ শুরু করে।
ফান ইং ফাংয়ের চাষ করার ক্ষেত্রে দক্ষতা বেশি। তিনি নিজের চাষক্ষেত্রে কাজ করা ছাড়াও অন্যান্য গ্রামবাসীকে সহায়তা করেন। সেজন্য প্রতি বছর তাঁর লভ্যাংশ অনেক বেশি থাকে।
এ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘২০১৭ সালে আমার লভ্যাংশ ছিল ৫.২ হাজার ইউয়ান, ২০১৮ সালে ছিল ৫.৬ হাজার ইউয়ান, ২০১৯ সালে ছিল ৫.৮ হাজার ইউয়ান। আমি শুধুমাত্র এ ক্ষেত চাষ করার মাধ্যমে দারিদ্র্য থেকে মুক্ত হয়েছি।’
বর্তমানে দাচাই গ্রামের বাসিন্দারা শুধুমাত্র দৃশ্যস্থান হিসাবে টেরেসের চাষই করে তা নয়, বরং বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে তা করে, যাতে খাদ্যশস্য উত্পাদনের পরিমাণও বৃদ্ধি পায়। আসলে দাচাই গ্রামের প্রাকৃতিক দৃশ্য, চাষক্ষেত্র ও বন একে অপরের পরিপূরক।
গ্রামটির আদি বন সুরক্ষার জন্য গ্রামের কমিশন ২০ জন বাসিন্দা নিয়ে বন রক্ষী দল গঠন করেছে। বন রক্ষী দল দুই দিনে একবার গোটা বনে টহল দেয়।
গত শতাব্দীতে বনের অনেক ক্ষতি হয়। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দারা বনের সম্পদ ক্ষতি করার মাধ্যমে ধনী হননি। বর্তমানে তাঁরা পর্যটন উন্নয়নের মাধ্যমে মুনাফা পেয়েছেন। পাশাপাশি তাঁদের মধ্যে প্রাকৃতিক পরিবেশ সুরক্ষার নতুন চেতনা সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, ‘বন না হলে আমাদের গ্রাম নেই। বন, চাষ ক্ষেত্র ও গ্রাম হলো আমাদের জনস্থান। বন সুরক্ষা করা হলো নিজের বাড়ি সুরক্ষা করা।’
গ্রাম পর্যটন উন্নয়নের মাধ্যমে দাচাই গ্রাম সম্পূর্ণভাবে দারিদ্র্য থেকে মুক্ত হয়েছে। গ্রামটির মাথাপিছু বার্ষিক আয় ২০০৩ সালের ৭০০ ইউয়ান থেকে বেড়ে ২০১৯ সালে ১৫ হাজারে উন্নীত হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বিশ্বাস করেন, সবুজ পাহাড় ও পানি হলো স্বর্ণ ও রৌপ্যের পাহাড়। (ছাই/আলিম)