চীন ও চীনের বাইরের দুনিয়ার ‘ব্যবসা-অর্থনীতি-বানিজ্যের হালচাল নিয়ে সাপ্তাহিক অনুষ্ঠান ‘চলতি বাণিজ্য’
2023-03-10 18:11:45

 

চলতি বাণিজ্যের ৮ম পর্বে যা থাকছে:

১. চীনের পথে পথে ইলেক্ট্রিক গাড়ি, পৌছে যাচ্ছে গ্রাম পর্যায়ে

২. চিলিতে মহাসড়ক নির্মাণ করবে চীনা কোম্পানি সিআরসিসি

৩. বিএমডাব্লিউকে যন্ত্রাংশ সরবরাহ করবে চীনা কোম্পানি নাভইনফো

 

চীনের পথে পথে ইলেক্ট্রিক গাড়ি, পৌছে যাচ্ছে গ্রাম পর্যায়ে

সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: চীনের রাস্তাজুড়ে বাড়ছে বিদ্যুৎচালিত গাড়ি বা ইলেক্ট্রিক গাড়ির সংখ্যা। আর সে কারণে বাড়ছে এসব গাড়ির জন্য চার্জিং স্টেশনের চাহিদা। সেই চাহিদার কথা মাথায় রেখে এবার দেশের বিভিন্ন জায়গায় বাড়ানো হচ্ছে চার্জিং সেবার পরিসর। বিশেষ করে চীনের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানিগুলো বিপুল বিনিয়োগ নিয়ে এগিয়ে এসেছে চার্জিং স্টেশন স্থাপনের প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চীনে ‘নতুন ধরনের অবকাঠামো’ হিসেবে সামনে এসেছে ইলেক্ট্রিক গাড়ির মতো পরিবেশবান্ধব ও জ্বালানী সাশ্রয়ী পরিবহন।

চীনের রাস্তায় চলাচলকারী গাড়িগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক গাড়িই এখন বিদ্যুৎচালিত। বিশেষ করে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইলেক্ট্রিক গাড়ির সংখ্যা ব্যাপকভাবে বেড়েছে।

চীনের পিপলস পলিটিক্যাল কনসালটেটিভ কনফারেন্স –সিপিপিসিসি’র জাতীয় কমিটির প্রকাশ করা এক পরিসংখ্যন বলছে, ২০২২ সালে প্রায় ৭০ মিলিয়ন ইলেক্ট্রিক গাড়ি তৈরি হয়েছে চীনে। চলতি বছর এ সংখ্যা আরো বাড়বে বলেও জানান এ কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান।

মিয়াও ওয়েই, ভাইস চেয়ার‌ম্যান, অর্থনীতি বিষয়ক কমিটি, সিপিপিসিসি জাতীয় কমিটি

“গেল বছর চীন ২৭০ মিলিয়ন গাড়ি উৎপাদন করে। এসবের ২৫ শতাংশই ছিলো বিদ্যুৎচালিত গাড়ি। চলতি বছর ইলেক্ট্রিক গাড়ি উৎপাদনের হার ৩০ শতাংশ হতে পারে অর্থাৎ আরো প্রায় ১০ মিলিয়ন ইলেক্ট্রিক গাড়ি এবার বেশি উৎপাদন কবে। এটা অবশ্যই আশাব্যঞ্জক ব্যাপার।“

ইলেক্ট্রিক গাড়ির সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে ক্রমেই বাড়ছে এসব গাড়ি চার্জ দেওয়ার স্টেশনের চাহিদা। ফলে ক্রমেই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ইলেক্ট্রিক চার্জিং স্টেশন স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রত্যন্ত এলাকায় চার্জি স্টেশন স্থাপন এখনো এক চ্যালেঞ্জের নাম। তবে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানিগুলো বিভিন্ন এলাকায় চার্জিং সেবা পৌঁছে দেওয়ার কাজ করে যাচ্ছে।

 

