শেকড়ের গল্প | পর্ব ০৯
2023-03-15 15:38:18

জীববৈচিত্র্য সুরক্ষায় অগ্রগামী চীন | শেকড়ের গল্প | পর্ব ০৯

বিশ্ববাসীকে ক্ষুধামুক্ত রাখতে অল্প অল্প করে ভূমিকা রাখছে চীনের অত্যাধুনিক কৃষি প্রযুক্তি। পেছনে পড়ে থাকা ছোট ছোট গ্রামগুলো মুক্তি পাচ্ছে দারিদ্রের শেকল থেকে। স্বল্প পরিসরের উদ্যোগগুলো দেখছে সফলতার মুখ, অনুসঙ্গ হচ্ছে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির।

 

ম্যানগ্রোভ অরণ্য রক্ষায় বিশেষ নজর দিয়েছে চীন

উপকূলীয় অঞ্চলের ভাঙন রক্ষা থেকে শুরু করে জীববৈচিত্র্য সুরক্ষায় বেশ বড় ভূমিকা রয়েছে ম্যানগ্রোভ অরণ্যের। সবুজ এই বিশ্বকে রক্ষা করতেও ভীষণ প্রয়োজন এই অরণ্যের। যেকোন ম্যানগ্রোভ অরণ্যকে বলা হয় সমুদ্র সীমার প্রহরী। তাইতো বিশ্বজুড়েই নানা রকম পদক্ষেপ নেয়া হয় ম্যানগ্রোভ অরণ্য রক্ষায়। চীনের কুয়াংতং প্রদেশের শেনচেন সিটির ম্যানগ্রোভ অরণ্য রক্ষায় বিশেষ নজর দেয়া হয়েছে।

 

 

উপকূলীয় অঞ্চলের প্রধান রক্ষাকবচ হলো ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে সমুদ্র স্তর বাড়ছে। উপকূলের অঞ্চলকে ভাঙন ও বিপর্যয় থেকে রক্ষা করতে ম্যানগ্রোভ অরণ্য কাজ করে একটি ঢাল হিসেবে । আর এই ম্যানগ্রোভ অরণ্য সুরক্ষায় অক্লান্ত কাজ করছেন বনকর্মীরা।

ম্যানগ্রোভকে বলা হয় ‘উপকূলের সবুজ অভিভাবক’। ম্যানগ্রোভ অরণ্য উপকূলের বাসিন্দাদের সামুদ্রিক ঝড়ের আঘাত থেকেও রক্ষা করে। পরিযায়ী পাখিসহ নানা রকম  প্রাণীর আশ্রয়স্থল হিসেবেও কাজ করে এই অরণ্য।  যা জীববৈচিত্র্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

ফুথিয়ান ম্যানগ্রোভ ইকোলজিকাল পার্ক এখন পাখিদের স্বর্গে পরিণত হয়েছে। প্রতিবছর এক লাখের বেশি পরিযায়ী পাখি এখানে আসে। বিপন্ন প্রজাতির ব্ল্যাক ফেসড স্পুনবিল পাখির জন্য এটা অন্যতম বড় শীতকালীন আশ্রয়।

চীনের ম্যানগ্রোভ এলাকা ২০০১ সালে ছিল ২২ হাজার হেক্টর। পরিবেশ রক্ষায় সমন্বিত প্রচেষ্টার ফলে বর্তমানে এর আয়তন ২৭ হাজার হেক্টরে  পৌছেছে। পরিসর আরও বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। বিশ্বের খুব কম দেশেই ম্যানগ্রোভ অরণ্যের পরিসর বাড়ানো সম্ভব হয়েছে। শেনচেন সিটি হলো বিশ্বের প্রথম ইন্টারন্যাশনাল ম্যানগ্রোভ সেন্টার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ম্যানগ্রোভ রক্ষায় আরও উদ্যোগ নিতে হবে। 

ম্যানগ্রোভ অরণ্য সুরক্ষায় বিশেষজ্ঞরা এখন বিশ্বজুড়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণা বৃদ্ধি ও উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছেন। সবুজ পৃথিবীর পরিবেশ রক্ষায় প্রকৃতির অনন্য সৃষ্টি ম্যানগ্রোভ অরণ্যকে রক্ষা করতে বিশ্বজুড়ে প্রয়োজন সচেতনতা বৃদ্ধি ও সুরক্ষা কার্যক্রম।

 

জীববৈচিত্র্য সুরক্ষায় এক জীববিজ্ঞানীর প্রশংসনীয় উদ্যোগ

প্রাকৃতিক সম্পদ ও জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ দক্ষিণ পশ্চিম চীনের ইউননান প্রদেশ। তবে অনেক সময় বিভিন্ন কারণে পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেই ক্ষতিগ্রস্ত পরিবেশকে আবার প্রাকৃতিক করে তোলা, জীববৈচিত্র্যকে ফিরিয়ে আনা অনেক কঠিন। এই কঠিন কাজটি করেছেন একজন জীববিজ্ঞানী।

