সম্প্রতি স্টাডি রুমসহ একটি ট্রেন ইন্টারনেটে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। নেটিজেনরা একে ‘বসন্তের দিকে যাওয়া স্টাডি রুম’ বলে ডাকছেন।
অনেক নেটিজেন কৌতূহল নিয়ে জানতে চান যে এটা কোন ট্রেন? আসলে এটি ছোংছিং এবং সিউশানের মধ্যে যাতায়াতকারী ৫৬০৯/৫৬১০ জনকল্যাণমূলক ‘ধীর গতির ট্রেন’।
চলতি বছরের শুরুতে চায়না রেলওয়ের ছেংতু ব্যুরো গ্রুপ লিমিটেড কোম্পানি এই ট্রেনটিকে অপ্টিমাইজ এবং আপগ্রেড করেছে। তিন নম্বর কেবিনের কিছু আসন ভেঙে দিয়ে জানালার পাশে ডেস্ক এবং চেয়ার স্থাপন করেছে।
স্টাডি রুমের এই কেবিনে প্রবেশ করলে তার দু’পাশের দেয়ালে উত্সাহব্যঞ্জক শ্লোগান দেখে মনে হবে আবারও স্কুলে ফিরে এসেছি। জানালার পাশে চেয়ারে বসছেন বিভিন্ন বয়সের শিক্ষার্থীরা।
তে ছাও কাং একটি বৃত্তিমূলক শিক্ষা কেন্দ্রের শিক্ষক। তিনি প্রথমবার স্টাডি রুমসহ কেবিনে উঠে এসে তিনি খুশি হন। রেলগাড়িতে থাকার সময় কিছু কাজও করতে পেরেছেন।
গতবছরের শেষ দিকে মহামারীর প্রভাবে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় শেষ সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা বাতিল করেছে এবং নির্দিষ্ট সময়ের আগে ছুটি শুরু করেছে। নতুন সেমিস্টারের শুরুতে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। শিক্ষার্থীদের যারা এই ট্রেনযোগে আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে যান, স্টাডি রুম সম্বলিত এ ট্রেন তাদেরকে লেখাপড়ার জায়গা দিয়েছে।
তা ছাড়া, আরও আছে কিছু শিক্ষার্থী, যারা বিশেষ করে ট্রেনের টিকিট কিনে স্টাডি রুমসহ রেলগাড়ির ভ্রমণের অভিজ্ঞতা লাভ করেন।
রেলগাড়ি পাহাড়ের মধ্য দিয়ে চলাফেরা করে এবং ভ্রমণকারীরা ছবি’র মতো সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন। উল্লেখ্য, ৫৬০৯/৫৬১০ জনকল্যাণমূলক ‘ধীর গতির ট্রেন’ উলিং পাহাড়ি অঞ্চলের মধ্য দিয়ে চলে। জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকালে সবুজ নদীর জল এবং অবিচ্ছিন্ন চূড়াগুলোর একটি মনোরম দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়। মাঝে মাঝে নদীতে বড় এবং ছোট নৌকা ধীরে ধীরে চলতে দেখা যায় এবং যাত্রীরা তাদের মোবাইল ফোন ব্যবহার করে পথের সুন্দর দৃশ্য রেকর্ড করেন।
৫৬০৯/৫৬১০ জনকল্যাণমূলক ‘ধীর গতির ট্রেন’ ছাড়া ছেংতু-খুনমিং রেলওয়েতে চলাফেরা ৫৬১৯/৫৬২০ জনকল্যাণমূলক ‘ধীর গতির ট্রেন’ ‘স্টাডি রুম সম্বলিত কেবিন আপডেট এবং সংস্কারও করেছে।
ছেংতু-খুনমিং রেলওয়ের পার্শ্ববর্তী এলাকায় রয়েছে অনেক স্কুল। প্রতিসপ্তাহের শুক্রবার এবং রোববার শিক্ষার্থীরা এই ট্রেনযোগে বাড়ি এবং স্কুলের মধ্যে যাতায়াত করে থাকেন।
রেলগাড়ির গতি ধীর হলেও তাদের জন্য এই ভ্রমণ সুন্দর এবং মূল্যবান। সাপ্তাহিক ছুটিতে বাসায় ফিরে যাওয়ার পর তারা সাধারণত পিতামাতার সঙ্গে কিছু কৃষি কাজ করেন। তবে, রেলগাড়িতে থাকার সময় তারা হোমওয়ার্ক শেষ করতে পারেন এবং লেখাপড়া করতে পারেন।
‘স্টাডি রুম সম্বলিত’ কেবিন সংস্কারের আগে তারা নিজের আসনে লেখাপড়া করতো। এখন তাদের জন্য আরও প্রশস্ত এবং উজ্জ্বল লেখাপড়ার জায়গা হয়েছে।
সম্প্রতি কুইইয়াং উত্তর রেলস্টেশন এবং বেইজিংয়ের পশ্চিম স্টেশনের মধ্যে যাতায়াতকারী জে-১৫০ নম্বর রেলগাড়িতে ‘ট্রেন বই বার’ শিক্ষার্থীদের সমাদর পেয়েছে।
জে-১৫০ নম্বর রেলগাড়ি যে এলাকায় চলে সেখানে সব মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা প্রায় ৪০০। এটি হলো শিক্ষার্থীদের বাসা এবং স্কুলের মধ্যে যাতায়াত করা প্রথম শ্রেষ্ঠ বাছাই। ২০১৫ সালের পর এই ট্রেনের ডাইনিং কেবিন রাতের বেলা বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। এখানে বই ধার দেওয়া, বিনামূল্যে চা প্রদান করাসহ নানা সেবাদান করা হয়।
রেলওয়ে বিভাগের এই পদক্ষেপ ভ্রমণকারীদের কাছে একটি আশ্চর্য, একবার অভিজ্ঞতা এবং একটি অবিস্মরণীয় স্মৃতি।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, ট্রেন পরিষেবায় বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক উদ্ভাবন যোগ হয়েছে। এবার ‘ভ্রাম্যমাণ স্টাডি রুম’ নতুনত্ব এনেছে। অনেক নেটিজেনও পরামর্শ দিয়েছেন যে বুক বারের মতো ফর্মটি অনেক রেলগাড়ির জন্য উপযুক্ত।
জনকল্যাণমূলক ‘ধীর গতির ট্রেনের’ মতো সারা দেশে মোট ৮১ জোড়া ট্রেন রয়েছে। তাদের বেশিরভাগই প্রত্যন্ত অঞ্চলের মধ্য দিয়ে যাতায়াত করে এবং সেগুলো বাজারে যাওয়া, স্কুলে যাওয়া এবং যাতায়াতের জন্য স্থানীয় জনগণের প্রধান যানবাহন। অনেক জনকল্যাণমূলক ‘ধীর গতির ট্রেন’ দীর্ঘকাল ধরে স্থানীয় ‘নেট সেলিব্রেটি’ ট্রেন হয়ে উঠেছে। কোনো কোনো ‘ধীর গতির ট্রেন’ এখনও ভ্রাম্যমাণ বাজার, লাইভ সম্প্রচার কক্ষ এবং বাজার হয়ে উঠেছে। যেমন: কোনো কোনো ধীর গতির ট্রেনে কর্মরত সেবকরা পণ্য বিক্রেতায় পরিণত হন। তারা রেলওয়ের পার্শ্ববর্তী এলাকায় বসবাসরত স্থানীয় কৃষকদের জন্য বেকন, কিউই ফল, রক ক্যান্ডি কমলা এবং অন্যান্য বিশেষ কৃষি পণ্য বিনামূল্যে বিক্রি করেন। বিভিন্ন অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের বৈশিষ্ট্য এবং ভৌগলিক বৈশিষ্ট্য অনুসারে, জনকল্যাণমূলক ‘ধীর গতির ট্রেনের’ অপারেশনটি স্থানীয় শিল্পের বিকাশ, কৃষকদের উপকার করা, শিক্ষার্থীদের সাহায্য করা এবং পর্যটন উন্নয়নের সাথে সাংগঠনিকভাবে সংমিশ্রণ ঘটায়। দ্রুতগতির রেলের দ্রুত বিকাশের যুগে জনকল্যাণমূলক ‘ধীর গতির ট্রেন’ গতি নয়, জনগণকে উষ্ণতা দিয়েছে।
এসব স্বতন্ত্র জনকল্যাণমূলক ‘ধীর গতির ট্রেন’ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার পর অনেক দেশি-বিদেশী পর্যটক আকৃষ্ট হয়েছে। পাহাড়ের মধ্য দিয়ে যাওয়া ‘ধীর গতির ট্রেন’ প্রত্যন্ত অঞ্চল এবং শহরের মধ্যে সংযোগ ত্বরান্বিত করছে।
আসলে, ‘ধীর গতির ট্রেন’ এর নকশা গতি ধীর নয়; তবে, তার চলাচল পথের পাশের বাসিন্দাদের সুবিধার জন্য বড় এবং ছোট স্টেশনগুলোতে এসব ট্রেন থামে। ‘ধীর গতির ট্রেনের’ টিকিটের দাম কয়েক দশক ধরে অপরিবর্তিত রয়েছে। ‘ধীর গতির ট্রেন’ গণজীবিকার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত।
লিলি/এনাম/রুবি