‘তারুণ্যের অগ্রযাত্রা’ পর্ব ৮
2023-03-08 19:23:32

 

                                    

‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ অনুষ্ঠানে স্বাগত জানাচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী।  দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেওয়ার প্রধান হাতিয়ার তারুণ্য। তরুণরা চাইলেই পারে সমাজকে বদলে দিতে। এজন্য দরকার তাদের চিন্তা ও মেধার সমন্বয়। চীন ও বাংলাদেশের তরুণদের অফুরান সম্ভাবনার কথা তুলে ধরবো এই অনুষ্ঠানে। তরুণদের সৃজনশীলতার গল্পগাঁথা নিয়েই সাজানো হয়েছে আমাদের তারুণের অগ্রযাত্রা।   

১.

কলেজ ও বিশ্ববদ্যিালয়ের পড়াশোনা শেষ করা শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে দেশের বিভিন্ন প্রদেশে প্রচারণা বা চাকরি মেলার আয়োজন করে চীন। রাজধানী বেইজিংসহ বেশ কয়েকটি প্রদেশে আয়োজন করা এসব চাকরি মেলায় ভিড় করে সদ্য কলেজ শেষ করা শিক্ষার্থীরা। 

দক্ষিণ চীনের কুয়াংতোং প্রদেশে এক ছাদের নিচে চাকরি প্রার্থী ও চাকরিদাতা। মানব সম্পদ বিভাগের কর্মীদের সঙ্গে সরাসরি আলাপ পরিচয় হয়ে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় শেষ করা সদ্য গ্র্যাজুয়েটদের।

 

এমন সুযোগ পেয়ে উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীরা তাই আগ্রহ ভরে জীবন বৃত্তান্ত নিয়ে হাজির। নিজেদের শিক্ষা জীবনের সমস্ত নথি ও ছিটেফোটা যার যতোটুকু অভিজ্ঞতা কিংবা পড়ালেখার বাইরের যোগ্যতা সব কিছু নিয়ে হাজির খোদ চাকরিদাতাদের সামনে।

চাকরি প্রার্থীদের জন্য এমন ক্যাম্পেইনের আয়োজন করা হয় পূর্ব চীনের চিয়াংসু প্রদেশেও। রাজধানী বেইজিংসহ শিক্ষার্থীদের জন্য এমন আনন্দ আয়োজনের ব্যবস্থা করে চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

 

মন্ত্রণালয় জানায়, সদ্য স্নাতক শেষ করা শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রার্থীদর জন্য দ্রুত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতেই এই বসন্তকালীন এ শিক্ষা মেলা। বিশেষ করে গেল ডিসেম্বরে করোনার কারণে চলমান ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর এই প্রথম এমন চাকরি বিষয়ক প্রচারণা বা মেলার আয়োজন করা হয়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, এই প্রচারণা নতুন নতুন চাকরির সুযোগগুলো ব্যবহার করতে নতুন গ্র্যাজুয়েটদের সহায়তা করবে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, এই প্রচারণার অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠানের সেক্রেটারি ও প্রিন্সিপাল থেকে শুরু করে বিভিন্ন ফ্যাকাল্টির প্রধান ও বিভাগীয় প্রধানগণ বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান সফর করবেন। তারা শিক্ষার্থীদের জন্য আরো বেশি চাকরির সুযোগ তৈরির ব্যাপারে প্রচেষ্টা চালাবেন। মন্ত্রণালয়ের আদেশে আরও বলা হয়, শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিভিন্ন খাতের প্রতিষ্ঠান ভ্রমণ করিয়ে আনা এবং পদ সৃষ্টির জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রমাগত চেষ্টা চালাবে।

কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেন সংশ্লিষ্ট মাধ্যমে বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ করে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন খাতে তৈরি হওয়া চাকরির সুযোগ সম্পর্কে অবহিত করে সে ব্যাপারেও নির্দেশনা দেওয়া হয়। এছাড়া চাকরি খোঁজার ওয়েবসাইটগুলোকে আরো সহজ করা ও সহজে তথ্য শেয়ার করার মতো করে তৈরি করার কথাও বলা হয় নির্দেশনায়।

প্রতিবেদকঃ সাজিদ রাজু

 

২. 