এদিকে, পূর্ব চীনের চিয়াংসু প্রদেশের পরিসংখ্যান বলছে, এই প্রদেশে বিক্রি হওয়া প্রতি ৩টি নতুন গাড়ির একটি হলো ইলেক্ট্রিক মডেলের গাড়ি। শহর কর্তৃপক্ষ বলছে, ২০২৪ সাল নাগাদ এই অঞ্চলে গড়ে তোলা হবে অন্তত ১ লাখ নতুন চার্জিং স্টেশন। লক্ষ্যে বলা হয়, শহরে প্রতি ৯শ’ মিটার পর পর এবং গ্রামীণ এলাকায় প্রতি দেড় কিলোমিটার পরপর চার্জিং স্টেশন নিশ্চিত করা হবে।

এদিকে, বিভিন্ন জায়গা উচ্চ গতির বা সুপার ফাস্ট চার্জিং স্টেশন তৈরিতে সহযোগিতা দিচ্ছে স্থানীয় বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষও। যদিও ইলেক্ট্রিক গাড়ির চালকদের মধ্যে এখনো বিভিন্ন বিষয় ভুল ধারনা আছে, আছে তথ্য জানার ঘাটতি। উসি মিউনিসিপ্যাল পাবলিক আম্পারেক্স টেকনোলজির কর্মকর্তা জানান, এসব ফাস্ট চার্জিং স্টেশনে গাড়ির ক্ষতির কোন আশঙ্কা নেই।

ছু ইউয়ান, ব্যবস্থাপক, উসি মিউনিসিপ্যাল পাবলিক আম্পারেক্স টেকনোলজি

“এটা একটা খুবই দ্রুতগতির চার্জিং স্টেশন। এখানে সর্বোচ্চ ৪৮০ কিলোওয়াট পর্যন্ত চার্জ দেওয়া সম্ভব। এখানে মাত্র ৫ মিনিট চার্জ দিলে ২৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত গাড়ি চালানো সম্ভব হবে। আমাদের বিশ্বাস ভবিষ্যতে এর চাহিদা আরো বাড়বে। বর্তমানে কিছু কিছু গাড়িতে এই সুপার ফাস্ট চার্জিং স্টেশন সাপোর্ট করে। কোন কোন চালকের এমন ভুল ধারনাও আছে যে এতে তাদের গাড়ির ব্যাটারির ক্ষতি হতে পারে। তবে বিষয় হলো চার্জিং স্টেশনের চার্জ দেওয়ার সক্ষমতা গাড়ির ব্যাটারির সক্ষমতাকে অতিক্রম করতে পারেনা।“

চার্জিং স্টেশনগুলোতে গাড়ি চার্জ দেওয়ার সময় মনিটরে দেখা যায় চার্জের গতি ও পরিমাণ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গেল এক দশকে অবকাঠামো উন্নয়নের যে ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে চীন তারই ধারাবাহিকতায় এবার এসেছে ‘নতুন ধরনের অবকাঠামো’ নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা। এরই অংশ হিসেবে সামনে এসেছে ইলেক্ট্রিক গাড়ির মতো পরিবেশবান্ধব ও জ্বালানী সাশ্রয়ী পরিবহন।

 

 

ভিনদেশে চীন:

চিলিতে মহাসড়ক নির্মাণ করবে চীনা কোম্পানি সিআরসিসি

সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: দক্ষিণ আমেরিকার দেশ চিলিতে ১৬৬ কিলোমিটার দীর্ঘ মহাসড়ক নির্মাণ করতে যাচ্ছে চীন। চীনের বৃহৎ নির্মাণ প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে কন্সট্রাকশন করপোরেশন লিমিটেড –সিআরসিসি এ মহাসড়ক নির্মাণের কাজ পেয়েছে। সম্প্রতি সিআরসিসি’র ওয়েবসাইটে এ বিষয়ক তথ্য প্রকাশ করা হয়।

চীনা কোম্পানির বাস্তবায়ন করা চিলির জাতীয় মহাসড়ক নির্মাণের এটি দ্বিতীয় প্রকল্প। চিলির এই জাতীয় মহাসড়কটির রুট নাম্বার ৫। মহাসড়কটি চিলির চিলান এলাকা থেকে কলিপুলি এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত। এই পথ ধরেই বেশিরভাগ যানবাহন গুরুত্বপূর্ণ শহর ও গন্তব্যের উদ্দেশ্যে চলাচল করে। আর সে কারণেই এই মহাসড়কটিকে বলা হয় চিলির জাতীয় অর্থনীতির প্রধান ধমনি।

