"আমি নৌবাহিনীর বিমানবাহী রণতরী লিয়াওনিংয়ের একজন রাজনৈতিক প্রশিক্ষক। আমি ৪ বছর ধরে এই জাহাজে কাজ করছি এবং বিভিন্ন বিভাগে কাজ করেছি, যেমন যুদ্ধ, ইলেক্ট্রোমেকানিক্যাল এবং এভিয়েশন। আমার সামরিক ক্যারিয়ারকে একটি বিমানবাহী রণতরীর ছাপ দিয়ে চিহ্নিত করা যেতে পারে। আমি লিয়াওনিং জাহাজের সাথে বাতাসে ও তরঙ্গে একসাথে বেড়ে উঠতে পারি। এতে আমি অত্যন্ত সম্মানিত এবং গর্ব বোধ করি।" চলতি বছরের চতুর্দশ জাতীয় গণকংগ্রেসের প্রথম অধিবেশনে প্রথম "প্রতিনিধি চ্যানেল"-এ এ সব কথা বলেন ছোট চুলের একজন নারী সৈনিক। তিনিই জু ইউয়ে মেং, নৌবাহিনীর বিমানবাহী রণতরী লিয়াওনিংয়ের রাজনৈতিক প্রশিক্ষক।
তিনি ১৯৯০ সালে জন্মগ্রহণ করেন। এতো তরুণ বয়সে ‘দুই অধিবেশনে’-র "প্রতিনিধি চ্যানেলে" হাজির হয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হওয়া সহজ ব্যাপার নয়। জু ইউয়ে মেং চীনের প্রথম বিমানবাহী রণতরী লিয়াওনিং-এর সদস্য এবং বিমানবাহী রণতরীর প্রথম ব্যাচের নারী সদস্য। এখন জু ইউয়ে মেং লিয়াওনিং জাহাজের একমাত্র নারী তৃণমূল প্রধান কর্মকর্তা।
জু ইউয়ে মেং ১৯৯০ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ২০০৮ সালে নেভাল এভিয়েশন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং ২০১২ সালে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর ছাত্রী হন। ২০১৫ সালের গ্রীষ্মে, জু ইউয়ে মেং নেভাল এভিয়েশন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েট হন। তখন এই মেয়েটির একমাত্র স্বপ্ন ছিল "বিমানবাহী রণতরীতে যাবো, সবচেয়ে বড় জাহাজে যাবো"।
জু ইউয়ে মেং একটি মহান যুগে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করেন। ২০১২ সালে লিয়াওনিং জাহাজের নৌবাহিনীতে যোগ দেওয়া থেকে, ২০১৯ সালে শানতুং জাহাজের যোগ দেওয়া এবং ২০২২ সালে ফুচিয়ান জাহাজের যোগ দেওয়া পর্যন্ত, চীনের নৌবাহিনী "তিনটি বিমানবাহী রণতরী যুগে" প্রবেশ করে। গত ১০ বছরে, জু ইউয়ে মেং এবং তার সহকর্মীরা চীনা বিমানবাহী রণতরীর দ্রুত অগ্রগতির অসাধারণ যাত্রার সাথে বিকাশের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন এবং তারা একটি শক্তিশালী সেনাবাহিনীর প্রথম শ্রেণীর দিকে এগিয়ে যাওয়ার সংগ্রামও প্রত্যক্ষ করেছেন।
গত ১০ বছরে, জু ইউয়ে মেং লিয়াওনিং জাহাজে কাজ করার অনেকগুলি অবিস্মরণীয় স্মৃতি মনে রেখেছেন। যখন লিয়াওনিং জাহাজ দূর-সমুদ্র প্রশিক্ষণের জন্য প্রথমবারের মতো মিয়াকো প্রণালী অতিক্রম করছিল, তখন তিনি পরিচালনা কক্ষে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি এ বিশাল এবং গভীর নীল সমুদ্র দেখে মনে মনে “সাগরে মাছের মতন উড়ে বেড়ানোর, পাখির মতো আকাশজুড়ে উড়ে বেড়ানোর” আনন্দ বোধ করছিলেন। রণতরীতে যখন প্রথম বিমানটি রাতে অবতরণ করছিল, তখন জু ইউয়ে মেং কন্ট্রোল টাওয়ারে সহায়তার দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি বলেন, একটি বিকট শব্দের সাথে, বিমানটি স্থিতিশীলভাবে অবতরণ করে!
জলে ভাসা থেকে শুরু করে রণতরীতে বিমান অবতরণ করা পর্যন্ত, অফশোর প্রশিক্ষণ থেকে শুরু করে, দূর সাগরে যাওয়া পর্যন্ত, লিয়াওনিং জাহাজটি একটি মহান শক্তির ভারী অস্ত্রের সুদূরপ্রসারী এবং দুর্দান্ত ট্র্যাক এঁকেছে যেন।
নৌবাহিনীর উন্নয়ন প্রজন্মের পর প্রজন্মের ক্রমাগত সংগ্রাম থেকে অবিচ্ছেদ্য। জু ইউয়ে মেংয়ের আশেপাশে ৩০ বছর ধরে কাজ করা বিশেষজ্ঞ আছেন, সেইসাথে ২০০০ সালের পরে জন্মগ্রহণকারী উত্সাহী নতুন সৈনিকও আছেন। তাদের মধ্যে অনেকে দীর্ঘকাল ধরে সাগরের গভীরে জাহাজের কেবিনে বাস করে আসছেন। তাদের হৃদয়ে আলো আছে এবং তারা সবসময় সূর্যের দিকে তাকান। এ ছাড়াও রণতরীতে আছেন "ডেক ঈগল", যারা রঙিন ভেস্ট পরিধান করেন এবং প্রচণ্ড ঠান্ডা ও গরমের মধ্যে রণতরীতে বিমানের ওঠানামা নিয়ন্ত্রণ করেন।
লিয়াওনিংয়ে ১০ জনেরও বেশি সংখ্যালঘু ক্রু রয়েছেন। এ ছাড়াও আছেন নারী সাহায্যকারী, নারী রাডার সৈন্য, নারী ইলেক্ট্রোমেকানিক্যাল সৈনিক এবং নারী উড়ন্ত দল। তারা তাদের যৌবন এবং স্বপ্নকে চীনের বিমানবাহী রণতরীর সাথে একীভূত করেছেন। হাজার হাজার মানুষ একই জাহাজে যাত্রা করেন এবং তারা হাজার হাজার মাইল সমুদ্রে ভেসে বেড়ান।
জু ইউয়ে মেং আরও তরুণ বন্ধুকে তাঁর মতো এ কাজে যোগ দিতে এবং বিমানবাহী রণতরীতে কাজ করতে উত্সাহিত করেন। তিনি বলেন, "আমার সাথে দূর সমুদ্র এবং গভীর নীলে এসো, আমরা সমুদ্র পেরিয়ে চলি, এবং সমুদ্র ও আকাশের মধ্যে নিজেদের স্বপ্নের অনুসরণ করি।"
(ইয়াং/আলিম/ছাই)