এদিকে, ছাত্রদের কর্মসংস্থানের প্রচারের জন্য সাংহাইয়ের বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে চাকরি মেলার আয়োজন করা হয়েছে। অন্যদিকে, ৫০ হাজারের বেশি চাকরির সুযোগ দিয়ে মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে কুয়াংসিতে।


প্রতিবছরই বসন্তকালে চীনে নিয়োগ মৌসুম চলে। এখন যেহেতু বসন্তকাল চলছে তাই স্নাতকদের কর্মসংস্থানের উদ্দেশে গেল সপ্তাহে শাংহাইয়ের ফুতান বিশ্ববিদ্যালয়ে এক অন-ক্যাম্পাস চাকরি-মেলা অনুষ্ঠিত হয়। মেলায় দেশের শীর্ষস্থানীয় ১১০টি সংস্থা অংশ নিয়ে তরুণদের চাকরির সুযোগ করে দেয়। 

মহামারীর কারণে দীর্ঘ বিরতির পর চাকরিপ্রার্থীদের মুখোমুখি সাক্ষাৎকার নিতে পারায় নিয়োগকর্তারা ব্যাপক উৎসাহ প্রকাশ করেন। ফুতান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই উদ্যোগটি খুব গুরুত্ব পায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা যায়, এই বছর চীনে রেকর্ড ১ কোটি ১০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করবেন বলে অনুমান করা হচ্ছে। আর শাংহাইতেই এই বছর স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করবে প্রায় আড়াই লাখ শিক্ষার্থী।  

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, অর্থনীতির পুনরুদ্ধারের কারণে এই বছরের প্রথম দুই মাসে কর্মসংস্থান প্রত্যাশার চেয়ে ভাল হয়েছে। পাশাপাশি আরও কাজের সুযোগ তৈরির জন্য এই জাতীয় চাকরি-মেলা আয়োজনসহ আরও সহায়ক নীতি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

এদিকে, সম্প্রতি দক্ষিণ চীনের কুয়াংসি চুয়াং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের রাজধানী শহর নানিংয়ে একটি বৃহৎ চাকরি-মেলা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে অর্ধলক্ষাধিক চাকরির সুযোগ করে দেওয়া হয়।

মেলায় অংশগ্রহণকারী পর্যটন ও ক্যাটারিং শিল্প-উদ্যোগের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, যেখানে উচ্চ-প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা স্থিতিশীল বৃদ্ধি বজায় রেখেছে।

চাকরিপ্রার্থীরা জানান,  সরাসরি অনুষ্ঠিত মেলা অনলাইন মেলার চেয়ে বেশি কার্যকর।  কারণ নিয়োগকারী সংস্থাগুলো কি চায় বা তাদের কি ধরনের চাহিদা তা ভালোভাবে বুঝা যায়।

 

‘এটি অনলাইন চাকরির ইন্টারভিউয়ের চেয়ে বেশি সুবিধাজনক কারণ আমরা সরাসরি কর্মসংস্থান মেলায় কোম্পানিগুলো সম্পর্কে আরও জানতে পারি।’  

 

২০২০ সাল থেকে কুয়াংসিতে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।  ৩০ হাজার বর্গমিটারেরও বেশি এলাকাজেুড়ে আয়োজিত এবারের মেলায় সহস্রাধিক বুথ স্থাপন করা হয়।  

 

প্রতিবেদকঃ রওজায়ে জাবিদা ঐশী

 

 

৩.