প্রতিষ্ঠানটি বলছে, ১৬৬ কিলোমিটার দীর্ঘ মহাসড়কের সঙ্গে আরো ৬ দশমিক ৬ কিলোমিটার নতুন শাখা সড়ক তৈরি করা হবে। সব মিলিয়ে এর দৈর্ঘ্য হবে ১৭২ দশমিক ৬ কিলোমিটার।

এই প্রকল্পের কাজ শেষ হলে প্রধান প্রধান শহরগুলোর যানজট কমবে বলে মনে করে চিলি সরকার। সরকারর তরফ থেকে বলা হয়, চিলির দক্ষিণাঞ্চলের শহরগুলোর যানজট নিরসন এবং যাত্রী ও মালামাল পরিবহণের ক্ষেত্রে বিপুল ভূমিকা পালন করবে এই মহাসড়ক। পাশাপাশি স্থানীয় জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান তৈরি, স্থানীয় অর্থনীতি ও শিল্পের বিকাশ ঘটবে বলেও জানানো হয়। 

এর আগে দেশটির টালসা থেকে চিলান পর্যন্ত মহাসড়ক নির্মাণের প্রথম ধাপের কাজ শেষ করে এই কোম্পানিটি। ২০২১ সালের এপ্রিলে নির্মাণ শুরুর পর গেল ফেব্রুয়ারি মাসেই মহাসড়কটির ওই অংশের কাজ শেষ হয়। ওই মাসেই কর্তৃপক্ষের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করে সিআরসিসি। পরে সেটি আনুষ্ঠানিকভাবে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চিলিতে বিনিয়োগ ও অবকাঠামো নির্মাণের এক নতুন অধ্যায়ের শুরু হয়েছে এই মহাসড়ক নির্মাণের মধ্যদিয়ে।

 

 

 

কোম্পানি প্রোফাইল:

বিএমডাব্লিউকে যন্ত্রাংশ সরবরাহ করবে চীনা কোম্পানি নাভইনফো

সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: জার্মান গাড়ি তৈরির কোম্পানি ও বিখ্যাত ব্র্যান্ড বিএমডাব্লিউয়ের জন্য যন্ত্রাংশ তৈরি করে সরবরাহ করবে চীনা টেক ফার্ম নাভইনফো কোম্পানি লিমিটেড। পাশাপাশি এ কোম্পানির জন্য যে কোন ধরনের বিক্রয়োত্তর সেবাও দেবে এই কোম্পানিটি।

এরইমধ্যে বিএমডাব্লিউ চায়না অটোমোটিভ ট্রেডিং লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি সই করেছে নাভইনফো। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়, চীনের বাজারে বিএমডাব্লিউ কোম্পানির গাড়ি চালনা বিষয়ক সব ধরনের পণ্য ও সেবা প্রদান করবে তারা। সম্প্রতি চায়না সিকিউরিটি জার্নালে এ বিষয়ক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। 

কোম্পানির পক্ষ থেকে বলা হয়, এসব সেবার মধ্যে আছে অ্যাডভান্সড ড্রাইভার অ্যাসিস্ট্যান্স সিস্টেম বা অ্যাডাস ম্যাপস, হাই ডেফিনিশন বা এইচডি ম্যাপস ও লোকেশন বেইজড সার্ভিস –এলবিএস।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে গাড়ি চালনার ক্ষেত্রে মৌলিক বিষয় হিসেবে ব্যবহার করা হয় ম্যাপ বিষয়ক তথ্য ও নেভিগেশন পণ্য। পাশাপাশি সাধারণ গাড়ির ক্ষেত্রেও এসব বিষয় খুব জরুরি হিসেবে বিবেচিত হয়। এসব সেবার ক্ষেত্রে হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার সেবা দেবে নাভইনফো।

গাড়ি চালনায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করার বিষয় দীর্ঘ দিনের সহযোগিতামূলক সম্পর্কের ইতিহাস আছে এ দুই প্রতিষ্ঠানের। এর আগে ২০১৯ সালেও স্বয়ংক্রিয়ভাবে গাড়ি চালনা বিষয়ক সহযোগিতা চুক্তি করে বিএমডাব্লিউ ও নাভইনফো।