কৃষি খাতেও ব্যবহার হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা | শেকড়ের গল্প | পর্ব ০৮
2023-03-08 19:11:22

বিশ্ববাসীকে ক্ষুধামুক্ত রাখতে অল্প অল্প করে ভূমিকা রাখছে চীনের অত্যাধুনিক কৃষি প্রযুক্তি। পেছনে পড়ে থাকা ছোট ছোট গ্রামগুলো মুক্তি পাচ্ছে দারিদ্রের শেকল থেকে। স্বল্প পরিসরের উদ্যোগগুলো দেখছে সফলতার মুখ, অনুসঙ্গ হচ্ছে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির।

কিন্তু কম সময়ে এত বড় সফলতার গল্প কীভাবে সম্ভব করলো চীন দেশের কৃষকরা? সে গল্পই আপনারা জানতে পারবেন শেকড়ের গল্প  অনুষ্ঠানে।

অত্যাধুনিক কৃষি প্রযুক্তির খবর

বিশ্বজুড়েই বাড়ছে ফাইভ জি প্রযুক্তির ব্যবহার। আর চীনে এর ব্যবহার শুরু হয়েছে আরো আগেই থেকেই। যার ছোঁয়া লেগেছে কৃষিখাতেও। এই খাতটিকে সবসময় সমৃদ্ধ রাখতে চায় দেশটি। যাতে নিশ্চিত করা যায় পর্যাপ্ত খাদ্য সরবরাহ।এজন্য বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছে চীন। কৃষি খামারগুলোতেও ব্যবহার করা হচ্ছে ইন্টারনেট, বিগ ডেটা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। 

আধুনিক সিটি হিসেবে ভালো পরিচিত পেয়েছে ছাংতু শহর। কারণ প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা হয়েছে এখানে। এমনকি গ্রামের কৃষিখামারগুলোতেও  ব্যবহার করা হচ্ছে স্মার্ট প্রযুক্তি। এজন্য পুরো দেশজুড়েই আলোচনায় রয়েছে দক্ষিণ পশ্চিম চীনের সিচুয়ান প্রদেশের ছাংতু সিটি।

এটি একটি স্মার্ট খামার। খামারের সব কিছু পর্যবেক্ষণ করা হয় মনিটরের মাধ্যমে।

এটি আসলে আধুনিক কৃষি পার্ক। এখানে টেকনিশিয়ানরা খামারের সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে। আর এসব প্রযুক্তির মাধ্যমেই পানি দেয়া হয় ক্ষেতে।

আসলে এতসব প্রযুক্তির কারণেই কায়িক শ্রমের প্রয়োজন পড়ে না। খামারে রয়েছে একাধিক সেন্সর, যার মাধ্যমে আর্দ্রতার পরিমাণ, ক্ষতিকর কীটপতঙ্গের উপস্থিতি এবং গাছে কোনো রোগের আক্রমণ ঘটছে কিনা তা বোঝা যায়।

চীনের ফাইভ জি নেটওয়ার্কের ধারাবাহিক উন্নয়ন কৃষিকাজকে সহজ করেছে। ফাইবার অপটিক এবং ফাইভ জি ইন্টারনেট সার্ভিসের মাধ্যমে এই কৃষি পার্কের এক হাজার হেক্টর জায়গায় কৃষি চলছে। ড্রোনের সাহায্যে মাটির অবস্থা, আর্দ্রতা ও অন্যান্য বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।

আধুনিক খামারে গ্রামবাসীরা কাজ করছেন আগের চেয়ে অনেক কম পরিশ্রমে। জনবলও কম লাগছে। চায়না টেলিকমের কর্মীরাও করছেন নিজের নিজের কাজ। গোটা খামার আসছে ডিজিটাল ক্যামেরার আওতায়।

 

আসলে এতসব প্রযুক্তি সহজ করেছে কৃষিকাজ। আর এভাবেই প্রতিনিয়ত সমৃদ্ধ হচ্ছে চীনের কৃষিকাজ।

দিন বদলের গল্প

অভিনব কৃষি অর্থনৈতিক মডেল হাসি ফুটিয়েছে গ্রামবাসীদের মুখে। শেয়ারড ফার্ম বা ভাগকরা চাষ পদ্ধতিতে তারা নিজেদের আয় বাড়াচ্ছেন ।পর্যটন শিল্পও বিকশিত হচ্ছে এই শেয়ারড ফার্মকে ঘিরে। 

শেয়ার্ড ফার্ম, যার অর্থ সহজ শর্তে বড় জমিকে টুকরো টুকরো করে চাষ করার এক পদ্ধতি। অভিনব এই কৃষি অর্থনীতির মডেল পাল্টে দিয়েছে গ্রামের চেহারা, আগের চেয়েও অধিক আয় করতে পারছেন কৃষকরা।

