চীনের ‘দুই অধিবেশন’ বিশ্বে বসন্তের উষ্ণতা বয়ে আনবে
2023-03-14 16:31:51

মার্চ ১৪: চীনের জাতীয় গণকংগ্রেস (এনপিসি)-র প্রথম অধিবেশন গতকাল (সোমবার) শেষ হয়েছে। চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং সমাপন অনুষ্ঠানে বলেছেন, শক্তিশালী দেশ নির্মাণ ও জাতীয় পুনরুজ্জীবনের প্রক্রিয়ায়, কার্যকরভাবে উচ্চমানের বৈদেশিক উন্মুক্তকরণ ত্বরান্বিত করতে হবে। বিদেশী গণমাধ্যমগুলো মনে করে, ভবিষ্যতের জন্য চীনের পরিকল্পনা কেবল তার নিজস্ব দিক নির্ধারিত করেনি, বরং বিশ্বের জন্য বসন্তের উষ্ণতাও বয়ে আনবে।

সি চিন পিং তাঁর ভাষণে বলেন, এখন থেকে এ শতাব্দীর মাঝামাঝি পর্যন্ত, সার্বিকভাবে একটি আধুনিক ও শক্তিশালী সমাজতান্ত্রিক দেশ গড়ে তোলা এবং চীনা জাতির মহান পুনরুত্থান বাস্তবায়ন করা হলো সিপিসি ও সকল চীনা জনগণের কেন্দ্রীয় দায়িত্ব।

চলতি বছরের দুই অধিবেশনের চাবিকাঠি টার্ম ছিল: চীনা বৈশিষ্ট্যময় আধুনিকায়ন। যদি ‘চীনা বৈশিষ্ট্যময় আধুনিকায়ন’-কে একটি উন্নয়নের মহান লক্ষ্য ও প্রক্রিয়া হিসাবে বর্ণনা করা হয়, তাহলে ‘উচ্চমানের উন্নয়ন’ ও ‘উচ্চমানের বৈদেশিক উন্মুক্তকরণ’ এ প্রক্রিয়ার খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

বর্তমানে চীনা অর্থনীতি দ্রুত প্রবৃদ্ধির ধারণা থেকে উচ্চমানের উন্নয়নের ধারণার পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। এর মানে, চীন ‘অর্থনীতির কার্যকর উন্নতি এবং পরিমাণের যুক্তিসঙ্গত বৃদ্ধি ত্বরান্বিত’ করার দিকে মনোনিবেশ করছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে স্ব-নির্ভরতা অর্জন, শিল্পের কাঠামোগত রূপান্তর বাস্তবায়ন, এবং অর্থনীতি ও সমাজের সবুজ উন্নয়নের ক্ষেত্রে  সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে। ২০২২ সালে চীনের উচ্চপ্রযুক্তি, উচ্চ মূল্য সংযোজন পণ্য ও সবুজ রূপান্তর নেতৃস্থানীয় পণ্য রফতানি খাতের নতুন বৈশিষ্ট্য হয়ে উঠেছে। এর মধ্যে বৈদ্যুতিক গাড়ি রফতানি বছরে ১৩১.৮ শতাংশ বেড়েছে ও ফটোভোলটাইক পণ্য ৬৭.৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

এবারের দুই অধিবেশনে সি চিন পিং চিয়াংসু প্রদেশের প্রতিনিধিদলের সাথে এত সভায় পুনরায় উচ্চমানের উন্নয়নের কথা জোর দিয়ে বলেন। তিনি বলেন, উচ্চমানের উন্নয়ন হলো সার্বিকভাবে সমাজতান্ত্রিক আধুনিক দেশ নির্মাণ-প্রক্রিয়ার প্রধান কাজ। তিনি উত্পাদন শিল্পের উচ্চ পর্যায়ের, বুদ্ধিমান ও সবুজ উন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এ সম্পর্কে মিসরের কূটনীতিবিষয়ক কমিশনের সদস্য হেলমি বলেন, উচ্চমানের উন্নয়নের জন্য চীনের অবিরাম প্রচেষ্টা কেবল চীনের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে তা নয়, বরং বিশ্বব্যাপী শিল্প ও সরবরাহ চেইনের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে, বৈশ্বিক বাণিজ্য উন্নত করতে ও বিশ্বকে উদ্দীপিত করতে সুস্পষ্ট ভূমিকা রাখবে।  

সি চিন পিং তাঁর ভাষণে আরও বলেন, চীনের উন্নয়ন বিশ্বকে উপকৃত করে এবং চীনের উন্নয়নকে বিশ্ব থেকে আলাদা করা যায় না। আমাদের অবশ্যই উচ্চ-স্তরের উন্মুক্তকরণকে দৃঢ়ভাবে উন্নত করতে হবে। নিজেদের উন্নয়নের জন্য বিশ্বব্যাপী বাজার ও সম্পদগুলো ভালোভাবে ব্যবহার করতে হবে এবং বিশ্বের সাধারণ উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে হবে।

বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হিসেবে গত ১০ বছরে বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে চীনের গড় অবদান ৩০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। ২০২২ সালে চীনের বিদেশী মূলধনের প্রকৃত ব্যবহার ১৮৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি ছিল, যা একটি নতুন রেকর্ড। এটি তিন বছর আগের ৫০ বিলিয়ন ডলারের চেয়ে অনেক বেশি।

চলতি বছর হলো চীনের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ কার্যকর হবার ৪৫তম বার্ষিকী। চীন সরকারের কর্মপ্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিপিটিপিপি-সহ বিভিন্ন উচ্চমানের আর্থ-বাণিজ্যিক চুক্তির স্বাক্ষর ত্বরান্বিত করতে হবে। এ সম্পর্কে আর্জেন্টিনার বুয়েনস আয়ারস বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্জেন্টিনা-চীন গবেষণা কেন্দ্রের গবেষক সান্তিয়াগো বুস্টেলো বলেন, বর্তমানে বাণিজ্যে সংরক্ষণবাদ বিশ্ব অর্থনীতিতে যখন অনিশ্চয়তা বাড়াচ্ছে, তখন চীন অব্যাহতভাবে উচ্চমানের বৈদেশিক উন্মুক্তকরণ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এবং পারস্পরিক কল্যাণকর সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করছে। এতে গোটা বিশ্ব উপকৃত হবে। (ছাই/আলিম)