১৩ মার্চ বেইজিংয়ে চীনের চতুর্দশ জাতীয় গণ-কংগ্রেসের প্রথম অধিবেশন শেষ হয়েছে। এতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভাষণে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং জোর দিয়ে বলেন, ‘শক্তিশালী দেশ নির্মাণ ও জাতিগত পুনরুজ্জীবনের নতুন যাত্রায়, দৃঢ়ভাবে উচ্চ গুণগত মানের উন্নয়ন এগিয়ে নিতে হবে, মানবজাতির অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটি প্রতিষ্ঠা এগিয়ে নিতে হবে এবং উচ্চ মানের উন্মুক্তকরণ সম্প্রসারণ করতে হবে।’ ভবিষ্যতের বিষয়ে চীনের পরিকল্পনা শুধু নিজের অগ্রগতি অর্জন নয়, বরং তা বিশ্বের উন্নয়নের জন্য আরো বেশি সুযোগ ও শক্তি বয়ে আনবে।
এ বছরে চীনের দুই অধিবেশনে, চীনা বৈশিষ্ট্যময় আধুনিকায়নের উপর বিশ্ববাসী নজর রেখেছেন। চীনা বৈশিষ্ট্যময় আধুনিকায়নের প্রক্রিয়ায় , দুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ‘ উচ্চ গুণগতমানের উন্নয়ন’ ও ‘উচ্চ মানের উন্মুক্তকরণ’।
বিগত দশ বছরে, চীনের জাতীয় দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি প্রায় ৭০ ট্রিলিয়ন ইউয়ান বেড়েছে। প্রতি বছর গড় উন্নয়নের হার ছিল ৬.২ শতাংশ। চীন মধ্য ও উচ্চ গতির উন্নয়ন বাস্তবায়ন করেছে। এখন উচ্চ গুণগত মানের উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। সিপিসি’র বিংশ জাতীয় কংগ্রেসের কর্মপ্রতিবেদনে বলা হয়, উচ্চ গুণগত মানের উন্নয়ন হচ্ছে সার্বিকভাবে সমাজতান্ত্রিক আধুনিক দেশ নির্মাণের প্রধান মিশন। সাম্প্রতিক দুই অধিবেশনে, প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং আবারো এ বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছেন। এ ছাড়া উৎপাদন শিল্পের উচ্চ মান, বুদ্ধিমান ও সবুজ উন্নয়ন এগিয়ে নেওয়ার খাতেও তিনি নতুন দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন। চীন অব্যাহতভাবে উচ্চ গুণগতমানের উন্নয়ন এগিয়ে নিচ্ছে। যা শুধু চীনের অর্থনীতি ও সমাজের উন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে না, বরং বিশ্বের শিল্প চেইন ও সরবরাহ চেইনের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা, বিশ্ব বাণিজ্যের উন্নয়ন জোরদার করা এবং বিশ্বের অর্থনীতি উন্নত করার খাতেও ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
উন্মুক্তকরণ হচ্ছে চীনের একটি দীর্ঘমেয়াদী মৌলিক রাষ্ট্রীয় নীতি। বিগত ৫ বছরে, চীনের পণ্য আমদানি ও রপ্তানি খাতে প্রতি বছর গড় উন্নয়নের হার ছিল ৮.৬ শতাংশ। যা টানা অনেক বছর ধরে বিশ্বের শীর্ষস্থানে রয়েছে। ২০২২ সালে, চীনে বিদেশি পুঁজি বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ১৮৯ বিলিয়ন ডলার, যা একটি নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করে। পাশাপাশি, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হিসেবে, সাম্প্রতিক ১০ বছরে, বিশ্ব অর্থনীতি উন্নয়নের জন্য চীনের গড় অবদানের হারও ৩০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে।
‘চীনের উন্নয়ন বিশ্বের জন্য কল্যাণকর। চীনের উন্নয়ন বিশ্বকে ছাড়া হবে না। আমরা উচ্চ মানের উন্মুক্তকরণ এগিয়ে নেব। বৈশ্বিক বাজার ও সম্পদ সুষ্ঠুভাবে কাজে লাগানোর মাধ্যমে নিজকে উন্নত করার পাশাপাশি বিশ্বের অভিন্ন উন্নয়নকেও প্রমোট করব।’ প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের এ কথায় অব্যাহতভাবে উন্মুক্তকরণ সম্প্রসারণ করার চীনের দৃঢ় প্রতিজ্ঞা বোঝা যায়। চীন অব্যাহতভাবে উচ্চ মানের উন্মুক্তকরণ এগিয়ে নেবে এবং বিশ্বের অভিন্ন উন্নয়ন বাস্তবায়নের জন্য মেধা ও শক্তি যোগাবে।
বর্তমান বিশ্বে সংরক্ষণবাদ ও একতরফাবাদ দেখা দেয়। বিশ্ব অর্থনীতির উন্নয়ন নানা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। স্থিতিশীল উন্নয়ন হচ্ছে বিশ্ববাসীর মনের অভিন্ন কথা। চীনা জনগণ অবশ্যই নিজের প্রচেষ্টার মাধ্যমে চীনা বৈশিষ্ট্যময় আধুনিকায়ন এগিয়ে নেবে, নিজের উন্নয়নের মাধ্যমে বিশ্বের গণকল্যাণ বৃদ্ধি করবে এবং বিশ্বের শান্তি ও উন্নয়নের জন্য অব্যাহতভাবে নিজের অবদান রাখবে।
(আকাশ/তৌহিদ)