এই গ্রামটির নাম তুথাং। যার অবস্থান মধ্যচীনের হুপ্যেই প্রদেশের উহান সিটিতে। সম্প্রতি নতুন ইকোনোমিক মডেল ব্যবহার করে দারুণ সাফল্য পেয়েছেন গ্রামবাসীরা। 

১.৮ হেক্টর জমিকে ১২শ টুকরো করা হয়েছে। এখানকার বাসিন্দারা একটি করে টুকরোয় সবজি চাষ করছেন। জমিতে উৎপন্ন আলু, ভুট্টা এবং অন্যান্য কৃষিপণ্যর মালিক হচ্ছে এখানকার বাসিন্দারা। স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে সহজ কিছু চুক্তিতে শহরের বাসিন্দারা টুকরো জমিতে নিজের জন্য সবজি চাষ করতে পারেন।

একজন শহুরে বাসিন্দা যখন এক টুকরো জমি নেন তখন তিনি হয়তো সন্তানদের নিয়ে সপ্তাহে তার জমির ফসল দেখতে আসেন। তিনি টাটকা সবজি যেমন নিজের জন্য নিতে পারেন তেমনি পরিবার নিয়ে গ্রামে বেড়ানোর আনন্দটাও পান।

শহরের বাসিন্দাদের গ্রামে ফিরে আসা ও টুকরো জমিতে চাষ করা যেমন এক দিকে সচল রেখেছে গ্রামের অর্থনীতি অন্যদিকে প্রতিনিয়তই সমৃদ্ধ হচ্ছে  স্থানীয় পর্যটন শিল্প ।

 

অন্যান্য প্রসঙ্গ

বিশ্বজুড়েই দিনদিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ডুরিয়ান ফল। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলে এই ফলকে বলা হয় ফলের রাজা।চীনের জাতীয় ফল না হলেও চীনের বাজারে রাজত্ব করছে এই ফল। ফিলিপাইনে অধিক উৎপন্ন এই ফল আমদানীতে শীর্ষে রয়েছে চীন। এতে করে চীনারা যেমন পাচ্ছে সুস্বাদু এই ফলের স্বাদ, তেমনি ফিলিপাইনের ডুরিয়ান চাষিরাও হচ্ছেন লাভবান।

ফিলিপাইনের দাভাও। যেখানে বিস্তৃত এলাকাজুড়ে আবাদ করা হয় ডুরিয়ান ফলের। বিশাল আকার, তীব্র গন্ধ, এবং কাঁটাযুক্ত খোসা বিশিষ্ট এই ফল রপ্তানি করা হয় বিশ্বজুড়েই।

সম্প্রতি চীনেও বড় বাজার দখল করে নিয়েছে এই ডুরিয়ান ফল। দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ফলপ্রেমীদের কাছে। এই ফলপ্রেমীদের জন্য সুখবর দিয়েছে  ফিলিপাইনে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত হুয়াং শিলিয়ান। তিনি  জানিয়েছেন চীন ফিলিপাইন থেকে সতেজ ডুরিয়ান প্রবেশের অনুমোদন দিয়েছে। সম্প্রতিই চীনা দূতাবাসের একটি দল বাজারে প্রবেশের তদন্ত করেছেন। এবং এই ফলটি চীনে আমদানির জন্য দিয়েছেন ইতিবাচক বার্তা। 

এতে করে  ফিলিপাইন থেকে ডুরিয়ান রপ্তানির করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। দক্ষিণ ফিলিপাইনের দাভাও থেকে আসা ডুরিয়ান ফল খুব শীঘ্রই ছড়িয়ে যাবে চীনের বাজারে।

ফিলিপাইনের দাভাও অঞ্চলে প্রায় ৮০ শতাংশ ডুরিয়ান উত্পাদন করা হয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ফিলিপাইন আরও অনেক বেশি ডুরিয়ান চীনে রপ্তানি করার জন্য প্রস্তুত ।

এটিমূলত চায়না মিডিয়া গ্রুপ- সিএমজি বাংলার বাংলাদেশ ব্যুরোর কৃষি বিষয়ক সাপ্তাহিক রেডিও অনুষ্ঠান।  যা সঞ্চালনা করছেন ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট এইচ আর এস অভি।

এ রেডিও অনুষ্ঠানটি আপনারা শুনতে পাবেন বাংলাদেশের রেডিও স্টেশন রেডিও টুডেতে।

শুনতে থাকুন শেকড়ের গল্পের নিত্য নতুন পর্ব । যেখানে খুঁজে পাবেন সফলতা আর সম্ভাবনার নানা দিক। আর এভাবেই চীনা কৃষির সঙ্গে শুরু হোক আপনার দিন বদলের গল্প।