সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে জমিতে চাষবাস শুরু করা এবং সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্রাম নেয়া হলো চীনের ঐতিহ্য। তবে আজকের বিশ্বে অধিকতর তরুণ কৃষক নতুন যন্ত্র ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে ঐতিহ্যবাহী চাষাবাদের নতুন রূপ দিয়েছেন। তারা পরিবারের সদস্য ও বন্ধুদের নিয়ে কৃষিকাজে অংশ নিতে চেষ্টা চালাচ্ছেন। আজকের এ অনুষ্ঠানে আমরা শাও লি ছাং নামের একজন নতুন কৃষকের সঙ্গে আপনাদেরকে পরিচয় করিয়ে দেবো।
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হওয়ার পর থেকেই শাও লি ছাং নান চিন শহরে একটি ভালো চাকরি করতেন। তার বাবা নান চিন শহরের পু খৌ অঞ্চলের একজন বড় খাদ্য চাষি। কোভিড-১৯’র কারণে ২০২০ সালে চাউল বিক্রিতে মন্দা দেখা দেয়। শাও লি ছাং’র বাবা পুরো রাত ধরে ঘুমাতে পারছিলেন না। বিক্রি সম্পর্কে শাও লি ছাং ভালো জানেন, তাই তিনি বাবার সাহায্য করতে পু খৌ অঞ্চলে ফিরে যান। মহামারি ছড়িয়ে পড়লেও কমিউনিটিতে দলীয় ক্রয় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বাবাকে ভালো বিক্রিতে সাহায্য করেছেন শাও লি ছাং। এরপর তিনি শহরের কাজ ছেড়ে দিয়ে গ্রামে গিয়ে জমিতে চাষাবাদ শুরু করেন। প্রথম বছরের সাফল্যের অনুপ্রেরণায় তিনি মনোযোগ দিয়ে কৃষি নিয়ে গবেষণা করেন। সে সময় পু খৌ অঞ্চল উচ্চ মানের কৃষিক্ষেত উন্নয়নের পরিকল্পনা করছিল। সে সব ছোট কৃষিক্ষেতকে বড় করা হয়। এমন ভালো সুযোগ মিস করেননি শাও লি ছাং। তিনি মনে করেন যে চাষ করতে গেলে বড় জমি খুব প্রয়োজন; তাতে বড় যন্ত্র ব্যবহার করা সম্ভব হয়। তবে তার বাবা শাও লি ছাং’র সঙ্গে একমত নন।
তার বাবা শাও মিং ওয়েন বলেন, শাও লি ছাং বহু বছর ধরে বাইরে কাজ করেছেন। তাই তিনি জানেন না যে এ জমি অতীতে খুব বাজে ছিল। অনেক বছর ধরে জমিতে কোনো খাদ্যশস্য চাষ করা হয়নি।
তিনি ভাগ্যবান যে চীনের কেন্দ্রীয় সরকার উচ্চ মানের কৃষিক্ষেত নির্মাণকাজের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে। গত কয়েক বছর ধরে চীন প্রতিবছর ৫৩ লাখ হেক্টর উচ্চ মানের কৃষিক্ষেত প্রতিষ্ঠা করে আসছে এবং জমির সক্ষমতা ও খাদ্য নিরাপত্তায় সবচেয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকার নানা নীতি প্রণয়ন করে এবং স্থানীয় সরকার অনুপ্রেরণা দিয়ে যাচ্ছে। তা শাও লি ছাং ও তার বাবার আস্থা বাড়িয়েছে।
স্থানীয় সরকার প্রথমে ৪ কোটি ৩০ লাখ ইউয়ান অর্থ ব্যয় করে সে সব পতিত জমি গুছিয়ে নেয়। যার ফলে ২৮৩ হেক্টর উচ্চ মানের কৃষিক্ষেত গঠিত হয়। তা ছাড়া, কৃষিক্ষেত নেট, হ্রদ নেট এবং পথ নেট নামে তিনটি নেট পরিপূরক হিসেবে গঠিত হয়েছে, যাতে ছোট কৃষিক্ষেত বড় হয়। টুকরো কৃষিক্ষেত সম্পূর্ণ হয় এবং নিম্ন উৎপাদনকারী কৃষিক্ষেত উচ্চ উৎপাদনে সক্ষম হয়।
এখন এ স্থানে কৃষিক্ষেত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং সুন্দর দেখায়। এখানকার উচ্চ মানের কৃষিক্ষেত প্রদেশটির প্রথম সারিতে রয়েছে। পাশাপাশি, অনেক একাডেমিক কৃষিকাজে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। উচ্চ মানের কৃষিক্ষেতে স্মার্ট ব্যবস্থাপনা রয়েছে। একাডেমিক দলের মনুষ্যবিহীন প্রযুক্তি ব্যবহারের পর কৃষিক্ষেতে নির্ভুল উত্পাদন ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়ন করা যায়।
শাও লি ছাং বলেন, “পু খৌ অঞ্চল বর্তমানে ডিজিটাল গ্রাম গঠন করছে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে আমি নেটে বিক্রির পদ্ধতি সুগম করেছি। ই-কমার্স ও লাইভ স্ট্রিমের মাধ্যমে খুব ভালো বিক্রি করছি। সম্প্রতি আমি কারখানার মালিকদের সঙ্গে চাউলের প্রক্রিয়াজাতকরণ নিয়ে আলোচনায় বসি। চাউল দিয়ে নুডলস-সহ নানা পণ্য উত্পাদন করা হবে। সোনার দামে চাউল বিক্রি করতে চাই, যাতে গ্রামবাসীদের উপার্জন বাড়ে।”
(রুবি/এনাম)