‘তারুণ্যের অগ্রযাত্রা’ পর্ব ৯
2023-03-15 15:49:27

‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ অনুষ্ঠানে স্বাগত জানাচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী।  দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেওয়ার প্রধান হাতিয়ার তারুণ্য। তরুণরা চাইলেই পারে সমাজকে বদলে দিতে। এজন্য দরকার তাদের চিন্তা ও মেধার সমন্বয়। চীন ও বাংলাদেশের তরুণদের অফুরান সম্ভাবনার কথা তুলে ধরবো এই অনুষ্ঠানে। তরুণদের সৃজনশীলতার গল্পগাঁথা নিয়েই সাজানো হয়েছে আমাদের তারুণের অগ্রযাত্রা।    

১. চীনের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে আরও বেশি যুব-বিনিময় প্রত্যাশা হংকংয়ের রাজনৈতিক উপদেষ্টার 

চীনের শীর্ষ রাজনৈতিক পরামর্শ ফোরামে হংকং থেকে নির্বাচিত সদস্য ইয়েয়ুং চিং লুং বলেছেন, দেশটির মূলখণ্ড ও হংকংয়ের তরুণদের মধ্যে যোগাযোগ ও সম্পর্ক আরো বাড়াতে হবে। হংকংয়ের তরুণদের জীবনযাত্রার মানের আরো উন্নয়নের লক্ষ্যে তিনি নানা বিষয় নিয়ে কাজ করার কথা বলেন।  

চীনের বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল হংকং এবং চীনের মূল ভূখণ্ডের মধ্যে আরও যুব-বিনিময়ের আহ্বান জানিয়েছেন চীনের গণরাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলন সিপিপিসিসি’র ১৪তম জাতীয় কমিটিতে হংকংয়ের সদস্য এবং হংকং ইউনাইটেড ইয়ুথ অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান অ্যালেক্স ইয়েয়ুং চিং লুং। কুয়াতং-হংকং-ম্যাকাও গ্রেটার বে এরিয়ার উন্নয়নে আরও সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে এই অঞ্চলের তরুণদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। গেল সপ্তাহে চায়না গ্লোবাল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক (সিজিটিএন)কে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে এ তিনি কথা বলেন।

ইয়েয়ুং হংকংয়ের তরুণদের জীবনযাত্রার অবস্থার উন্নতি এবং বিনিময় কর্মসূচি বাস্তবায়নের প্রস্তাব দেন, যাতে হংকংয়ের তরুণদের গ্রেটার বে অঞ্চলের বিভিন্ন শিল্পে আরও বেশি অংশগ্রহণের সুযোগ হয়। এছাড়া গ্র্যাজুয়েটদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়ার পাশাপাশি আরও বেশ কিছু পরিকল্পনার কথা জানান তিনি।  

 

"প্রথম জিনিসটি হলো আরও ভালো আবাসন পরিস্থিতি। আমরা হংকং সরকারের সাথে যুব হোস্টেল প্রকল্পে কাজ করছি। তরুণদের জন্য খুব কম ভাড়ায় অনেক বড় এবং অনুকূল জীবনযাপনের পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছি। এছাড়াও, বিশেষ করে গ্রেটার বে অঞ্চলে অনেক চাকরির ক্ষেত্র চিহ্নিত করা হয়েছে এবং কর্মসূচি বিনিময় করা হচ্ছে, যাতে তরুণদের, বিশেষ করে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের, উৎসাহিত করা যায় এবং তারা আরও অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারে এবং বিভিন্ন শিল্পে নিজেদেরকে আরও বেশি তুলে ধরতে পারে।’’

ওয়ান্ডারিং আর্থ II-এর মতো চীনা চলচ্চিত্রকে হংকংয়ের তরুণদের কাছে চীনা চলচ্চিত্র প্রযুক্তির অগ্রগতি এবং বৈশ্বিক সংকট সমাধানের চীনা উপায় উপস্থাপন করার একটি হাতিয়ার বলে মনে করেন ইয়েয়ুং।

প্রতিবেদকঃ রওজায়ে জাবিদা ঐশী

২. 

