চীনের কমিউনিস্ট পার্টির বিংশ জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিবেদন থেকে ২০২৩ সালের কেন্দ্রীয় কমিটির ১নং নথি পর্যন্ত দেখা যায়- ‘খাদ্য নিরাপত্তা, কৃষি ও গ্রামীণ আধুনিকীকরণ’ সর্বদা পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি এবং জনগণের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু ছিল। এটি চলমান দুই অধিবেশনে প্রধান আলোচিত বিষয়ের মধ্যে একটি। তারা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষিকে শক্তিশালীকরণ এবং কৃষি ও গ্রামীণ এলাকার আধুনিকীকরণ প্রচার নিয়ে নানা পরামর্শ দিয়েছেন।
বাংলাদেশের একজন গবেষক গালিবুল একবার সাংবাদিকদের বলেন যে, তিনি চীনের পল্লী অঞ্চলের কারণে চীনকে ভালবাসেন। তিনি বলেন,
“চীনের প্রতি আমার ভালবাসা শহরে নয়, গ্রামীণ চীনের কারণে। অতীতে কৃষি জমিতে অনেক লোক কাজ করত, কিন্তু এখন আপনি কৃষির যান্ত্রিকীকরণ দেখতে পাবেন। ট্রাক্টর এমনকি ড্রোন, উচ্চ প্রযুক্তির ব্যবহার সাধারণ মানুষের জন্য সুবিধা নিয়ে আসে।”
গালিবুল যা দেখেছেন তা হল- চীনের কৃষি ও গ্রামীণ উন্নয়নের একটি বাস্তব চিত্র। যান্ত্রিকীকরণ, তথ্যায়ন, ডিজিটালাইজেশন এবং বুদ্ধিমত্তা চীনের কৃষির উচ্চ-মানের উন্নয়নে অবদান রেখেছে। জাতীয় গণ-কংগ্রেসের প্রতিনিধি, লিয়াওনিং প্রদেশের ইংখৌ শহরের কৃষি ও গ্রামীণ ব্যাপক উন্নয়ন পরিষেবা কেন্দ্রের একজন সদস্য হান ছিউ সিয়াং বলেন,
“আমাদের বিদ্যমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, বিগ ডেটা, বুদ্ধিমান নিয়ন্ত্রণ প্রযুক্তি, স্যাটেলাইট পজিশনিং প্রযুক্তি ইত্যাদি ব্যবহার করে আমাদের কৃষি যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামের সংযুক্তি হয়েছে।”
লিউভানসুই শহরের চুংজিং গ্রামের ৫০টিরও বেশি গ্রিনহাউজে কৃষকদের পেশাদার সমবায়ের সদস্যরা কঠোর পরিশ্রম করছে। জাতীয় গণ-কংগ্রেসের প্রতিনিধি লি শিইয়াও-এর নেতৃত্বে, স্থানীয় গ্রামবাসীদের স্থিতিশীল আয় হয়েছে। লি বলেন,
“আমরা গ্রামীণ বৈশিষ্ট্যযুক্ত শিল্প উন্নয়নের জন্য স্থানীয় প্রাকৃতিক সুবিধাগুলি ব্যবহারের উপায় অন্বেষণ করি। অতীতে কৃষকরা অদক্ষ প্রাচীন পদ্ধতিতে চাষ করত এবং আধুনিক কৃষিপদ্ধতি জানত না। এখন কৃষির আউটপুট অনেক বেড়েছে।”
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শুধুমাত্র চীনের কৃষি উন্নয়ন এবং গ্রামীণ পুনরুজ্জীবনের মৌলিক চালিকাশক্তি-ই নয়, বরং বিশ্ব খাদ্য নিরাপত্তায় চীনের বুদ্ধিবৃত্তিক অবদান।
কেনিয়া গত বছর গুরুতর খরার মুখে পড়ে। কিন্তু নাইরোবির চীন-আফ্রিকা যৌথ গবেষণা কেন্দ্রের আধুনিক কৃষি প্রদর্শন এলাকায় চীনের নতুন প্রজনন প্রযুক্তিতে চাষ করা সাদা ভুট্টার ফলন আশেপাশের এলাকার তুলনায় ৫০ শতাংশ বেশি হয়। যা ছিল বাম্পার ফলন! চীন-আফ্রিকা যৌথ গবেষণা কেন্দ্রের আফ্রিকান পক্ষের পরিচালক রবার্ট জিটুলু বলেন,
“এখানকার আবহাওয়া খুব শুষ্ক এবং ভুট্টার জন্য বেশ চ্যালেঞ্জ। আমরা চীনের ফসল চাষের কৌশলগুলি শিখেছি। এবারের ফসল আমাদের জন্য খুবই তাত্পর্যপূর্ণ। আমি বিশ্বাস করি, এটি একটি সূচনা বিন্দু। এর মাধ্যমে গোটা কেনিয়ার ফসলের ফলনও উন্নত করা যেতে যারে।”
চীনের কৃষি ও গ্রামীণ এলাকার ভবিষ্যত্ আধুনিকীকরণ কিভাবে হবে? গণ-রাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলনের সদস্য, চীনের সামাজিক ও বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের কৃষি উন্নয়ন গবেষণালয়ের পার্টির সচিব তু ঝি সিয়ং বলেন, ভবিষ্যতে চীনের কৃষি ও গ্রামীণ অঞ্চলের আধুনিকীকরণ বিশ্বের জন্য বিরাট অবদান রাখবে। তিনি বলেন,
“চীনের কৃষির উন্নয়ন মডেল ও অর্জনগুলি বিশ্বের বিপুল সংখ্যক মানুষের দেশ এবং অল্প জমির দেশের জন্য খাদ্য ও পুষ্টির চাহিদার একটি ‘চীনা সমাধান’ হবে। চীনের কৃষি সমস্যা সমাধান অবশ্যই বিশ্বে মহান অবদান রাখবে।”
(জিনিয়া/তৌহিদ/আকাশ)