পঁয়ষট্টি বছর বয়সী লিয়াং উই চিয়ে ফটোগ্রাফিকে অনেক ভালোবাসেন। তেত্রিশ বছর বয়সে তিনি হাতের ক্যামেরা দিয়ে ট্রেনের ছবি তুলতে শুরু করেন। এর পর বাষ্পীয় লোকোমোটিভ থেকে শুরু করে উচ্চ-গতির রেলগাড়ি পর্যন্ত তিনি তার লেন্স দিয়ে সময়ের উন্নয়ন লিপিবদ্ধ করেছেন। গত ৩০ বছরে তিনি ট্রেনের ২ লাখেরও বেশি ছবি তুলেছেন এবং তিনি ‘চীনের গতির’ পরিবর্তনও প্রত্যক্ষ করেছেন।
বিগত ৩০ বছরে তিনি লিয়াওনিং প্রদেশের সমস্ত রেললাইন ঘুরে বেড়িয়েছেন। এমনকি বাষ্প রেলের খনি, কারখানা এবং বিদ্যুৎ উত্পাদন কোম্পানিতে চলে গিয়েছেন। কতবার তিনি ট্রেনে উঠেছেন এবং কত কিলোমিটার ভ্রমণ করেছেন, তা গণনা করার উপায় নেই। পুরনো শিল্প ঘাঁটি হিসেবে লিওনিংয়ের অবিস্মরণীয় দুর্দান্ত পরিবর্তন এবং ট্রেনের সাথে তার অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক রেকর্ড করছে এসব ছবি।
লিয়াং উই চিয়ে ১৯৫৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৮৩ সালে চীনের রেনমিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে স্নাতক হন। তিনি লিওনিং প্রদেশের পর্যটন ব্যুরোর একজন কর্মী ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রত্নতত্ত্ব কোর্স পড়াকালে তিনি প্রথম ক্যামেরার দেখা পান। পরে আস্তে আস্তে তিনি ফটোগ্রাফিকে ভালোবেসে ফেলেন।
১৯৮১ সালে তিনি দুটি গ্রীষ্মকালীন ছুটির সময় পার্টটাইম কাজ করার মধ্যমে ১৭৯ ইউয়ান উপার্জন করে তার জীবনের প্রথম ক্যামেরা অথবা সিগনাল ক্যামেরা কিনেছিলেন। ২০০৫ সালে তিনি তার প্রথম ডিজিটাল ক্যামেরা কিনেছিলেন। ২০১০ সালে ভিডিও রেকর্ডিং ফাংশন যুক্ত ডিজিটাল ক্যামেরা কিনেছিলেন এবং তিনি তার সরঞ্জাম আপগ্রেড করে যাচ্ছেন।
ত্রিশ বছরেরও বেশি সময় তিনি ফটোগ্রাফিতে বিনিয়োগ করেছেন। কেউ একজন মজা করে তাকে জিজ্ঞেস করলো, কেন সে গাড়ি কেনেনি, আর সে হেসে বলল, ‘ভাই, তুমি দেখো, গাড়িটা আমার কাঁধে। এটা গাড়ির চেয়েও দামী।’
যারা লিয়াং উই চিয়ে’র বাড়িতে গেছেন- তারা মুগ্ধ হয়েছেন যে এটি বাড়ি নয়, বরং একটি জাদুঘরের মতো। ছয় সেট লোহার ক্যাবিনেটে ফটোগ্রাফিক সরঞ্জাম আছে। ফিল্ম এবং সিডি ইত্যাদিতে ভরা, যা তিনি একবার ব্যবহার করেছিলেন।
বসন্ত উৎসব কাটাতে নিজের জন্মস্থানে ফিরে যাওয়ার অভিজ্ঞতার কারণে লিয়াং উইচিয়ে ট্রেনের শুটিং শুরু করেছিলেন। তার জন্মস্থান লিও নিং প্রদেশের ছাও ইয়াং শহরের নিউহেলিয়াং ধ্বংসাবশেষের কাছে। খাড়া ঢাল এবং বক্রতার কারণে এখানে যেতে বুস্টার ট্রেনের প্রয়োজন হয়। তাই একটি ট্রেনের সাহায্যে আরেকটি ট্রেনের আরোহণের অদ্ভুত দৃশ্য দেখা যায়। অনেক বিদেশী আকৃষ্ট হয়ে ট্রেনের ছবি তুলতে এখানে এসেছেন।
‘আমাদের ট্রেনের ছবি তোলার জন্য বিদেশীরা হাজার হাজার মাইল পারি দিয়ে চীনে এসেছেন, আমরা কেন এই ভালো বিষয় নিজেরা রেকর্ড করি না? এরপর থেকে লিয়াং উইচিয়ে ট্রেনের ছবি তোলা শুরু করেন।
লিয়াং উইচিয়ে’র মনে আছে যে তিনি যখন প্রথমবার একটি বাষ্পীয় লোকোমোটিভের শুটিং করছিলেন, তখন প্রস্তুতির অভাবে তিনি একটি বন্য পাহাড়ে আটকা পড়েছিলেন। অসহায় লিয়াং উইচিয়ে বুঝতে পারছিলেন না কোথায় যাবেন। তিনি কেবল পাহাড়ের পাদদেশের আলোগুলোকে অনুসরণ করেন এবং সামনের দিকে এগিয়ে চলেন। একজন দয়ালু লোকের সাহায্যে তিনি প্রথম শুটিং শেষ করেছিলেন।
সেরা শুটিং দৃষ্টিকোণ খুঁজে পেতে লিয়াং উইচিয়ের কাছে গাছে বা দেয়ালে আরোহণ করা সাধারণ ব্যাপার। কখনও কখনও লিয়াং উইচিয়ে একটি ভাল শট নেওয়ার জন্য প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করেন। শুটিংয়ের আরও সুবিধার জন্য লিয়াং উইচিয়ে পরে একটি স্কুটার গাড়ি কিনেছেন এবং তার সরঞ্জামগুলো আরও সম্পূর্ণ হয়ে উঠেছে।
সময়ের বিকাশের সাথে সাথে রেলওয়ে, খনির এলাকায় এবং কারখানায় বাষ্পীয় ইঞ্জিনযুক্ত ট্রেন ধীরে ধীরে ইতিহাসের মঞ্চ থেকে সরে গেছে। লিয়াং উইচিয়ে’র লেন্সে বাষ্পীয় লোকোমোটিভগুলো সেই সময়ের সমস্ত প্রতিনিধিত্বকারী মডেল। তিনি লেন্স দিয়ে ইতিহাস রেকর্ড করেছেন; তাদের অনেক দৃশ্য এখন দেখা কঠিন।
সময়ের চাকা এগিয়ে যাচ্ছে এবং রেলওয়ের উন্নয়নও দিন দিন বদলে যাচ্ছে। ট্রেনের মডেল এবং রুটগুলো ক্রমাগত অপ্টিমাইজ এবং সামঞ্জস্যপূর্ণ করা হচ্ছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির দ্রুত বিকাশের সাথে বাষ্প ইঞ্জিনের যুগের পরে লিয়াং উইচিয়ের ক্যামেরা রেলওয়ে’র ডিজেল লোকোমোটিভ এবং বৈদ্যুতিক লোকোমোটিভগুলোতে ফোকাস করতে থাকে।
লিয়াং উইচিয়ে বলেন, তাকে যা সবচেয়ে বেশি সুখী করে তোলে- তা হলো তিনি নিজেই এই উন্নয়ন প্রক্রিয়ার একজন সুবিধাভোগী, অংশগ্রহণকারী এবং সাক্ষী।