হুবেই প্রদেশে ক্যম্পাস ভিত্তিক চাকরি মেলা চলছে     


নতুন প্রজন্মের দোরগোড়ায় কাজ পোঁছে দেয়া এবং আকর্ষণীয় পেশা বেছে নেয়ার সুযোগ করে দিতে বহুমুখী পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে চীন সরকার। এরই অংশ হিসেবে দেশের বিভিন্ন প্রদেশে বিভিন্ন সময়ে পরিচালনা করা হচ্ছে চাকরি মেলা। এবার ক্যাম্পাস ভিত্তিক চাকরি মেলা কার্যক্রম চলছে হুবেই প্রদেশে। 

কলেজ গ্র্যাজুয়েটদের কর্মসংস্থান বাড়াতে এবং ক্রমবর্ধমান শ্রম চাহিদা মেটাতে এ বছরের নিয়োগের মৌসুমে ক্যাম্পাসে ১৪০টিরও বেশি চাকরি মেলা শুরু করেছে মধ্য চীনের হুবেই প্রদেশ।

গেল সপ্তাহে প্রাদেশিক রাজধানী উহানের হুয়াংচৌ ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে আয়োজিত একটি চাকরি মেলায় প্রায় ৫’শ নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ৫০ হাজারের বেশি চাকরির প্রস্তাব নিয়ে জড়ো হয়। এ সব নিয়োগকারী উদ্যোগের ৪৪ শতাংশ শুধু উৎপাদন খাতের উপর। এরপরে রয়েছে নির্মাণ খাত, সফ্টওয়্যার এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাত, বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও প্রযুক্তি খাত। এ সব ক্ষেত্রে এ বছর আরও বেশি লোকবল নিয়োগের কথা জানান নিয়োগ বিশেষজ্ঞরা।  

চীন ফার্স্ট মেটালার্জিক্যাল গ্রুপ কোং লিমিটেডের একজন অংশীদার ব্যবসায়ী চাং সিওয়েন জানান,

''আমাদের কোম্পানি তিন বছরে তার অপারেটিং স্কেল দ্বিগুণ করতে চায়, তাই অন্যান্য বছরের তুলনায় আমাদের আরও জনবলের প্রয়োজন"

 


উহানের এই মেলায় নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলো যোগাযোগ ও সহযোগিতা দক্ষতার উপর উল্লেখযোগ্য হারে গুরুত্ব দেয়। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক অভিজ্ঞতা এবং ইন্টার্নশিপের অভিজ্ঞতাও মূল্যবান বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।  


চেচিয়াং কি লি হোল্ডিং গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেডের ক্যাম্পাস নিয়োগের ব্যবস্থাপক ছাই সুছিয়াং বলেন,

‘’শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের ভিতরে এবং বাইরে কিছু প্রকল্পে অংশগ্রহণের মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞান, দলগত কাজ এবং আত্ম-উন্নয়নে দক্ষতা তাদের একাডেমিক অধ্যয়নে একটি দৃঢ় পেশাদার ভিত্তি তৈরি করতে পারে।''  

চীনের অর্থনীতি পুনরুদ্ধার হওয়ায় এ ধরণের চাকরি মেলা নিয়োগকর্তা এবং চাকরিপ্রার্থীদের জন্য একটি ভাল ম্যাচমেকিং প্ল্যাটফর্ম প্রদান করছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

প্রতিবেদকঃ রওজায়ে জাবিদা ঐশী

৩.

চীনের তরুণদের মধ্যে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি

আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে চমকপ্রদভাবে চীনের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির প্রদর্শন তরুণদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। গত কয়েক বছরে চীনা সংস্কৃতিবাহী বিভিন্ন সাংস্কৃতিক শো ও প্রদর্শনী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ভাইরাল হয়েছে। যা দেশটির তরুণদের মধ্যে চীনা সংস্কৃতির সৌন্দর্যের প্রতি অনুরাগ জাগিয়ে তুলতে ভূমিকা রাখছে।