ইউননানের দাই স্বায়ত্তশাসিত প্রিফেকচারে সিশুয়াংবান্না বনাঞ্চল। এখানের একটি অংশে একসময় বন কেটে গড়ে ওঠে রাবার বাগান। কিন্তু এতে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই রাবার বাগানকে আবার অরণ্যে পরিণত করেন সুইস জীববিজ্ঞানী জেরার্ড বুরগারমেইসটার।

জেরার্ড ছিলেন একজন সুইস কূটনীতিক। তিনি বেইজিংয়ে সুইজারল্যান্ডের দূতাবাসে চাকরি করতেন। তার চাকরির সময়সীমা শেষ হলে তিনি ইউননানে এই রেইন ফরেস্ট প্রতিষ্ঠার কাজে এগিয়ে আসেন।

২০০৩ সাল থেকে তিনি এই কাজ শুরু করেন। তিনি গাছের বীজ ও চারা সংগ্রহ শুরু করেন। স্থানীয় বিভিন্ন গহাছের বীজ ও চারা দিয়ে তিনি অরণ্যের প্রাথমিক ভিত্তি স্থাপন করেন। ধৈর্যের সঙ্গে তিনি কাজ করতে থাকেন।

তার পরিশ্রমে সুফল ফলে। তার অরণ্যে এখন তিনশ প্রজাতির গাছ রয়েছে। তিনি গাছগুলোর যত্ন করেন। ভালোবাসেন।

অরণ্যটি এখন জীববৈচিত্রে সমৃদ্ধ। এখানে বিভিন্ন প্রজাতির কীট পতঙ্গ এবং প্রাণী বাস করছে।

জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন। অসীম ভালোবাসায় এই বিশ্বকে সবুজ করে তোলার জন্য কাজ করে চলেছেন এই প্রকৃতিপ্রেমী। জেরার্ড মনে করেন প্রকৃতিকে সম্মান করতে হয়। তাকে ভালোবাসতে হয়।

 

সমৃদ্ধ হচ্ছে চীনের পোল্ট্রি শিল্প

বাচ্চা থেকে শুরু বয়োবৃদ্ধ, কমবেশি সবাই নানা উপায়ে এর রান্না খেয়ে থাকেন। আবার ফ্রোজেন চিকেই ফ্রাইও বেশ জনপ্রিয়। কারণ দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করে এটি খাওয়া যায়। একারণে এ শিল্পের দ্রুত বিকাশ হচ্ছে, পাল্টে যাচ্ছে অর্থনীতির চিত্র। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো চীনের পোল্ট্রি শিল্পও বেশ সমৃদ্ধ। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে বাড়ছে উৎপাদন, রপ্তানী হচ্ছে প্রত্যাশার সীমানা ছাড়িয়ে।

 

 

প্রোটিনের উৎস হিসেবে বিশ্বব্যাপী বেশ কদর রয়েছে চিকেনের। কারণ একটি পরিবারের খাবারে নিত্যদিনের অনুসঙ্গ হয়ে থাকে নানা পদের চিকেন। তাইতো একটি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গড়ে ওঠে ছোট বড়  মুরগীর খামার।

বিশাল আকারের একটি খামার রয়েছে পূর্ব চীনের শানতুং প্রদেশে। এ রকম আরো কয়েকটি খামার রয়েছে এই প্রদেশের কাওমি সিটিতে।

এই খামামের বিশেষত্ব হলো এখানে সাদা পালকের মুরগী উৎপাদন হয় যার সংখ্যা প্রতি বছরে আড়াই লাখ ছাড়িয়ে যায় বেশি। পূর্ব চীনের জিয়াংসু প্রদেশের একটি বৃহৎ কৃষি বিতরণ কেন্দ্রে এই মুরগীর ব্যবসাটি বিকশিত হচ্ছে,  যেখানে প্রতিদিন প্রায় ৭ হাজার মুরগি বিক্রি হয়।

ছানার দাম সাধারণত সাদা পালকের মুরগির প্রজনন খরচের ২০ শতাংশেরও কম হয় এবং সাদা পালকের মুরগির দাম বৃদ্ধি ছানাগুলির দাম বাড়ার হারের চেয়ে কম। 

শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা বলছেন, বিদেশের তুলনায়, চাইনিজ ব্রয়লার মুরগির সরবরাহ তুলনামূলকভাবে বৈচিত্র্যময় থাকায় মুরগির বাজারমূল্য খুব একটা হেরফের হয় নি।

 

 

এটি মূলত চায়না মিডিয়া গ্রুপ-সিএমজি বাংলার বাংলাদেশ ব্যুরোর কৃষি বিষয়ক সাপ্তাহিক রেডিও অনুষ্ঠান।  যা সঞ্চালনা করছেন ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট এইচ আর এস অভি।

এ রেডিও অনুষ্ঠানটি আপনারা শুনতে পাবেন বাংলাদেশের রেডিও স্টেশন রেডিও টুডেতে।

শুনতে থাকুন শেকড়ের গল্পের নিত্য নতুন পর্ব । যেখানে খুঁজে পাবেন সফলতা আর সম্ভাবনার নানা দিক। আর এভাবেই চীনা কৃষির সঙ্গে শুরু হোক আপনার দিন বদলের গল্প।