শীতকালীন খেলায় চীনের তরুণ প্রতিবন্ধী ক্রীড়াবিদদের অংশগ্রহন বাড়াতে অবদান রাখছে প্যারালিম্পিক গেমস। গত বছরের বেইজিং উইন্টার অলিম্পিক গেমস প্রতিবন্ধী ক্রীড়া উন্নয়নের সুযোগ করে দেওয়ায় এখন তরুণ প্রতিবন্ধী ক্রীড়াবিদদের মধ্যে শীতকালীন খেলায় অংশগ্রহন করার প্রবণতা বাড়ছে।

দীর্ঘ সময় ধরে শীতকালীন খেলার ভক্ত ১৩ বছর বয়সী চীনা তরুণী লিউ সিংউয়ে।  তবে জন্মগত চোখের সমস্যা থাকায়, কখনো কোনো খেলায় অংশ নিতে পারবে কি না এ নিয়ে সবসময় সংশয়ে ভুগতো ছোট্ট লিউ।

 

তবে গত বছরের বেইজিং প্যারালিম্পিক উইন্টার গেমসে যখন সিংউয়ে দেখে চীনা স্কিয়ার ছ্যং মেংক্যু দুটি স্বর্ণ জিতেছেন তখন সে নিজেও খেলায় অংশগ্রহন করতে অনুপ্রাণিত হয়।    

এরপর থেকে সিংউয়ে আলপাইন স্কি’র জন্য প্রতিদিন ৮টা থেকে ১১টা পর্যন্ত প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করে। অধ্যবসায় এবং প্রতিভার জোরে সে দ্রুত উন্নতি করতে শুরু করে। আলপাইন স্কির হেবেই প্রাদেশিক দলের সদস্য হিসেবে নিযোগ পেয়ে যায় সে। সিংউয়ে জানায়, স্কিইং পছন্দ করে বলে তার কখনো ক্লান্ত বোধ হয় না। 

‘স্কিইং অনুশীলন আমাকে ব্যথা এবং উচ্চতার ভয় কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করেছে। আর যেহেতু আমি স্কিইং পছন্দ করি তাই আমি কখনই ক্লান্ত বোধ করি না।‘ 

 

প্রশিক্ষণে গিয়ে লিউয়ের এমন আরো অনেক তরুণ প্রতিবন্ধী ক্রীড়াবিদদের সাথে দেখা হয়েছে। যেহেতু তাদের লক্ষ্য এক তাই ভালো বন্ধু হয়ে গিয়েছে তারা।

হেবেই ডিসেবলড পারসনস ফেডারেশনের ক্রীড়া ও বিনোদন বিভাগের পরিচালক রান মেইহুয়া বলেন, প্রতিবন্ধী ক্রীড়াবিদদের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার জন্য প্রস্তুত করতে রাত দিন কাজ করে যাচ্ছেন তারা।   

 

 

‘গতবছর সফলভাবে বেইজিং উইন্টার প্যারালিম্পিক গেমস অনুষ্ঠিত হবার পর থেকে অনেক তরুণ প্রতিবন্ধী কিশোর-কিশোরীরা ক্রীড়াবিদ হবার ইচ্ছা পোষণ করছেন। এখন প্রতিবছর বাছাইপর্বের জন্যেই ৩ হাজারের বেশি আবেদন জমা পড়ে। শুধুমাত্র গতবছরই ট্রায়াল ট্রেইনিংয়ের জন্য আমরা প্রায় ৩০০ তরুণ ক্রীড়াবিদ বাছাই করেছি এবং বিভিন্ন টিমে পাঠিয়ে দিয়েছি। তাদেরকে প্রধান প্রধান আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার জন্য প্রস্তুত করতে আমরা দিনরাত কাজ করে যাচ্ছি।’

 

তিনি আরো বলেন, শুধু দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনার কাজই না, পুনর্বাসন এবং ফিটনেস কার্যক্রমের মাধ্যমে সমাজে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অবদান বাড়াতেও কাজ করে যাচ্ছেন তারা।

 

প্রতিবেদকঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন

 

আমাদের ‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ আজ এই পর্যন্তই । পরবর্তী অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ জানিয়ে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। শুভকামনা সবার জন্য।

 

পরিকল্পনা ,পরিচালনা ও সঞ্চালনা : রওজায়ে জাবিদা ঐশী

অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল

সার্বিক সম্পাদনা: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী