‘বিশ্ব উন্নয়ন উদ্যোগ’ ও ‘বিশ্ব নিরাপত্তা উদ্যোগে’র পর, আন্তর্জাতিক সমাজের জন্য চীনের আরেকটি নতুন উপহার ‘বিশ্ব সভ্যতা উদ্যোগ’। মানবজাতির আধুনিকীকরণ প্রক্রিয়া ও মানবজাতির অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটি প্রতিষ্ঠার কাজ ত্বরান্বিত করবে প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং প্রস্তাবিত উদ্যোগটি।
১৫ মার্চ বেইজিংয়ে সিপিসি ও বিশ্ব রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে উচ্চ-পর্যায়ের সংলাপে ‘গ্লোবাল সিভিলাইজেশন ইনিশিয়েটিভ’ বা ‘বিশ্ব সভ্যতা উদ্যোগে’র প্রস্তাব করেন প্রেসিডেন্ট সি। সেখানে ভাষণে তিনি বলেন, ‘আজকের বিশ্বে বিভিন্ন দেশের অভিন্ন ভাগ্য রয়েছে। বিভিন্ন সভ্যতার সহনশীলতা ও সহাবস্থান, আদান-প্রদান ও পারস্পরিক শিক্ষা গ্রহণ মানব জাতির আধুনিকায়ন এবং বিশ্ব সভ্যতার সমৃদ্ধিতে অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে। তাই আমি বিশ্ব সভ্যতা উদ্যোগ উত্থাপন করছি’।
ভাষণে সি চিন পিং বলেন, আধুনিকায়নের চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো মানুষের স্বাধীন ও সার্বিক উন্নয়ন সাধন করা। রাজনৈতিক দলের উচিত সুন্দর জীবনের প্রতি মানুষের সদিচ্ছাকে কেন্দ্র করে সভ্যতার অগ্রগতির প্রতি তাদের প্রত্যাশা পূরণ করা এবং পরিচ্ছন্ন রাজনীতি, সমৃদ্ধ মানসিকতা, স্থিতিশীল সমাজ এবং স্নিগ্ধ পরিবেশ গঠন করা, যাতে আধুনিকায়নের মাধ্যমে মানুষের বিভিন্ন ক্ষেত্র ও বহু স্তরের চাহিদা মেটানো, বর্তমান প্রজন্মের মানুষের কল্যাণ অর্জনের পাশাপাশি পরবর্তী প্রজন্মের স্বার্থ রক্ষা এবং মানব জাতির টেকসই উন্নয়ন সাধন করা যায়।
ভাষণে সি চিন পিং আরও বলেন, ‘আমাদের উচিত আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক সহযোগিতা জোরদার এবং বিশ্ব সভ্যতা নিয়ে সংলাপ ও সহযোগিতার ক্ষেত্র গঠন করার পাশাপাশি আদান-প্রদানের বিষয় সমৃদ্ধ এবং সহযোগিতার পথ সম্প্রসারণ করা, যাতে বিভিন্ন দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগ ও আন্তরিকতা বাড়ানো এবং মানব সভ্যতার অগ্রগতি অর্জন করা যায়।
প্রেসিডেন্ট সির ওই প্রস্তাবে আরও বলা হয় যে, বিশ্বের দেশগুলোর উচিত বিশ্বব্যাপী সভ্যতার বৈচিত্র্যকে সম্মান করা এবং সমতা, পারস্পরিক শিক্ষা, সংলাপ এবং অন্তর্ভুক্তির নীতিগুলোকে সমুন্নত রাখা এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়ের মাধ্যমে বিচ্ছিন্নতাকে অতিক্রম করা, পারস্পরিক শিক্ষার মাধ্যমে বৈপরিত্য অতিক্রম করা এবং শ্রেষ্ঠত্বের অনুভূতি অতিক্রম করে সহাবস্থান করা।
চীনের সরকারি তরফে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট সি’র নতুন উত্থাপিত উদ্যোগটি আন্তর্জাতিক সমাজে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। বিদেশি বিশেজ্ঞরা মনে করেন, এ উদ্যোগ বিভিন্ন সভ্যতার মধ্যে বিনিময় ত্বরান্বিত করবে।
সিজিটিএন পরিচালিত বিশ্বব্যাপী তিনটি সমীক্ষায় দেখা গেছে প্রেসিডেন্ট সি প্রস্তাবিত বৈশ্বিক সভ্যতা উদ্যোগ সমর্থন করেছেন বিশ্বের ৮০ ভাগের বেশি মানুষ।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, জাপান, পাকিস্তান, ভারত, নাইজেরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রাজিল, পেরু, মেক্সিকোসহ বিশ্বের ৪০টি দেশ ও অঞ্চলের ১৫ হাজার ৫৭৪ জন উত্তরদাতার ওপর এ জরিপ চালানো হয়।
সিজিটিএনের জরিপ অনুসারে বিশ্বের ৮০.৩ শতাংশ উত্তরদাতা একমত পোষণ করেন এবং বিশ্বাস করেন যে, বিশ্বের একাধিক সভ্যতার অস্তিত্ব বিশ্বের উন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। ৮৫ শতাংশ উত্তরদাতারা বিশ্বাস করেন যে মানুষ সামগ্রিকভাবে আন্তঃসংযুক্ত এবং আমাদের উচিত সহনশীলতা এবং সহযোগিতার বৈশিষ্ট্যযুক্ত একটি অভিন্ন ভবিষ্যতের একটি সম্প্রদায় গড়ে তোলা।
এ ছাড়া ৮৯.৬ শতাংশ উত্তরদাতা দেশগুলোকে খোলামেলা ও সহনশীলতার সাথে সংলাপ ও সহযোগিতা জোরদার করার আহ্বান জানিয়েছেন। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এ সমর্থনের হার ৯৩.৭ শতাংশ।
চীনের রাষ্ট্রীয় বার্তাসংস্থা সিনহুয়ার এক সংবাদ ভাষ্যে বলা হয়েছে, চীনের প্রেসিডেন্টের প্রস্তাবিত বৈশ্বিক সভ্যতা উদ্যোগ, বহুবিধ চ্যালেঞ্জ ও সংকটে ভরা বিশ্বে মানব সমাজের সাধারণ উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে তাজা এবং শক্তিশালী শক্তি সঞ্চার করবে।
হাজার হাজার মাইল বিস্তৃত, প্রাচীন সিল্ক রোড সহযোগিতা, পারস্পরিক শিক্ষা এবং পারস্পরিক সুবিধার চেতনাকে মূর্ত করেছে। ২০২৩ সাল চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ-বিআরআই প্রস্তাবের ১০তম বার্ষিকী। এটি অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর জনগণের জন্য বাস্তব সুবিধা নিয়ে এসেছে এবং জনগণের মধ্যে বিনিময়কে উন্নীত করেছে। বিআরআইয়ের ১০ম বার্ষিকীতে চীন এমনই আরেকটি কল্যাণকর ‘বিশ্ব সভ্যতা উদ্যোগ’ উপহার দিল বিশ্বাবাসীকে।
সভ্যতার বৈচিত্র্য প্রকৃতিতে মানব বিকাশে প্রাণশক্তি ও গতির উৎস। মানব সভ্যতার অগ্রগতি ও বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় বিপুল জ্ঞান এবং শক্তির যোগান দেওয়ার জন্য জনগণের মধ্যে-মানুষের বিনিময় এবং পারস্পরিক শিক্ষার প্রচার করা অত্যন্ত মূল্যবান।
সিনহুয়ার ভাষ্যে বলা হয়েছে, দীর্ঘস্থায়ী শান্তি এবং সার্বিক কল্যাণসহ একটি বিশ্ব গড়তে আমাদের উচিত ‘বিশ্ব সভ্যতা উদ্যোগ’কে আলিঙ্গন করা।
একটি ফুলে বসন্ত আসে না, একশোটি ফুল ফুটলে তবেই বসন্ত আসে। একসাথে, আমরা বিশ্ব সভ্যতার বাগানকে রঙ এবং জীবন পূর্ণ করতে পারি।
মাহমুদ হাশিম
ঢাকা স্টেশন, চীন আন্তর্জাতিক বেতার।