২০২১ সালের বসন্ত উৎসবে সিএমজি গালা নাইটের হাইলাইটে ‘থাং কং ইয়ে ইয়ান’ নামে একটি ডান্স শো’ পরিবেশিত হয়। সে সময় দর্শকরা বেশ প্রশংসা করে এই নৃত্যের। থাং রাজবংশের একদল নারী সঙ্গীতশিল্পীর একটি ভোজসভায় পরিবেশনার প্রস্তুতিরই বাস্তব চিত্র ফুটে ওঠে এই নৃত্যে, যা চীনের বাধাধরা ক্লাসিকাল নৃত্যের ধারণাকে ভেঙ্গে ফেলে এবং আরো  বাস্তবসম্মত শিল্পের বহিঃপ্রকাশকে পোক্ত করে।  

 

এই নৃত্য পরিবেশনা চেংচৌ নৃত্যদলের অনেক গুলো আধুনিক পরিবেশনার মধ্যে একটি। তাদের এই নতুন ধারার পরিবেশনা গুলো  চীনের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি ও আধুনিকতার মিশেলে তৈরি। নৃত্যদলটি বর্তমানে মাসব্যাপী জাতীয় সফরে আছে কারণ চীনজুড়ে এখন তাদের  জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। 

তাদের শো এর টিকিট চাহিদা এতো বেশি যে ছাড়ার পর মুহূর্তেই শেষ হয়ে যায় বলে জানান, চেনচৌ সং এন্ড ড্যান্স থিয়েটারের পরিচালক লৌ পিংপিং

‘জাতীয় সফরটি এক মাসব্যাপী স্থায়ী হবে। এই একমাসে দলটি কুয়াংসি, আনহুই এবং আরো কিছু প্রদেশে নৃত্য পরিবেশন করবে। আমি যতটুকু শুনেছি, তারা যেখানেই যাচ্ছে সেখানেই তাদের শো’য়ের টিকিট ছাড়া মাত্রই সব বিক্রি হয়ে যাচ্ছে।‘’    

‘হেনানের মানুষরা সবসময় এগিয়ে যেতে ভালোবাসে। আমরা চিন্তা করি মধ্য চীনের সমৃদ্ধ সংস্কৃতির সাথে কীভাবে আমাদের সংস্কৃতির আরো গভীর যোগ ঘটানো যায়। আরও কী নতুন উপায়ে আমাদের ঐথিহ্যবাহী চীনা সংস্কৃতি ছড়িয়ে দেওয়া যায় তাই নিয়ে আমরা সবসময় ভাবতে থাকি।’

 

এদিকে তরুণ গালা শো’র পরিচালক ছেন লেই অগমেন্টেড রিয়ালিটি এবং ভার্চুয়াল রিয়ালিটি সহ আরো কিছু আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে মঞ্চকে নিয়ে এসেছেন ভার্চুয়াল জাদুঘরের রূপে। সেখানে দেখাচ্ছেন সাংস্কৃতিক ধ্বংসাবশেষ। নতুন এই উদ্ভাবন তরুণদের জাদুঘরের প্রতি আকৃষ্ট করছে।

তরুণদের আগ্রহ প্রসঙ্গে হেনান জাদুঘরের পরিচালক, মা শাওলিন জানান, 

যারা ১৯৯০ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে জন্ম নিয়েছেন তাদের মধ্যে আধুনিক জীবন সম্বন্ধে ভালো ধারণা আছে। তবে একই সাথে তারা জাতির ঐতিহ্য নিয়েও জানতে চান।

মা আরো বলেন, চেনচৌ শহরের হেনান জাদুঘরে আগত ৭০ ভাগ দর্শকের বয়সই ৩৫ এর নীচে। পাশাপাশি জাদুঘরগুলিও তরুণ দর্শকদের টানতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়িয়েছে।

 

প্রতিবেদকঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন

 

আমাদের ‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ আজ এই পর্যন্তই । পরবর্তী অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ জানিয়ে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। শুভকামনা সবার জন্য।

 

পরিকল্পনা ,পরিচালনা ও সঞ্চালনা : রওজায়ে জাবিদা ঐশী

অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল

সার্বিক সম্পাদনা: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী