চৌ ইয়ুন পেং
2023-03-09 10:00:05


 

আজকের অনুষ্ঠানে চীনের একজন বিশেষ গায়কের সঙ্গে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেবো; তার নাম চৌ ইয়ুন পেং। তিনি অন্ধ, আর একজন কবি! তার গানগুলো কবিতার মত, নিজের চিন্তাভাবনা প্রকাশ করার পাশাপাশি সামাজিক সমস্যা তুলে ধরে। তাই তাকে চীনের ‘সবচেয়ে মানবিক ব্যালাড গায়ক ও কবি’ বলা হয়। বন্ধুরা, আজকের অনুষ্ঠানে আমরা তার কিছু সুন্দর গান শুনবো। অনুষ্ঠানের শুরুতে শুনুন চৌ ইয়ুন পেংয়ের জনপ্রিয় একটি গান ‘ওয়াল্ডেন হ্রদ’।গান ১

 

চৌ ইয়ুন পেং ১৯৭০ সালে চীনের লিয়াও নিং প্রদেশের শেন ইয়াং শহরে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলায় তার চোখের রোগ ছিল। এই রোগের চিকিত্সার জন্য তার মা তাকে নিয়ে চীনের বিভিন্ন শহরে যান, কিন্তু ৯ বছর বয়সে তিনি অবশেষে সম্পূর্ণ অন্ধ হয়ে যান। এতে তার মা খুব হতাশ ও কষ্ট পান। কিন্তু একজন শিশু হিসেবে চৌ ইয়ুন পেং এই পৃথিবী নিয়ে খুব কৌতূহলী ও আগ্রহী ছিলেন, বিশ্ব দেখতে না পারলেও তিনি অনুসন্ধান করতে চাইতেন। এই মনোভাব তার জীবনের ভিত্তিতে পরিণত হয়। ১০ বছর বয়সে চৌ ইয়ুন পেং অন্ধদের স্কুলে যান, ১৫ বছর বয়সে নিজে গিটার বাজানো শিখেন, পরে ছাং ছুন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে চীনা সাহিত্য শিখেন, সে সময় তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাসের পর চৌ ইয়ুন পেং ভ্রাম্যমাণ কবি ও গায়ক হন।গান ২

 

১৯৯৬ সালে থেকে চৌ ইয়ু পেং গান গাইতে গাইতে বিভিন্ন জায়গা ভ্রমণ করেন। ভ্রমণের অভিজ্ঞতা থেকে আবার গান রচনার অনুপ্রেরণা পাবে। কয়েক বছর পর তিনি মনে করেন- শুধু গান রচনা নিজের চিন্তাধারা সম্পূর্ণভাবে প্রকাশ করতে পারে না, তাই ১৯৯৯ সালে তিনি পত্রিকা ‘ভাগ্য ও দরজা’ প্রতিষ্ঠা করেন, মানুষের কাছে তার মত মূলধারার বাইরের মানুষের জীবন তুলে ধরেন। তিনি তার কবিতায় সুর দেন ও গান গান। বন্ধুরা, এখন শুনুন চৌ ইয়ুন পেংয়ের একটি সুন্দর গান ও কবিতা ‘অব্যক্ত ভালোবাসা’।গান ৩

 

২০০৪ সালে চৌ ইয়ুন তার প্রথম অ্যালবাম ‘নীরব নিঃশ্বাস’ প্রকাশ করেন। অ্যালবামের গানগুলো প্রায় সবই তার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে লেখা। বিশেষ করে গান ‘অন্ধ সিনেমা’, গানটি তার আত্মজীবনী বলা যায়। অন্ধ হলে কিভাবে ফিল্ম দেখা যায়? গানে চৌ ইয়ুন পেং লিখে তিনি কল্পনাশক্তি প্রয়োগ করে অন্ধত্বের ঘাটতি পূরণ করেন, গিটার বাজানো ও কবিতা লিখা শিখেন, বিভিন্ন স্থান ভ্রমণ করেন, প্রেমে পড়েন এবং প্রেম হারান। যখন আবার সিনেমায় ফিরে সেসব শব্দ শোনেন, তখন ফিল্মটি বুঝতে পেরে মনে মনে তা দেখেন। বন্ধুরা, এখন চৌ ইয়ুন পেংয়ের গান ‘অন্ধ সিনেমা’ শুনুন।গান ৪

 

প্রথম অ্যালবাম প্রকাশের পর আরো বেশি মানুষ চৌ ইয়ুন পেংকে জানতে পারে। তার অভিজ্ঞতা শুনে মুগ্ধ হয় এবং তার গানগুলো পছন্দ করে। তিনি মিউজিক ফেস্টিভালে অংশ নেওয়া শুরু করেন, তা ছাড়া আগের মত বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করতে করতে গান গান। এ সময় চৌ ইয়ুন পেং সামাজিক বিষয় মনোযোগ দেন এবং গানের মাধ্যমে তা তুলে ধরেন। ২০০৭ সালে তিনি নতুন অ্যালবাম ‘চীনা শিশু’ প্রকাশ করেন। এতে তিনি আগুনে নিহত শিশু, হাউজিংয়ের উঁচু দাম, মহানগরের দরিদ্র শ্রমিক ইত্যাদি বিষয় নিয়ে গান লিখেন। এই অ্যালবামের জন্য তিনি ৮ম চীনা সংগীত মিডিয়া অ্যাওয়ার্ডের শ্রেষ্ঠ ব্যালাড গায়কের পুরস্কার লাভ করেন। বন্ধুরা, এখন শুনুন এই অ্যালবামের চৌ ইয়ুন পেংয়ের গান ‘সিউয়ান কুয়ান’।গান ৫

 

চীনের বিভিন্ন স্থানের পাশাপাশি চৌ ইয়ুন পেংও অনেক দেশে ভ্রমণ করেছেন। ২০১৯ সালে চৌ ইয়ুন পেং নিজের ভ্রমণ অভিজ্ঞতা অনুসারে বই ‘হাঁটার কান’ প্রকাশ করেন। বইয়ে রেকর্ড করা হয়েছে, তাঁর কান দিয়ে শোনা ও বোঝা সত্য পৃথিবী। তিনি লিখেছেন, “আমি বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করি, কবিতা লিখি, গান গাই, কিছু প্রমাণ করার জন্য নয়, বরং আমি এই জীবন পছন্দ করি। ভাগ্য আমাকে অনেক চ্যালেঞ্জ দিয়েছে, আমি শুধু নিজের পদ্ধতিতে ভালোভাবে জীবন কাটাতে চাই”। বন্ধুরা, অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে আমরা একসঙ্গে চৌ ইয়ুন পেংয়ের চীনের বিখ্যাত কবি হাই য্যি অনুসারে রচিত একটি সুন্দর গান ‘সেপ্টেম্বর’ শুনবো। আশা করি, আপনারা তার গানগুলো পছন্দ করবেন।গান ৬

 

বন্ধুরা, আজকের অনুষ্ঠান তাহলে এখানেই শেষ করছি। আশা করি, আমাদের অনুষ্ঠানে প্রচারিত গানগুলো আপনাদের ভালো লেগেছে। এখন বিদায় নিচ্ছি। সবাই ভালো থাকুন, সুন্দর থাকুন ও সুস্থ থাকুন। আবার কথা হবে। চাই চিয়ান।