চা খান, ঝামেলা হলে আলোচনা করুন
2023-03-17 17:13:59

এটা হল চীনের মধ্যাঞ্চলের আন হুই প্রদেশের হুয়াই পেই শহরের লিন হুয়ান থানা। একে প্রাচীন চা থানা হিসেবে বলা হয়। এটি একটি হাজার বছরের পুরানো থানা। এখানে সবচেয়ে বিখ্যাত স্থান হল পুরোনো চায়ের দোকান।

লিন হুয়ান মানুষের চান পান করার রীতিনীতির ছয় শতাধিক বছরের ইতিহাস আছে। এখন থানায় ২০টিরও বেশি চায়ের দোকান আছে। ভোর পাঁচটায় খোলে, রাত দশটায় বন্ধ হয়। ইচ্ছা থাকলে আপনি চা দোকানে সারা দিন বসে থাকতে পারেন।

চা দোকানে প্রতিদিন খুব মানুষের ভিড় দেখা যায়। লোকজন চা পান করে, আড্ডা দেয়। এ ছাড়া ঝামেলা হলে, ঝগড়া হলে চা দোকানে বসে কথা বলে মধ্যস্ততা করে। চলো, চা দোকানে বসে সমস্যা সমাধান করি। এটা হল ঝগড়ার সময় লিন হুয়ান মানুষের সবসময়ের অভ্যাস।

এটা হল ই সিন চায়ের দোকান। স্থানীয় সবচেয়ে সমৃদ্ধ চায়ের দোকান। ২০১৭ সাল থেকে লিন হুয়ান থানার গণ-প্রতিনিধি এখানে ‘জাতীয় গণ কংগ্রেস এনপিসি’র প্রতিনিধির বিনিময় কক্ষ’ স্থাপন করা হয়েছে। প্রতি মাসের দশ তারিখে জেলা এবং থানার এনপিসির প্রতিনিধিরা এখানে জনগণের মতামত শোনেন, জবাব দেন এবং জনগণের যৌক্তিক প্রস্তাবগুলো সরকারের কাছে তুলে ধরেন। এদিন থানায় এনপিসি’র প্রতিনিধি হ্য ওয়েই চুন স্থানীয়দের সঙ্গে থানার পুরানো দরজা পুনর্নির্মাণ কাজ নিয়ে আলোচনা করেছেন।

এনপিসি’র প্রতিনিধি হ্য বলেন, দেখুন, আমাদের দক্ষিণের দরজা দারুণ দর্শনীয়। এর উচ্চতা ১৫ মিটার, পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে ১২ মিটার চওড়া, আর দক্ষিণ থেকে উত্তর দিকে ৯ মিটার!

 

বাসিন্দা শেন রো পিং বলেন, আমাদের লিন হুয়া থানার দরজার ৩ শতাধিক বছরের ইতিহাস আছে। তা আমাদের জায়গার প্রতীক। ৪০ বছর আগে বাতাস ও বৃষ্টির কারণে দেয়াল ধ্বংস হওয়ার ঝুঁকিতে পড়ে। তখন বাধ্য হয়ে দেয়ালটি উঠিয়ে দেই। আমরা আবার থানার দরজা নির্মাণ করতে চাই। যা আমাদের লিন হুয়ানের প্রতীক, আমাদের লিন হুয়ানের মূল চেতনা এটাই।

প্রতিনিধি হ্য বলেন, জনগণ বার বার আমাদের কাছে পুনরায় থানার দরজাটি পুনর্নির্মাণের আশা ব্যক্ত করেন। আমরা থানা প্রশাসনের কাছে আবেদন জানাই। থানার সরকার প্রাচীন থানা সংরক্ষণ প্রকল্পের মাধ্যমে ঊর্ধ্বতন সরকারের কাছে বিশেষ অর্থের জন্য আবেদন করা হয়। এরপর আমরা পুনর্নির্মাণের অর্থ পাই। আমরা নির্মাণের প্রস্তাব নিয়ে জনগণের মতামত সংগ্রহ করেছি। যাতে তাদের স্মৃতিতে সেই রকম দরজা নির্মাণ করা যায়।

এনপিসি’র প্রতিনিধি জনগণের মাঝে যান, তাদের জন্য আকর্ষণীয় বিভিন্ন বিষয়ে জনগণের মতামত শোনেন। তারপর সরকারকে সার্বিক মতামত দেন এবং এসব কাজ বাস্তবায়নের বিষয় তত্ত্বাবধান করেন।

 

লিন হুয়ান থানার উপ-প্রধান ইয়াং জি ছুং বলেন, চা দোকান হল আমরা জনগণের মতামত শোনা এবং সংগ্রহ করার জানালা। তাদের কাছে জরুরি ব্যাপার, যেমন বিদ্যুত্, পানি, সড়ক নির্মাণ, বাড়িঘর নির্মাণকে চলতি বছর আমাদের প্রধান কাজের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে আমরা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের কর্মগ্রুপ গঠন করেছি, সময়মত এনপিসি’র প্রতিনিধির তত্ত্বাবধান গ্রহণ করি।

এ ছাড়া, চা দোকানে মধ্যস্থতার কক্ষও আছে। সমাজের বিভিন্ন দ্বন্দ্ব সেখানে সমাধান করা যায়।

হুয়াই পেই শহরের রীতিনীতি সংস্কৃতি গবেষক লি ছিয়ান বলেন, চা পান করুন, শান্তি সবচেয়ে মূল্যবান। এক কাপ চা খাওয়ান, তা শুধু চীনাদের অভ্যর্থনার পদ্ধতি না, বরং তা ‘সুষমভাবে নিজের মতামত পোষণ করা’ ‘ঐকমত্য ছাড়া অন্যের মতামতকে সম্মান করার’ চীনাদের চেতনার প্রতিফলন। ২০০৮ সালের বেইজিং অলিম্পিক গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দু’টি চীনা অক্ষর দেখা যায়, তা হল ‘সুষম’ এবং ‘চা’। যা একদিকে চীনা জাতির আত্মিকসভ্যতা এবং বস্তুগত সভ্যতার প্রতীক। পাশাপাশি তা চা ও সুষম ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বর্ণনা করে।

 

লিন হুয়ান থানার চা দোকানের মধ্যস্থতা কেন্দ্রের পরিচালক ওয়াং সি হুং বলেন, আমাদের এখানে, দুইজন মানুষের মধ্যে দূরত্ব হল এক কাপ চা-এর দূরত্ব। এক কাপ চা আমাদের মনের বিরক্তি দূর করতে পারে। মানুষরা বসে ভালোভাবে কথা বলে ভালোভাবে বিনিময় করতে পারে। এক কাপ চায়ের মাধ্যমে একটি মামলা এড়ানো যায়। কয়েক ইউয়ান খরচ করে প্রতিবেশীদের মধ্যে ঝামেলা দূর করা যায়। দীর্ঘ সময়ে আমরা দেড় হাজারের মতো ঝামেলাপূর্ণ বিষয়ে মধ্যস্থতা করেছি, সাফল্যের হার ৯৫ শতাংশ। জনগণের উপর নির্ভর করে জনগণের কাজ সমাধান করার এই পদ্ধতি চীনের গণতন্ত্র ও চীনের বুদ্ধির পরিচয়।